Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
চারপাশে জঙ্গল, সাপখোপের ভয় হয়, বলছেন বহরমপুরের অসীম বৈদ্য

ভাল হওয়ার আশায় পোড়োবাড়িতেই

পলেস্তরা খসে পড়া, ইটের হাড়পাজরা বেরিয়ে আসা বাড়িটার চৌহদ্দিতে কোনও জনমনিষ্যির বাস আছে বলে মনে হয় না বাইরে থেকে। জানলা-দরজা ভাঙা। আগাছায় ছেয়ে আশপাশ। কিন্তু এই পোড়ো আধা ভৌতিক বাড়িখানাই এলাকার একমাত্র যক্ষ্মা হাসপাতাল।

ঠাঁই: হাসপাতালের বারান্দাতেই রোগী। —নিজস্ব চিত্র।

ঠাঁই: হাসপাতালের বারান্দাতেই রোগী। —নিজস্ব চিত্র।

সামসুদ্দিন বিশ্বাস
ধুবুলিয়া শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৭ ০০:৫২
Share: Save:

পলেস্তরা খসে পড়া, ইটের হাড়পাজরা বেরিয়ে আসা বাড়িটার চৌহদ্দিতে কোনও জনমনিষ্যির বাস আছে বলে মনে হয় না বাইরে থেকে। জানলা-দরজা ভাঙা। আগাছায় ছেয়ে আশপাশ। কিন্তু এই পোড়ো আধা ভৌতিক বাড়িখানাই এলাকার একমাত্র যক্ষ্মা হাসপাতাল।

বিশ্ব যক্ষ্মা দিবসে সেখানে গিয়ে দেখা গেল রোগগ্রস্ত বাড়িখানায় এখন হাতেগোণা রোগী। বরং সারমেয়দেরই রাজ্যপাট সেখানে। স্থানীয় বাসিন্দারা কিন্তু বেশ মনে করতে পারছেন, এক সময় এখানেই লেগে থাকত রোগীর ভিড়। শুধু এ জেলাই নয়, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন চিকিৎসা করাতে আসতেন ধুবুলিয়ার যক্ষ্মা হাসপাতালে।

হাসপাতালের সুপার বিনয়রঞ্জন প্রধান বলেন, “কী করব বলুন? হাসপাতাল বিল্ডিং সংস্কারের জন্য পুর্ত দফতরকে আনুমানিক হিসেব করতে দেওয়া হয়েছে। সেটা হয়ে গেলেই অর্থ বরাদ্দের জন্য স্বাস্থ্যভবনে পাঠানো হবে।” কিন্তু এ তো গেল সংস্কার, আগাছা সাফ করতে অসুবিধা কোথায়? সুপারের বক্তব্য, ‘‘যে অংশটুকুতে রোগীরা ভর্তি রয়েছেন, সেখানে কিন্তু তিন মাস অন্তর জঙ্গল সাফ হয়।’’

রোগীর দেখা মিলল সামান্যই। কৃষ্ণনগরের বেলেডাঙার বাসিন্দা ফরিদা বেওয়া গত পাঁচ মাস ধরে এই হাসপাতালে ভর্তি আছেন। বললেন, “আমার ছেলেমেয়ে নেই। বোনের ছেলে আমাকে এখানে ভর্তি করে দিয়েছে। বড় ভয় লাগে থাকতে।” ফরিদার কথায়, ‘‘চারদিকে জঙ্গলে ছেয়ে। ওয়ার্ডের দরজা-জানালার অবস্থাও ভাল নয়। যে কোনও সময় সাপখোপ ঢূকতে পারে। ভয়ে ভয়ে দিন কাটাই।’’

মুর্শিদাবাদের বহরমপুরের অসীম বৈদ্য ৫ মাস রয়েছেন ধুবুলিয়ার এই হাসপাতালে। জানালেন, বাথরুমগুলোর অবস্থা খুব খারাপ। কোনও বাথরুমেই দরজা নেই। ওই ভাবেই শৌচকর্ম সারতে হয়। শুধু তিনি নন, রোগীদের সকলেরই সাপখোপের ভয়। সামনে বর্ষা আসছে। তখন আবার ছাদ চুইয়ে জল পড়বে। এ সব সত্ত্বেও রোগ সারানোর আশায় জরাগ্রস্ত বাড়িটায় পড়ে রয়েছেন তাঁরা।

২০১২ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই হাসপাতালেই পিপিপি মডেলে মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল গড়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এখনও কিন্তু সে সবের কিছুই হয়নি। বিশ বাঁও জলে মানুষের আশা-ভরসা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tuberculosis Hospital Deserted House
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE