বাম জমানায় যুব কংগ্রেসের রাজ্য সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে মহাকরণ অভিযানে পুলিশের গুলি চলেছিল। সেই ঘটনায় নিহত ১৩ জনের স্মরণে ‘শহিদ সমাবেশ’ অনেক কাল আগেই নিজের কর্তৃ্ত্বে নিয়ে ফেলেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা। এ বার নদিয়ার কালীগঞ্জে উপনির্বাচনের ফল ঘোষণার দিন বোমার আঘাতে তামান্না খাতুনের হত্যার ‘বিচার’ চেয়ে যুব সংগঠনের ‘শহিদ স্মরণ’ কর্মসূচি ঘিরেও কোন্দল মাথাচাড়া দিল কংগ্রেসে। নদিয়ার পলাশিতে আজ, সোমবার বিকালে ওই সভায় প্রধান বক্তা কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য অধীর চৌধুরী।
কালীগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের সাম্প্রতিক উপনির্বাচনের কংগ্রেস প্রার্থী কাবিলউদ্দিন শেখ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার এবং এআইসিসি-র পর্যবেক্ষক গুলাম আহমেদ মীরকে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, পলাশির ওই সভার বিষয়ে যুব কংগ্রেসের নদিয়া জেলা ও ব্লক সভাপতিদের কিছু জানানো হয়নি। মুর্শিদাবাদ জেলা যুব কংগ্রেসের নামে কী ভাবে নদিয়া জেলায় কর্মসূচি হচ্ছে, সেই প্রশ্ন তুলছেন তিনি। কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে, বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী-সহ এআইসিসি নেতৃত্বকে চিঠির প্রতিলিপি পাঠিয়ে নদিয়া জেলা কংগ্রেসের সংগঠনে রদবদলের দাবিও তুলেছেন কাবিল। সেই চিঠি সমাজমাধ্যমে দিয়ে দেওয়ায় বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষ করছে তৃণমূল কংগ্রেসও। যদিও প্রদেশ যুব কংগ্রেসের নেতৃত্বস্থানীয় কমিটির অন্যতম সদস্য শাহিনা জাভেদ জানাচ্ছেন, তাঁদের আহ্বানেই সভা হচ্ছে। মুর্শিদাবাজ জেলা যুব কংগ্রেস ওই সভার প্রচার করেছে শুধু।
এই প্রসঙ্গে অধীরের বক্তব্য, ‘‘যুব কংগ্রেসের ডাকে একটা সভা হচ্ছে, সেখানে আমাকে আমন্ত্রণ করা হয়েছে। এই নিয়ে অহেতুক বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে। পুলিশ-প্রশাসন অনুমতি দিতে চায়নি। আদালত থেকে সভার অনুমতি আনতে হয়েছে।’’ সভার জন্য আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন কালীগঞ্জ ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি আবুল কাশেম, যাঁর সঙ্গে জেলার রাজনীতিতে এ বারের উপনির্বাচনের প্রার্থী কাবিলের সমীকরণ আদায়-কাঁচকলায়! আবার শাহিনারা যখন পলাশিতে সভা করছেন, সে দিনই কলকাতায় বিধান ভবনে পৃথক ভাবে ‘শহিদ স্মরণে’র ডাক দিয়েছেন যুব কংগ্রেসের ওই কমিটিরই অর্ঘ্য গণেরা!
বিড়লা তারামণ্ডলের কাছে ২১শে জুলাইয়ের ‘শহিদ বেদি’তে রবিবারই শ্রদ্ধা জানিয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভও দেখিয়েছে দক্ষিণ কলকাতা জেলা কংগ্রেস। রাতে হাজরা মোড়ে ‘শহিদ স্মরণ’ করেছেন আশুতোষ চট্টোপাধ্যায়েরা। বর্তমানে মমতার সরকারের আমলে ‘ভোট-সন্ত্রাসে’র অভিযোগকে কেন্দ্র করে তৃণমূলকে নিশানা করেছে কংগ্রেস। দক্ষিণ কলকাতা জেলা কংগ্রেসের সভাপতি প্রদীপ প্রসাদের অভিযোগ, “শহিদ পরিবারগুলি টাকা, চাকরি পেলেও বিচার পায়নি। বরং অভিযুক্তদের পুরস্কৃত করেছে তৃণমূলের সরকার।” প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্করও বলেছেন, “২১ জুলাই শোকের দিন, মোচ্ছবের নয়। ২১ জুলাইয়ের আন্দোলনকারীদের হাতে কংগ্রেসের পতাকা ছিল, মনে ছিল কংগ্রেসের আদর্শ। তৃণমূলের তখন জন্মও হয়নি।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)