Advertisement
০৪ মে ২০২৪

কী জানি, ভাইপো নিজেই মেসেজটা করেছিল কি না

দাদার সঙ্গে দেখা হয়েছিল সতেরো বছর আগে। আর খোঁজখবর নেই। ছেলের বিয়ের সময়ে নেমন্তন্ন করতে ‘সেজদা’কে ফোন করেছিলেন সালকিয়া ধর্মতলা রোডের বাসিন্দা রবীন্দ্রকুমার দাস। ‘সেজদা’, বীরেন্দ্রকুমার দাস আকাঙ্ক্ষা-কাণ্ডে অভিযুক্ত উদয়নের বাবা।

উদয়নের কাকা রবীন্দ্রকুমার দাস। — নিজস্ব চিত্র

উদয়নের কাকা রবীন্দ্রকুমার দাস। — নিজস্ব চিত্র

দেবাশিস দাশ ও শান্তনু ঘোষ
শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:০৫
Share: Save:

দাদার সঙ্গে দেখা হয়েছিল সতেরো বছর আগে। আর খোঁজখবর নেই। ছেলের বিয়ের সময়ে নেমন্তন্ন করতে ‘সেজদা’কে ফোন করেছিলেন সালকিয়া ধর্মতলা রোডের বাসিন্দা রবীন্দ্রকুমার দাস। ‘সেজদা’, বীরেন্দ্রকুমার দাস আকাঙ্ক্ষা-কাণ্ডে অভিযুক্ত উদয়নের বাবা।

২০০৯-এর জুলাইয়ের সেই দিনটা এখনও টাটকা রবীন্দ্রবাবুর স্মৃতিতে। বলেন, ‘‘ফোনটা দু’বার বাজল। কেউ ধরল না। তৃতীয়বার ফোনটা কেটে দেওয়া হল মাঝপথেই। তার পরে আমার মোবাইলে মেসেজ এসেছিল— ‘বিরক্ত করো না। আমি পার্টি করছি’। ধাক্কা লেগেছিল। দাদার ব্যবহারের সঙ্গে মেলাতে পারিনি।’’

যেমন পারেননি ছোটবেলায় মায়ের আঁচল ধরে ঘুরে বেড়ানো উদয়নকে তার বাবা-মায়ের খুনে অভিযুক্ত ভাবতে। বছর পঁচাত্তরের বৃদ্ধের গলা ভেঙে যায়, ‘‘সেই ছোট্ট উদয় (উদয়নের ডাক-নাম) কি না সেজদা-সেজ বৌদিকে মেরে বাড়ির ভিতরে কংক্রিটের কবর দিয়ে রেখেছিল!’’ সঙ্গে জুড়ছেন, ‘‘আর ওই যে মেয়েটা আকাঙ্ক্ষা, ওকেও..! ছেলেটা পরিবারের নাম ডোবাল!’’

মঙ্গলবার রাতে সালকিয়ায় নিজের আসবাবপত্রের দোকানে বসে রবীন্দ্রবাবুর স্মৃতিচারণ— সরকারি সংস্থায় চাকরি পেয়ে ভোপালে চলে গিয়েছিলেন বীরেন্দ্র। তাঁর স্ত্রী ইন্দ্রাণী গ্বালিয়রের বাঙালি পরিবারের মেয়ে। দাদার বিয়ের সময় ভোপালে যাওয়ার কথা স্পষ্ট মনে আছে রবীন্দ্রবাবুর। মনে আছে, ১৯৯০ সালে বাবা-মায়ের সঙ্গে সালকিয়ায় এসেছিল উদয়ন। ওই একবারই। তখন তার বয়স বছর চারেক। রবীন্দ্রবাবুর কথায়, ‘‘সারা দিন বৌদির আঁচল ধরে ঘুরত। খুব মিষ্টি ছেলে ছিল উদয়। তারই নাম কি না তিনটে খুনে জড়াল!’’

পরিবার সূত্রে খবর, ১৯৯০-এর পরে ়সালকিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন না বীরেন্দ্রবাবুরা। তবে ১৯৯২ সালে মা মারা যাওয়ার পরে তিনি একা বাড়িতে এসেছিলেন। সেই শেষ। রবীন্দ্রবাবু বলেন, ‘‘মা বেঁচে থাকতে তা-ও সেজদা, বৌদি ও উদয় মাঝেমধ্যে যোগাযোগ করত। কিন্তু মা মারা যেতেই সব শেষ!’’

সংবাদমাধ্যমে ভাইপোর ছবি দেখে প্রথমে চিনতে পারেননি রবীন্দ্রবাবুরা। বৃদ্ধ জানান, টিভিতে ছত্তীসগড়ের রায়পুরে ‘ইন্দ্রাণী’ নামের বাড়িটা দেখেই তাঁদের সংশয় হয়। বলেন, ‘‘নতুন বাড়ি করে বৌদির নামেই বাড়ির নাম রেখেছিল সেজদা। সেটা জানতাম। তখনই সংশয় হল। পরে টিভিতে দাদা-বৌদির ছবি দেখে, সব স্পষ্ট হয়ে গেল।’’

পুলিশের দাবি, জেরায় উদয়ন তাদের বলেছে, ২০১০ নাগাদ সে তার বাবা-মাকে খুন করে পুঁতে দিয়েছিল। তবে রবীন্দ্রবাবু নিশ্চিত নন। বলেন, ‘‘২০০৯-এ আমার মোবাইলে মেসেজটা দাদা পাঠিয়েছিলেন বলে এখন বিশ্বাস করতে পারছি না। শুনছি, ভাইপো ওই মেয়েটার (আকাঙ্ক্ষা) নাম ভাঁড়িয়ে অনেককে মেসেজ করেছে। কী জানি, আমাকেও ও-ই মেসেজ করেছিল কি না!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bhopal Murder Case Udayan Das Akanksha Sharma
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE