E-Paper

সন্তানের জন্ম দিয়েই মাধ্যমিকে ২ নাবালিকা

কোচবিহারের একটি গ্রামে বাড়ি নাবালিকার। টানাটানির সংসারে বছর দেড়েক আগে বিয়ে হয় তার। কিন্তু পড়াশোনা ছাড়তে পারেনি। স্বামীও আপত্তি করেননি। পরিযায়ী শ্রমিক স্বামী কাজের খোঁজে ভিন্ রাজ্যে।

নমিতেশ ঘোষ , সুমন মণ্ডল 

শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৬:০৩
Madhyamik Examination

—প্রতীকী ছবি।

সদ্যোজাত সন্তানকে এক পলক দেখা। তার পরে ফের পরীক্ষার উত্তরপত্রে মন দিল কিশোরী। হাসপাতালের বিছানায় শুয়েই মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে দিতে বছর সতেরোর ওই নাবালিকার মন্তব্য, ‘‘সন্তানের মতোই পড়াশোনার উপরেও ভালবাসা রয়েছে। সন্তানকে পাশে নিয়েই দু’টি পরীক্ষা দিয়েছি। বাকিগুলিও দিতে চাই।’’

কোচবিহারের একটি গ্রামে বাড়ি নাবালিকার। টানাটানির সংসারে বছর দেড়েক আগে বিয়ে হয় তার। কিন্তু পড়াশোনা ছাড়তে পারেনি। স্বামীও আপত্তি করেননি। পরিযায়ী শ্রমিক স্বামী কাজের খোঁজে ভিন্ রাজ্যে। তার মধ্যেই পড়াশোনা চালিয়ে পরীক্ষায় বসা। মেয়েটি জানায়, শুক্রবার, মাধ্যমিকের প্রথম দিন সকালে প্রসব-বেদনা ওঠে। কোচবিহারের একটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানেই সন্তানের জন্ম দেয় সে। সেই ধকল শরীরে নিয়ে কিছু ক্ষণের মধ্যে খাতা-কলম নিয়ে পরীক্ষা দিতে বসা। রবিবার হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হয় মা ও সন্তানকে। বাকি পরীক্ষা স্কুলে বসে দিতে চায় মেয়েটি।

মুর্শিদাবাদের একটি গ্রামেও রাতে সন্তানের জন্ম দিয়ে সকালে হাসপাতালে বসে ইংরেজি পরীক্ষা দিয়েছে এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। এই মেয়েটির বিয়ে হয় বছরখানেক আগে। শুক্রবার বাংলা পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফেরার পর থেকেই প্রসব যন্ত্রণা শুরু। রাতে স্থানীয় হাসপাতালে সন্তানের জন্ম দেয় সে। সেই অর্থে, পরীক্ষা দিতেই হবে, এমন দৃঢ় মনোভাব মিলিয়ে দিয়েছে কোচবিহার আর মুর্শিদাবাদের দুই নাবালিকা মাকে।

কোচবিহারের ওই কিশোরীর বাবা কৃষিজীবী। তিন ভাইবোনের মধ্যে সে মধ্যম। প্রশ্ন উঠেছে, সরকার যখন নাবালিকা বিয়ে বন্ধে বিভিন্ন ভাবে উদ্যোগী, তখন এমন ঘটনা ঘটছে কী ভাবে? তা কি চোখ এড়িয়েছে নাবালিকা-বিয়ে আটকাতে উদ্যোগী কন্যাশ্রী ক্লাবের?

কোচবিহার জেলা পুলিশ সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘নাবালিকা বিয়ের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’’ কোচবিহার চাইল্ড প্রোটেকশন অফিসার স্নেহাশিস চৌধুরী বলেন, ‘‘আশা ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নাবালিকা বিয়ে রুখতে প্রচার চলছে। দ্রুত এই ছবি পাল্টাবে।’’ মাধ্যমিক পরীক্ষার কোচবিহার জেলা অ্যাডভাইসরি কমিটির আহ্বায়ক সঞ্জয় সরকার বলেন, ‘‘সন্তান জন্মানোর পরপরই ওই ছাত্রী পরীক্ষা দিতে চাইলে সেই ব্যবস্থা করা হয়।’’ মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) চিরন্তন প্রামাণিক অবশ্য বলেন, ‘‘মুর্শিদাবাদে বাল্যবিবাহের ঘটনা যথেষ্ট। তা আটকাতে কাজ করছে প্রশাসন।’’ কোচবিহারের কিশোরীর স্বামী বলেন, ‘‘পরীক্ষায় বসার ইচ্ছা ছিল স্ত্রীর। স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে, হাসপাতালেই পরীক্ষার ব্যবস্থা হয়।’’

(সহ-প্রতিবেদন: বিমান হাজরা)

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Girl new born baby

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy