Advertisement
E-Paper

ভাষাহীন প্রেম বাঁধছে হাওড়ার মুক্ত-রূপশ্রীকে

উলুবেড়িয়ার মুক্ত আর রূপশ্রীর গল্পটাও অনেকটাই সে রকম। তাঁরাও শুরু করতে চলেছেন জীবনের এক নতুন অধ্যায়।

সুব্রত জানা

শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:৩০
বিয়ের কার্ড হাতে রূপশ্রী ও মুক্ত। নিজস্ব চিত্র। (ডানদিকে) সঞ্জীবকুমার ও জয়া ভাদুড়ী অভিনীত ‘কোশিশ’ ছবির পোস্টার।

বিয়ের কার্ড হাতে রূপশ্রী ও মুক্ত। নিজস্ব চিত্র। (ডানদিকে) সঞ্জীবকুমার ও জয়া ভাদুড়ী অভিনীত ‘কোশিশ’ ছবির পোস্টার।

প্রেম আছে। তবে সেখানে নেই ‘ভাষা’।

সঞ্জীবকুমার আর জয়া ভাদুড়ী অভিনীত ‘কোশিশ’ সিনেমার নির্বাক ‘হরি-আরতি’ হাজার বাধা পেরিয়েও জীবনের মায়াটুকু ছাড়েননি। উলুবেড়িয়ার মুক্ত আর রূপশ্রীর গল্পটাও অনেকটাই সে রকম। তাঁরাও শুরু করতে চলেছেন জীবনের এক নতুন অধ্যায়।

উলুবেড়িয়া কামিনা গ্রামের রূপশ্রী দেঁড়ে জন্ম থেকে মূক-বধির।। মেয়েকে নিয়ে দুর্ভাবনার অন্ত ছিল না শিশির ও অর্চনাদেবীর। বাড়ি থেকে কুড়ি কিলোমিটার দূরে উলুবেড়িয়ার জগৎপুরে একটি মূক-বধির স্কুলে ভর্তি হয়েছিল সাত বছরের রূপশ্রী। ২০১৬ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার পর অবশ্য আর পড়া হয়নি রূপশ্রীর। শিশিরবাবু বলেন, ‘‘খেতমজুরি করে তিন ছেলে-মেয়ে নিয়ে অভাবের সংসার। চেষ্টা করলে হয়তো ও পড়তে পারত। কিন্তু আমিই আর পড়াতে পারলাম না।’’

মাস আটেক আগে বিয়ের সম্বন্ধ দেখা হয় বছর একুশের রূপশ্রীর জন্য। কিন্তু তখনই বেঁকে বসেছিলেন তিনি। জানিয়েছিলেন, তাঁর মতো মূক-বধির কোনও ছেলেকেই বিয়ে করতে চান। যদি সে রকম কেউ না মেলে, তা হলে বিয়েই করবেন না বলেও ঠিক করেছিলেন। খাতায় লিখে তিনি জানান, ‘‘আমার সমস্যা কোথায়, সেটা ওই মানুষটা ছাড়া আর কেউ বুঝবে না। আর পারস্পরিক বোঝাপড়া না থাকলে সংসার করে কী লাভ!’’

শেষ পর্যন্ত পাত্রের খোঁজ মিলল বাগনানের রূপাশগড়ি গ্রামে।

ঞ্চানন সাঁতরার ছোট ছেলে মুক্ত সাঁতরাও জন্ম থেকে মূক-বধির। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে বছর পঁচিশের সেই যুবক এখন সোনার গয়না তৈরির কারিগর। কর্মসূত্রে থাকেন দিল্লিতে। দুই পরিবারের তরফেই অমত ছিল না। তারপর ‘ভিডিয়ো কল’ করে

‘কথা হয়’ রূপশ্রী আর মুক্তর। মাস দু’য়েক পরে দু’জনেই বাড়িতে জানান, প্রেমে পড়েছেন তাঁরা।

আগামী ১২ মার্চ ঠিক হয়েছে বিয়ের দিন। দিন দু’য়েক আগে দিল্লি থেকে এক মাসের ছুটি নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন মুক্ত। দু’জনে একসঙ্গে পছন্দ করে বিয়ের কার্ড কিনেছেন। নতুন কেনা বাইক চেপে দু’জনে বিয়ের কেনাকাটা করতেও গিয়েছেন। মুক্ত জানিয়েছেন, ‘‘রূপশ্রী আমাকে বুঝতে পারে। সেটা খুব দরকার ছিল।’’

খুশি দুই পরিবারের সদস্যরাও। রূপশ্রীর মা বলেন, ‘‘মেয়েটা কথা বলতে পারে না তো! খুব ভয় করত ওর জন্য। এখন নিশ্চিন্ত।’’ ছোট থেকে যে স্কুলে রূপশ্রী পড়াশোনা করেছে, সেই স্কুলের শিক্ষক তথা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য প্রতিবন্ধী সম্মিলনীর হাওড়া জেলার সম্পাদক অজয় দাস বলেন, ‘‘প্রেমে যে ভাষা কোনও প্রতিবন্ধকতা নয়, সেটা ফের প্রমাণ হল। সুখে থাকুন ওঁরা।’’

Marriage Love
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy