জলপাই রঙের ডাকাবুকো গাড়িটার বনেটে বার দুয়েক চাপড় মেরে বন দফতরের বর্ষীয়ান কর্তাটি বলেছিলেন, ‘‘মনে রাখবেন দলমার দামালরাও এ গাড়িকে বেজায় ডরায়!’’ অথচ সেই নিশ্ছিদ্র ‘ঐরাবতের’ খোলের মধ্যেই নিশ্চুপে মারা গেলেন দুই বনকর্মী।
নিরাপত্তায় ফাঁক ছিল কোথাও? সহজ উত্তর, না।
বন দফতরের এক শীর্ষ কর্তা ধরিয়ে দিচ্ছেন কারণটা— ‘‘উত্তরবঙ্গের বনকর্মীদের মধ্যে কিঞ্চিৎ সতর্কতা থাকলেও সুন্দরবন কিংবা দক্ষিণবঙ্গের সাধারণ বনরক্ষীদের সকলেই নিরাপত্তা নিয়ে বড্ড ‘ক্যাজুয়াল’, সব কিছুতে গা-ছাড়া ভাব তাঁদের।’’ উত্তরবঙ্গে কর্মজীবন শুরু করলেও সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের অধিকর্তা থেকে মেদিনীপুর ও বাঁকুড়ার শাল-পিয়ালের জঙ্গলেও দীর্ঘ কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি জানালেন, রাঢ়-জঙ্গলের বনকর্মীদের অধিকাংশই, জঙ্গলের নিয়ম মানেন না। তাঁর কথায়, ‘‘হাতি তাড়ানোর যে গাড়ি নিয়ে ওঁরা দিন রাত দাপিয়ে বেড়ান, সেই ‘ঐরাবতের’ রকম সকম নিয়েও ওঁদের কোনও মাথা ব্যথা ছিল না।’’ আলো জ্বালিয়ে রাখার তাগিদে রাতভর জেনারেটর চললেও সে গাড়ির কাচ-দরজা সব রইল বন্ধ। স্থানীয় এক বনকর্তারা বলছেন, ‘‘বদ্ধ গাড়ি দূষিত গ্যাসে ভরে গেলে তা বের করার জন্য যে একটা জানলা খোলা রাখা দরকার, সে কথা ভাবেননি ওই দুই বনকর্মী। ফলে শ্বাসরোধ হয়ে ঘুমের মধ্যেই মারা গিয়েছেন।’’
ঐরাবত
• হাতি তাড়াতে হুলাপার্টির সঙ্গে থাকা বিশেষ গাড়ি
• পিছনে বড় দরজা, দু’দিকে দু’টি করে চারটি জানলা
• ভেতরে বন্দুক, ঘুমপাড়ানি ওষুধ, সিরিঞ্জ, জোরাল টর্চ, লোহার শিকল, জাল, কাঁচা মোবিল, শুকনো পাট, বল্লম
• দু’দিকের আসনে জনা দশেক কর্মী বসতে পারেন
• মাথায় হুটার, সামনে-পিছনে ফগ লাইট
• আলো জ্বালাতে প্রয়োজনে গাড়িতে চলে জেনারেটর
বন দফতরের উপদেষ্টা মণ্ডলীর এক সদস্য বলছেন, ‘‘আসলে, দক্ষিণবঙ্গের জঙ্গলে কর্মীদের বাঘের অভিজ্ঞতা নেই। ফলে অচেনা-অজানা সেই শার্দুলের ভয়ে, জানলার কাচটুকুও ফাঁক করে রাখার সাহস দেখাননি ওঁরা। ফল যা হওয়ার তাই হয়েছে।’’
আরও পড়ুন: বাঘ-ভয়ে বন্ধ গাড়ি, মৃত ২