Advertisement
১৯ মে ২০২৪

রেলের জন্য রান্নায় হাতেখড়ি

ট্রেন যাত্রীদের জিভের স্বাদ বদলাতে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছেন পুরুলিয়ার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যেরা। তাঁদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন কলকাতার নামকরা হোটেলের শেফরা।

পুরুলিয়ায় প্রশিক্ষণ।—নিজস্ব চিত্র

পুরুলিয়ায় প্রশিক্ষণ।—নিজস্ব চিত্র

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল
আদ্রা শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৬ ০২:১২
Share: Save:

ট্রেন যাত্রীদের জিভের স্বাদ বদলাতে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছেন পুরুলিয়ার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যেরা। তাঁদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন কলকাতার নামকরা হোটেলের শেফরা। পুরুলিয়া শহরে প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে। এখন কাশীপুরে প্রশিক্ষণ চলছে। পুরুলিয়া জেলার স্বনির্ভর ও স্বনিযুক্তি প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক অমল আচার্য জানাচ্ছেন, মোট ৬০ জন মহিলাকে রান্নার প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। কলকাতার থ্রি ও ফোর স্টারের তকমা পাওয়া বড় হোটেলগুলির রাঁধুনিরা প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের মোট ৫৭ রকম পদ রান্না করা শেখানো হচ্ছে।’’ তাঁর আশা, এতে ট্রেন যাত্রীদের যেমন উন্নতমানের খাবার দেওয়া যাবে, তেমনই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যেরাও বাড়তি রোজগার করতে পারবেন।

রেলবাজেটেই ট্রেনের যাত্রীদের রান্না করা খাবার দেওয়ার কাজে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে ব্যবহার করার প্রস্তাব দিয়েছেন রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু। তবে পুরুলিয়াতে এই কাজ শুরু হয়েছে তার কিছু আগে থেকেই। জাতীয় গ্রামীণ জীবন জীবিকা মিশন (এনআরএলএম) প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সরকারে নির্দেশ মতো এই কাজ শুরু হয়েছে। এই প্রশিক্ষণ দেওয়ার আয়োজন করেছে পুরুলিয়া জেলা পঞ্চায়েত গ্রামোন্নয়ন দফতর।

প্রশাসন সূত্রে খবর, এনআরএলএম-এর লক্ষ্যই হচ্ছে দেশের গ্রামীণ এলাকার বাসিন্দাদের জীবন-জীবিকার মানের উন্নতি ঘটানো। ওই মিশনের সঙ্গে আলোচনার পরে রেলবোর্ড সিদ্ধান্ত নেয় রেলের অধীনস্থ সংস্থা আইআরসিটিসি-র মাধ্যমে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির রান্না করা খাবার ট্রেন যাত্রীদের দেওয়া হবে। এ ছাড়া আইআরসিটিসি-র ক্যান্টিনেও স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের রান্না করা খাবারই দেওয়া হবে।

সুযোগ আসতে চলেছে বুঝে তাই নানারকম রান্নায় তাঁদের পারদর্শী করার চেষ্টা চলছে। কী কী রান্না চলছে? পুরুলিয়া শহরের রাঁচি রোডে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে শেখানো হয়েছে দুপুর বা রাতের খাবারের জন্য বিরিয়ানি, নান থেকে চিকেনের বিভিন্ন পদ। জলখাবারের জন্য স্যান্ডউইচ, মোমো, ইডলি, ধোসা থাকছে। বাদ পড়ছে না বাঙালির ডিস ভাপ ইলিশের মতো বিশেষ পদও। কলকাতার একটি থ্রি স্টার হোটেলের শেফ সন্তোষ থাপা প্রশিক্ষণের শেষ পর্যায়ের রান্না শেখাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির মহিলাদের রান্না শেখার যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে। ওই পদগুলি রান্নায় কী কী মশলা লাগে ও রান্নার পদ্ধতি বোঝালেই তাঁরা চট করে ধরে ফেলছেন।”

পুরুলিয়া ১ ব্লকের গাড়াফুসড়ো গ্রামের জানকী মাহাতো, নডিহার চায়না দাস মোদক, চিড়কার অঞ্জনা মাহাতোরা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তাঁরা জানান, বাড়িতে সাধারণত ডাল, ভাত, ভাজাভুজি, তরকারি, মাছের ঝোল-ঝাল আর মাঝে মধ্যে মুরগি বা খাসির মাংস রান্না করতেই অভ্যস্ত ছিলেন তাঁরা। ফলে চিরাচরিত রান্নার বাইরে অন্য স্বাদের রান্না কতটা শিখতে পারবেন তা নিয়ে তাঁদের অনেকেই সংশয়ে ছিলেন। কিন্তু এখন প্রশিক্ষণের শেষ করে তাঁদের সেই সব ভীতি অনেকটাই কেটে গিয়েছে। ওই মহিলাদের কথায়, ‘‘রান্না শিখতে গিয়ে দেখেছি খুব একটা কঠিন কাজ নয়। তাই এখন হাতা-খুন্তি ধরে অনেকটাই আমরা আত্মবিশ্বাসী।’’

কাশীপুরের বারনী চেতনা কেন্দ্রে আদ্রা ও কাশীপুরের ২৭ জন মহিলাকে নিয়ে এপ্রিল মাস থেকে দু’মাসের প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, ‘‘আদ্রায় রেল কর্তৃপক্ষ যে বেসকিচেন তৈরি করছে, সেখানে এই মহিলাদের অগ্রাধিকারের জন্য অনুরোধ জানাব।’’

রেলসূত্রে জানা যাচ্ছে, প্রকল্পটি ঠিক ভাবে রূপায়িত হলে স্বনির্ভরগোষ্ঠীগুলির আর্থিক মানের অনেকটাই উন্নয়নের সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও আইআরসিটিসি-র মাধ্যমে কী ভাবে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিরে রান্না ট্রেন যাত্রীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে সেই ব্যাপারে আদ্রা ডিভিশনে নির্দিষ্ট গাইড লাইন আসেনি। তবে যেহেতু রেলবাজেটে ওই বিষয়টি ঘোষিত হয়েছে, তাই গাইডলাইন দ্রুত ডিভিশনে আসবে বলে আশাবাদী রেলের কর্তারা। আদ্রার সিনিয়র ডিসিএম ভাস্কর বলেন, ‘‘রেলবাজেটে রেলমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, ট্রেনের যাত্রীদের রান্না করা খাবার দেওয়ার কাজে স্বনির্ভরগোষ্ঠীগুলিকে কাজে লাগানো হবে। তাই কী ভাবে ওই কাজ হবে তার রূপরেখা দ্রুত আমরা হাতে পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী।”

এরই মধ্যে আদ্রায় রাজধানীর মতো হাই প্রোফাইল ট্রেনের যাত্রীদের খাবার দিতে বেস কিচেন তৈরি করছে রেল। জমি চিহ্নিতকরণ বিস্তারিত পরিকল্পনা রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের সদর দফতরে। সিনিয়র ডিসিএম জানান, বেস কিচেন যে সংস্থাই পরিচালনা করুক না কেন তারা স্থানীয়দের রান্নার কাজে অগ্রাধিকার দেবেন। সে ক্ষেত্রে আগে থেকেই রাজধানীর মতো হাই প্রোফাইল ট্রেনের যাত্রীদের জন্য রান্নার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে নেওয়ায় অগ্রাধিকার দেওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে রেলকর্তাদের বক্তব্যে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Purulia Railway food
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE