বোমা ছুড়ছে…আমাদের ওরা মেরে ফেলবে…এখনই এখান থেকে চলে যেতে হবে। গত বৃহস্পিতবারেই শেষ বারের মতো ছেলের সঙ্গে কথা হয়েছিল গঙ্গাধরের মায়ের। ওটাই শেষ কথা। সে দিন ছেলের মুখ থেকে এই কথাই শুনেছিলেন, জানালেন তিনি।
গঙ্গাধর দলুই। বয়স ২২। সেনাবাহিনীর ৬ বিহার রেজিমেন্টের জওয়ান ছিলেন। রবিবারের জঙ্গি হামলায় নিহত জওয়ানদের মধ্যে তিনিও একজন। বাড়ি এ রাজ্যের হাওড়ার জগত্বল্লভপুরের বালিয়া গ্রামে। তাঁর মৃত্যুর খবর গ্রামে পৌঁছতেই কান্নায় ভেঙে পড়ে পরিবার। গোটা গ্রামে শোকের ছায়া নেমে আসে। গঙ্গাধরের বাবা বলেন, “মাত্র ২২ বছর হয়েছিল ছেলেটার। জুনিয়র ছিল। সিনিয়রদের না পাঠিয়ে কেন ওকে ওখানে পাঠানো হল?” গঙ্গাধরের মায়ের আর্জি, যারা তাঁদের ছেলেকে মেরেছে, তাদের উচিত শিক্ষা দিক সরকার।
গ্রামের ছেলের মৃত্যুটাকে মেনে নিতে পারছেন না বাসিন্দারাও। গ্রামবাসীরা একযোগে জানান, যে ভাবে জওয়ানদের মেরেছে, এর উচিত জবাব দেওয়া প্রয়োজন। গাছপালায় ঘেরা টালির চালের বাড়ি। মাঝে মাঝেই সেখান থেকে ভেসে আসছে কান্নার আওয়াজ। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী সদস্য ছিলেন গঙ্গাধর।
গঙ্গাধরের মতো ওই সেনা ছাউনিতেই ছিলেন আরও এক বাঙালি ছেলে বিশ্বজিত্ ঘড়াই (২২)। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসিন্দা গঙ্গাসাগরের বাসিন্দা বিশ্বজিত্ ছিলেন ওই একই রেজিমেন্টে। হামলায় সময় তিনিও উরির সেনা ছাউনিতে ছিলেন।
বিশ্বজিত্ ও গঙ্গাধর (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র।
সোমবার এই দুই জওয়ানের দেহ বিমানে করে শ্রীনগর থেকে পটনা হয়ে রাতে কলকাতায় নিয়ে আসা হবে।
ওই হামলাতেই নিহত হন নায়েক এস কে বিদ্যার্থী। তিনি বিহারের বাসিন্দা। বিদ্যার্থীর মৃত্যুর খবর তাঁর গ্রামে পৌঁছতেই শোকের ছায়া নেমে আসে। শোকে ভেঙে পড়ে গোটা পরিবার। যে শত্রুরা তাঁর বাবার মতো আরও জওয়ানদের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে, তাদের উচিত শিক্ষা দিক ভারত, বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে এই প্রতিক্রিয়া দিলেন বিদ্যার্থীর মেয়ে।
রবিবার ভোর সাড়ে ৫টায় কাশ্মীরের উরির সেনাঘাঁটিতে ৪ জঙ্গি অতর্কিতে হামলা চালায়। সেনা ছাউনি লক্ষ্য করে গুলি, গ্রেনেড নিয়ে হামলা করে। পাল্টা জবাব দেয় জওয়ানরাও। টানা ছয় ঘণ্টা লড়াইয়ের পর ৪ জঙ্গিকে খতম করা হয়। জঙ্গিদের হামলায় নিহত হন ১৮ জন জওয়ান।
আরও খবর...