অলঙ্করণ: তিয়াসা দাস।
তদন্তের নামে ফের তাদের আধিকারিকদের হেনস্থা করছে রাজ্য পুলিশ। এমনই অভিযোগ তুলল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই। তবেএবার আর সারদা বা রোজ ভ্যালি নয়, অন্য একটি মামলাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে টানাপড়েন।
সিবিআই হেফাজত থেকে ‘উধাও’ হয়ে যাওয়া আসামী খোঁজার নামে তাদের আধিকারিকদেরই পাল্টা দোষী প্রমাণ করার চেষ্টা করছে রাজ্য পুলিশ।এমন মর্মে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এবং প্রধানমন্ত্রীর দফতরে রিপোর্ট পাঠাচ্ছে ওই গোয়েন্দা সংস্থা। তেমনটাই সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে। পাল্টা রাজ্য পুলিশের দাবি, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার ‘সাজানো’ খেলা রাজ্য পুলিশ ধরে ফেলাতেই এত সমস্যা।
ঘটনার সূত্রপাত গত ১৬ অগস্ট। সিবিআইয়ের দুর্নীতিদমন শাখা দু’লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে‘ফুড কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া’ (এফসিআই)-র এরিয়া জেনারেল ম্যানেজার এ সিকন্দরকে গ্রেফতার করে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার দাবি, রাঁচীতে এফসিআই এক ব্যক্তির কাছ থেকে গুদাম ভাড়া নিয়েছিল। সেই গুদামের ভাড়া বা লিজের মেয়াদ বেআইনি ভাবে বাড়ানোর জন্য ওই গুদাম মালিকের কর্মী রঞ্জয় চিটলাঙ্গিয়ার কাছ থেকে ঘুষ নিচ্ছিলেন সিকন্দর। ঘটনাস্থল থেকে হাতেনাতে সিকন্দর এবং চিটলাঙ্গিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। গুদামের মালিক দীপেশ চণ্ডকের বিরুদ্ধেও এফআইআর দায়ের করে সিবিআই।
আরও পড়ুন: সিবিআইয়ের কাছে হাজিরা দেবেন না, জবাব দিতে রাজি রাজীবেরা!
ঘটনার পরের দিনঅর্থাৎ ১৭ অগস্ট দীপেশের খোঁজে তাঁর কলকাতার বালিগঞ্জ আর্ল স্ট্রিটের বাড়িতে হানা দেয় সিবিআই। কিন্তু, সেখানে তিনি ছিলেন না। দীপেশের খোঁজে হাওড়ার ডোমজুড়েতাঁর জঙ্গলপুরের কারখানাতেও তল্লাশি চালান সিবিআই তদন্তকারীরা। সেখানেই দীপেশের হদিশ মেলে। সেখান থেকে তাঁকে গ্রেফতার করেওই দিনই কলকাতায় সিবিআই দফতরের উদ্দেশে রওনা হন গোয়েন্দারা।
সিবিআই সূত্রে খবর, গ্রেফতারের মুহূর্ত থেকেই দীপেশ অসুস্থ বোধ করতে থাকেন। তিনি নিজের বাতানুকুল গাড়িতে যাবেন বলেওইচ্ছা প্রকাশ করেন। দিল্লি থেকে এই তদন্তের কাজে আসা সাব-ইনস্পেক্টর সুনীল মীনা এবং কলকাতা সিবিআই অফিসের কনস্টেবল সুসিত মজুমদারএর পর দীপেশকে নিয়েতাঁরইগাড়িতে ওঠেন। ওই গাড়িতে দীপেশের আরও দুই কর্মচারী ছিলেন। সিবিআইয়ের গাড়িতে কলকাতায় ফেরেন বাকি তদন্তকারীরা।
সিবিআই আধিকারিকদের দাবি, রাস্তায় হাওড়ার গ্র্যান্ড ফোরশোর রোডের কাছে ফের বমি করা শুরু করেন দীপেশ। নিজের দুই কর্মীকে সামনের ফার্মাসি থেকে একটি ওষুধ আনতে বলেন তিনি। ওই দুই কর্মচারীর সঙ্গে যান সাব-ইনস্পেক্টর সুনীল মীনা। গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ান কনস্টেবল সুসিত। গাড়িতে এসি চলছিল বলে তার ইঞ্জিন চালু ছিল। হঠাৎই দীপেশকে নিয়ে বিদ্যুৎ গতিতে সেই গাড়ি পালিয়ে যায়। সুনীল মীনার নথিপত্র-সহ ব্যাগও ওই গাড়িতেই ছিল।
আরও পড়ুন: সারদায় তলব আইপিএস অর্ণবকেও
গোয়েন্দাদের দাবি,এরপরেই তাঁরা বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালান। দীপেশের হদিশ না পেয়ে পরের দিন বিকেলে ডোমজুড় থানায় তাঁর নামে নিখোঁজ অভিযোগ দায়ের করে সিবিআই। যদিও এ সবের মধ্যেই মীনার ব্যাগ সিবিআই দফতরে এসে ফেরত দিয়ে যান দীপেশের এক কর্মচারী।
এর পর থেকেই সমস্যা শুরু হয় বলে সিবিআই আধিকারিকদের দাবি। দিল্লি থেকে জেরার জন্য ডোমজুড় থানায় ডেকে পাঠানো হয়সুনীল মীনাকে। কলকাতার আর এক ইনস্পেক্টর অমিতাভ দাস সেদিন তল্লাশিতে গিয়েছিলেন।অমিতাভ-সহবাকিদেরও দিনভর থানাতে জেরা করা হয় বলে সিবিআইয়ের দাবি। কলকাতার এক শীর্ষ সিবিআই আধিকারিক বলেন,“অভিযোগ দায়ের করে মনে হচ্ছে আমরা অপরাধ করে ফেলেছি। আমাদের বার বার ডেকে হেনস্থা করছে পুলিশ।” রাঁচীর এক সিবিআই আধিকারিক এ কে ঝাঁ-কেও জেরা করে পুলিশ। কারণ, পুলিশের দাবিদীপেশ গ্রেফতার হওয়ার দিন তাঁর মোবাইল থেকে ঝাঁ-কে ফোন করেছিলেন তিনি।
অন্যদিকে, হাওড়া জেলা পুলিশ সিবিআই আধিকারিকদের হেনস্থার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। উল্টে তাদের দাবি, দীপেশ সিবিআইয়ের ঘরের ছেলে। রাজ্য পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, “পশুখাদ্য মামলায় দীপেশ তো রাজসাক্ষী। এতদিন সিবিআই নিজেরাই তো ওকে আগলে রেখেছিল। ক’দিন আগে পশুখাদ্য মামলার বিচারক যখন সিবিআইকে প্রশ্ন করেন, একই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থেকে দীপেশ কেন বিচার থেকে পার পাবে, তখনই বিপাকে পড়ে সিবিআই।”
রাজ্য পুলিশের তদন্তকারীদের দাবি, সিবিআই আধিকারিকদের কথায় যথেষ্ট অসঙ্গতি রয়েছে। তাঁদের প্রশ্ন, কেন এক জন অফিসার নিজের হেফাজতে থাকা আসামীকে রেখে ওষুধ কিনতে যাবেন? রাজ্য পুলিশের ইঙ্গিত, তাঁদের তদন্তে গোটা ঘটনার সত্যতা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy