Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Nandigram

বিচারাধীন ‘লোডশেডিং’ বিধানসভায় কেন? মমতার ‘নন্দীগ্রাম’ মন্তব্য নিয়ে প্রশ্ন তুললেন শুভেন্দু

দু’বছরেরও বেশি সময় আগের নন্দীগ্রাম বিতর্ক নিয়ে বৃহস্পতিবার উত্তপ্ত হল রাজ্য বিধানসভা। আলো নিভিয়ে তাঁকে হারানো হয়েছিল বলে অভিযোগ উত্থাপন করেন মুখ্যমন্ত্রী। আর তাতেই আপত্তি বিজেপির।

Tussle between CM Mamata Banerjee and BJP leader Suvendu Adhilari on Nandigram vote counting issue

(বাঁ দিকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।। শুভেন্দু অধিকারী (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৩ ১৮:০৯
Share: Save:

আবারও নন্দীগ্রামের বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে উত্তপ্ত রাজ্য রাজনীতি। ২০২১ সালের ২ মে-র বিতর্ক রাজ্য বিধানসভায় উঠে এল ২০২৩ সালের ২৭ জুলাই। বিধানসভার বাদল অধিবেশনে পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে আলোচনার মধ্যেই সেই প্রসঙ্গ তুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘নন্দীগ্রামে দু’ঘণ্টা লাইট বন্ধ করে দিয়ে কী হয়েছিল ভুলে গেলেন?’’ এর পরে বিধানসভা থেকে সতীর্থদের নিয়ে ওয়াকআউট করলেও পরে সাংবাদিক বৈঠক করে তার জবাব দেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, “নন্দীগ্রামে জেতার পরে আমি বিধানসভায় নন্দীগ্রামবাসীকে ধন্যবাদ জানাতে চেয়েছিলাম। বিচারাধীন বিষয় বলে আমায় বলতে দেওয়া হয়নি। অথচ মুখ্যমন্ত্রী আজ বিধানসভায় এই বিষয়েই কথা বললেন।” এর পরেই বিধানসভার কার্যবিবরণী থেকে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য মুছে ফেলার দাবি জানান।

প্রসঙ্গত, গত বিধানসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রামে ১৯৫৬ ভোটে শুভেন্দুর কাছে মমতা পরাজিত হয়েছিলেন। ফল ঘোষণার পরেই মমতা বলেছিলেন, ‘‘নন্দীগ্রামের মানুষের রায় মেনে নিচ্ছি। কিন্তু ওখানে ভোট লুট হয়েছে। আদালতে যাব আমরা।’’ পরে মমতা ভবানীপুর থেকে উপনির্বাচনে জিতে এলেও এখনও নন্দীগ্রামের হার নিয়ে খোঁচা দেয় বিজেপি। মমতাকে ‘কম্পার্টমেন্টাল মুখ্যমন্ত্রী’ বলেও ‘খোঁটা’ দেন শুভেন্দু। বৃহস্পতিবারও সে কথা বলেছেন তিনি। শুভেন্দু বলেন, “নন্দীগ্রামে জিতেছি বলেই আপনি কম্পার্টমেন্টাল মুখ্যমন্ত্রী। অব্যক্ত যন্ত্রণা থেকে অভিযোগ করছেন মুখ্যমন্ত্রী।”

নন্দীগ্রামে শুভেন্দুর জয়ের পিছনে গণনায় কারচুপির অভিযোগে ভোটগণনার পর থেকেই সরব তৃণমূল। সেই সময়ে গণনা কেন্দ্রের লাইট নিভিয়ে দেওয়া হয়েছিল, দু’ঘণ্টা সময়ে অনেক কারচুপি হয়েছে বলেও অভিযোগ তৃণমূলের। এ নিয়ে আদালতেও যায় তৃণমূল। পুনর্গণনার আর্জি জানিয়ে কলকাতা হাই কোর্টে ইলেকশন পিটিশন দাখিল করেছিলেন তৃণমূল প্রার্থী মমতা। তাঁর অভিযোগ ছিল মূলত শুভেন্দুর বিরুদ্ধে। প্রথমে ওই মামলাটি বিচারপতি কৌশিক চন্দের বেঞ্চে যায়। বিচারপতি চন্দের সঙ্গে বিজেপির পূর্ব যোগ রয়েছে, এই অভিযোগ তুলে ‘নিরপেক্ষ’ বিচারের জন্য ওই বেঞ্চ থেকে মামলা সরানোর আর্জি জানান মমতা। তাঁর সেই আর্জি মেনে মামলা থেকে অব্যাহতি নেন বিচারপতি চন্দ। মামলাটি ওঠে বিচারপতি শম্পা সরকারের বেঞ্চে।

যদিও কলকাতা হাই কোর্ট থেকে নন্দীগ্রামের ভোটগণনা মামলা অন্যত্র সরানোর আবেদন জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানান শুভেন্দু। কলকাতা হাই কোর্টে ওই মামলার নিরপেক্ষ বিচার পাওয়া যাবে না, এই আশঙ্কায় দেশের অন্য যে কোনও হাই কোর্টে মামলা সরানোর দাবিও জানান তিনি। কিন্তু বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় এবং বিচারপতি হিমা কোহলির বেঞ্চ শুভেন্দুর সেই আবেদন খারিজ করে জানায়, ওই মামলা অন্য আদালতে স্থানান্তরিত করা হলে হাই কোর্টের প্রতি মানুষের আস্থা কমবে। এখনও সেই মামলা বিচারাধীন। আদালতের নির্দেশে নন্দীগ্রাম বিধানসভার সমস্ত ইভিএম ও ভিভিপ্যাট সংরক্ষিত রাখা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মমতা কেন বিধানসভায় ওই মন্তব্য করলেন, তা নিয়েই আপত্তি শুভেন্দুর।

বিধানসভায় প্রথম বার বললেও নন্দীগ্রামে ‘লোডশেডিং’ হয়েছিল বলে আগেও অভিযোগ করেছেন মমতা। গত এপ্রিল মাসেই নন্দীগ্রামের জেলা পূর্ব মেদিনীপুরের দিঘায় মমতা বলেন, ‘‘নন্দীগ্রামে ভোট লুট হয়েছে। বিজেপি যে কটি আসন পেয়েছে, জানবেন সব ক’টি আসনে লুট হয়েছে। ভোটের গণনার দিন কেন লোডশেডিং হয়েছিল, তার হিসাব আমরা চাই।” এর পরেই তিনি বলেন, “ছেড়ে কথা বলব না। অনেক সহ্য করেছি।”

বৃহস্পতিবার বিধানসভায় মমতার আগেই বলেন শুভেন্দু। সেখানে তিনি পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোট লুটের অভিযোগ তোলেন। সেই সঙ্গে বলেন, “২০১৮ সালের পঞ্চায়েতেও তৃণমূল অপকর্ম করেছিল। তারই জবাব মানুষ দিয়েছিল উনিশের লোকসভা ভোটে। ২০২৩ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনের অপকর্মের খেসারতও আগামী বছরের লোকসভায় দিতে হবে।” শুভেন্দু আরও বলেন, ‘‘এ বার ভোটে যা যা করেছেন আগামী বছর সুদে আসলে হিসাব দিতে হবে।’’

এর পরেই মমতা বলতে উঠে সরাসরি প্রশ্ন তোলেন, ‘‘নন্দীগ্রামে দু’ঘণ্টা লাইট বন্ধ করে দিয়ে কী হয়েছিল ভুলে গেলেন?’’ এর পরে বিজেপি বিধায়কেরা মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য বিধানসভার কার্যবিবরণী থেকে বাদ দেওয়ার দাবি তোলেন। স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় সেই দাবিকে গুরুত্ব না দেওয়ায় শুভেন্দুর নেতৃত্বে ওয়াকআউট করে বিজেপি। বিধায়কেরা পকেট থেকে কালো কাপড় বার করে ‘শেম শেম মুখ্যমন্ত্রী’ স্লোগান দিয়ে অধিবেশন কক্ষ ছেড়ে বেরিয়ে যান।

পরে শুভেন্দু আরও নানা বিষয়ে আক্রমণ করেন মমতাকে। তবে সবেরই সূত্র ছিল নন্দীগ্রাম। শুভেন্দু বলেন, ‘‘নন্দীগ্রামে আমি জিতেছি বলেই জ্যান্ত একটা লোক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে কলার ধরে পদত্যাগ করিয়ে ভবানীপুরে ছাপ্পা মেরে জিততে হয়েছে আপনাকে। একটাই ভবনে নন্দীগ্রাম, হলদিয়া এবং মহিষাদলের গণনা হয়েছে। মহিষাদলে তৃণমূল জিতেছে। আপনি নন্দীগ্রাম নিয়ে মামলা করলেন। আপনার বিচারপতি পছন্দ হল না। সম্মাননীয় বিচারপতি কৌশিক চন্দকে বদলালেন। মামলা করার পরে দু’বছরেরও বেশি সময় চলে গেল। আপনার মামলায় যে রিট, সবই কানে শোনা। চোখে দেখা কিছু নেই। সেই রিটের কপি আমার কাছে আছে।’’

বিধানসভার কার্যবিবরণী থেকে মুখ্যমন্ত্রীর নন্দীগ্রাম নিয়ে মন্তব্য মোছার দাবি জানিয়ে স্পিকারকেও আক্রমণ করেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, ‘‘২০২১ সালে আমি যখন রাজ্যপালের বক্তব্যের উপর বক্তব্য রাখতে শুরু করেছিলাম, তখন কোনও নিষেধাজ্ঞা না থাকা সত্ত্বেও বিচারাধীন বিষয় বলে নন্দীগ্রামবাসীকে ধন্যবাদ জানাতে দেননি। সভার কার্যবিবরণী থেকে বাদ দিয়েছিলেন। আর আজকে আমি যখন মুখ্যমন্ত্রীর নন্দীগ্রাম বিষয়ক বক্তব্য সভার কার্যবিবরণী থেকে বাদ দিতে বললাম, তিন মিনিট লড়লাম, আপনি শোনেননি। এক যাত্রায় পৃথক ফল হতে পারে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE