Advertisement
E-Paper

সামনেই নদী, তবু ভরসা বরফ-গলা জল

রোজ সন্ধ্যায় সেই রেডিয়ো ঘিরেই বসতেন ৪২ জন। শুনতেন ‘সিমলা বার্তা’। অপেক্ষায় থাকতেন, কত ক্ষণে মিলবে ‘মুক্তি’র বার্তা। টানা তিন দিন তেমন আভাস মেলেনি।

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৫:১৯
মুক্তি: আটকে পড়া পর্যটকদের উদ্ধার করতে হিমাচল প্রদেশের ছোটা দারায় বায়ুসেনার কপ্টার। —নিজস্ব চিত্র

মুক্তি: আটকে পড়া পর্যটকদের উদ্ধার করতে হিমাচল প্রদেশের ছোটা দারায় বায়ুসেনার কপ্টার। —নিজস্ব চিত্র

ভরসা ছিল ছোট্ট একটা রেডিয়ো!

রোজ সন্ধ্যায় সেই রেডিয়ো ঘিরেই বসতেন ৪২ জন। শুনতেন ‘সিমলা বার্তা’। অপেক্ষায় থাকতেন, কত ক্ষণে মিলবে ‘মুক্তি’র বার্তা। টানা তিন দিন তেমন আভাস মেলেনি। চতুর্থ দিন সন্ধ্যায় প্রথম তাঁরা জানতে পারেন, সেনাবাহিনী উদ্ধার শুরু করেছে। পরের দিন সকালে দেখলেন, রোদ ঝলমলে আকাশে চক্কর কাটছে ভারতীয় বায়ুসেনার ‘মাইটি আরমার্স ইউনিট’-এর হেলিকপ্টার।

টানা ৫ দিনের সেই অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে শিউরে উঠছেন ওই দলে থাকা এ রাজ্যের দুই যুবক—প্রীতম বসাক ও প্রতীম রক্ষিত। যাঁরা হিমাচল প্রদেশের চন্দ্রতাল থেকে রোটাং পাস আসার সময় টানা ৬ দিন ‘বরফ-বন্দি’ হয়ে ছিলেন ছোট্ট জনপদ ‘ছোটা দারা’য়। ভারতীয় বায়ুসেনার হেলিকপ্টার তাঁদের উদ্ধার করে কুলুতে নিয়ে আসে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে দু’জনেই এখন বাড়ির পথে।

হুগলির চন্দননগরের ২৭ বছরের প্রতীম ও তাঁর স্ত্রী সুস্মিতা মোটরবাইকে পাড়ি দিয়েছিলেন স্পিতি উপত্যকার উদ্দেশে। ৬ দিন ধরে ছিটকুল, কল্পা, কাজা ঘুরে ২১ সেপ্টেম্বর তাঁরা কুনজুমলা পাস পার করে পৌঁছন চন্দ্রতাল লেকে। প্রতীম বলেন, ‘‘ঝলমলে আকাশ দেখে বোঝার উপায় ছিল না, এমন ভয়ানক অবস্থা হতে পারে।’’ তিনি জানান, ওই রাতে আকাশে ছায়াপথ (মিল্কিওয়ে) দেখবেন বলে আড়াইটের সময় ঘুম থেকে উঠে দেখেন মুষল ধারায় বৃষ্টি হচ্ছে। পরের দিন সকালে তীব্র তুষারপাত।

পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে বাইক নিয়ে রোটাংয়ের দিকে যান প্রতীমরা। চন্দ্রতালের অন্য প্রান্তে থাকা বাগুইআটির প্রীতমও দলের সঙ্গে মানালির দিকে রওনা দেন। দু’জনেই জানাচ্ছেন, প্রায় ১ ফুট বরফ ঢাকা রাস্তায় প্রতি মুহূর্তে বাইকের চাকা পিছলে যাচ্ছিল। জুতোর ভিতরে জল ঢুকে পা অসাড়। কোনও মতে চন্দ্রতাল থেকে প্রায় ১৫ কিমি দূরে ছোটা দারায় এসে পূর্ত দফতরের গেস্ট হাউসের সন্ধান পান তাঁরা। সেখানেই এক-এক করে আশ্রয় নেন ৪২ জন।

প্রতীম জানান, গেস্ট হাউসের সামনে নদী থাকলেও তীব্র তুষারপাতের কারণে সেখানে যাওয়া যাচ্ছিল না। কখনও বরফ খুঁড়ে, কখনও আবার বাড়ির ছাউনিতে জমা বরফ গলে পড়া জলের ফোঁটা বালতিতে ধরে রাখা হচ্ছিল। খাবার বলতে গেস্ট হাউসের কেয়ারটেকার রাজকুমারের চাল ও ডাল ফুটিয়ে দেওয়া। প্রতীমরা জানান, বিদ্যুৎহীন বাড়িতে প্রতিদিন সন্ধ্যায় একটা মোমবাতি জ্বেলে রেডিয়ো নিয়ে বসতেন সকলে। ২৫ সেপ্টেম্বর সকালে প্রথম দেখা মেলে বায়ুসেনার হেলিকপ্টারের। হাত নেড়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করার পরে মেলে জলের বোতল ও খাবার। প্রীতম বলেন, ‘‘পরের দিন হেলিকপ্টার থেকে ফের কিছু খাবার দেওয়া হয়। ভরসা ছিল, খাবার যখন দিচ্ছে, উদ্ধারও করবে। ’’

ভারতীয় বায়ুসেনা সূত্রের খবর, ২৭ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টা নাগাদ ‘মাইটি আরমার্স ইউনিট’-এর স্কোয়ার্ডন লিডার বিপুল গোয়েলের নেতৃত্বে উদ্ধারকারী হেলিকপ্টার ছোটা দারায় যায়। প্রথমে তিনটি বাচ্চা এবং মহিলা-সহ ১৩ জনকে উদ্ধার করা হয়। পরে দুপুরে ফের এসে বাকিদের কুলুতে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রতীম ও প্রীতমরা অবশ্য বলছেন, ‘‘বায়ুসেনারা দেবদূতের মতো না এলে হয়তো আর বাড়ি ফেরা হত না।’’

Rescue Simla Tourist সিমলা
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy