Advertisement
E-Paper

জল্পনা বাড়িয়ে পদ ছাড়লেন উদয়ন

ইদানীং কালে দলে তাঁর পরিচিতি হয়ে উঠেছিল ‘বিক্ষুব্ধ’ নেতা হিসাবে। দলের রাজ্য সম্পাদক অশোক ঘোষের নানা কাজকর্ম নিয়ে প্রশ্ন তুলছিলেন। দল তথা বামফ্রন্টের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক বাধাচ্ছিলেন ফেসবুকে। শেষ পর্যন্ত বুধবার ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহার জেলা সম্পাদক ও রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দিলেন দিনহাটার বিধায়ক উদয়ন গুহ। সেই সঙ্গেই জোরালো হল দলত্যাগ করে তাঁর তৃণমূলে যাওয়ার জল্পনা!

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:৫৫
উদয়ন গুহ

উদয়ন গুহ

ইদানীং কালে দলে তাঁর পরিচিতি হয়ে উঠেছিল ‘বিক্ষুব্ধ’ নেতা হিসাবে। দলের রাজ্য সম্পাদক অশোক ঘোষের নানা কাজকর্ম নিয়ে প্রশ্ন তুলছিলেন। দল তথা বামফ্রন্টের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক বাধাচ্ছিলেন ফেসবুকে। শেষ পর্যন্ত বুধবার ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহার জেলা সম্পাদক ও রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দিলেন দিনহাটার বিধায়ক উদয়ন গুহ। সেই সঙ্গেই জোরালো হল দলত্যাগ করে তাঁর তৃণমূলে যাওয়ার জল্পনা!

বিধানসভা থেকে বেরিয়ে বুধবার ফব-র রাজ্য দফতরে গিয়ে রাজ্য সম্পাদক অশোকবাবুকে চিঠি দিয়ে দলের পদ ছাড়ার কথা জানিয়ে দিয়েছেন উদয়নবাবু। তার পরেই উঠে বসেছেন কোচবিহারের ট্রেনে। তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের খবর, দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে মতের ফারাকের কথা উল্লেখ করা আছে পদ ছাড়ার চিঠিতে। খোদ উদয়নবাবু অবশ্য বিষয়টি ভাঙতে নারাজ। তাঁর সংক্ষিপ্ত বক্তব্য, ‘‘আমি দল ছাড়িনি। এই নিয়ে এখন কিছু বলতে চাই না। যাঁরা দল ছা়ড়ার খবর সংবাদমাধ্যমকে দিচ্ছেন, তাঁদেরই দায়িত্ব এটা প্রমাণ করার!’’

লোকসভা ভোটের সময়েই তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন প্রয়াত কমল গুহের কন্যা ইন্দ্রাণী ব্রহ্ম। কিন্তু তাঁর ভাইও সেই পথেই যাবেন, এখনও বিশ্বাস করতে নারাজ দলের একাংশ। ফব-র সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত বিশ্বাসেরও মুখে কুলুপ। প্রশ্নের জবাবে শুধু বলেছেন, ‘‘আজ এই নিয়ে কিছু বলব না।’’ দলীয় সূত্রের খবর, বিধানসভা ভোটের আগে কোচবিহারে উদয়নবাবুর মতো নেতাকে হারাতে না চেয়ে তাঁর সঙ্গে আলোচনা চালাতে চান ফব নেতৃত্ব।

তৃণমূলের একটি সূত্রে অবশ্য দাবি করা হচ্ছে, দিনহাটার বিধায়কের শিবির বদল শুধু সময়ের অপেক্ষা! ঘাসফুলের ছাতার তলায় তাঁর আশ্রয় নিশ্চিত করার বিষয়টি এখন দেখভাল করছেন শাসক দলের অধুনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা। দুই মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ও অরূপ বিশ্বাস আগেই এর ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছেন। বস্তুত, মঙ্গলবারই বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেছিলেন উদয়নবাবু। সাম্প্রতিক কালে বিধানসভাতেই একাধিক বার তাঁকে দেখা গিয়েছে পুরমন্ত্রী ফিরহাদের ঘরেও। উদয়নবাবু অবশ্য প্রতি বারেই বলেছেন, দিনহাটার পুরপ্রধান হিসাবে পুরমন্ত্রীর সঙ্গে কাজের খাতিরেই দেখা করতে হয়েছে।

শিলিগুড়ি পুরসভা জিতিয়ে সিপিএমে যেমন অশোক ভট্টাচার্য, দিনহাটায় গড় রক্ষা করে কয়েক মাস আগের পুরভোটের পরে ফব-য় তেমনই মর্যাদা বেড়েছিল উদয়নবাবুর। ফব-র দফতরে তাঁকে সংবর্ধনা দিয়েছিলেন অশোকবাবুরা। কিন্তু দলের রাজ্য নেতৃত্বের একাংশের সঙ্গে উদয়নবাবুর সম্পর্কের জটিলতা তাতে কেটে যায়নি। বরং, ফব-র দফতরে মুখ্যমন্ত্রীকে পাশে বসিয়ে অশোকবাবুর মমতা-প্রশস্তির কড়া সমালোচনা করেছিলেন কোচবিহারের জেলা সম্পাদক। দলের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে হাজির হয়ে গিয়েছিলেন উত্তর ২৪ পরগনায় তৎকালীন ‘বিদ্রোহী’দের সভায়। আর ফেসবুকে জারি ছিল একের পর এক ইঙ্গিতপূর্ণ ও বিতর্কিত পোস্ট। দলে বৃদ্ধতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে নেতৃত্বে পরিবর্তন আনার পক্ষে সওয়ালকারী উদয়নবাবুর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন সতীর্থদের মধ্যে কেউ কেউ। কিন্তু তাঁরাও কেউ ঘুণাক্ষরে জানতে পারেননি, উদয়নবাবু এ ভাবে পদ ছেড়ে দেবেন!

ফব-র একাংশের বক্তব্য, দিনহাটা পুরসভা জেতার পরেও তৃণমূলের বাধায় কাজ চালাতে পারছিলেন না উদয়নবাবু। সেই সঙ্গেই আগামী বিধানসভা ভোটে ফের দিনহাটা থেকে জিতে আসা নিয়ে সংশয় ছিল। এ সব অঙ্ক থেকেই উদয়নবাবুর পরিকল্পনা রচিত হয়ে থাকতে পারে। তবে
এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে যে, তিনি নাকি মুকুল রায়ের প্রস্তাবিত দলেও যেতে পারেন!

তাঁর পদ ছাড়ার খবর কোচবিহারে পৌঁছতেই দলে হইচই পড়ে গিয়েছে এ দিন। ফব কর্মীদের অনেকেই দিনহাটার দলীয় কার্যালয়ে জড়ো হন। সবাইকে উদয়নবাবুর কোচবিহার ফেরা পর্যন্ত অপেক্ষা করার পরামর্শ দেন স্থানীয় নেতারা। স্থানীয় এক নেতার বক্তব্য, “দলের কাজ নিয়ে বহু দিন ধরেই ক্ষোভ জানিয়ে আসছিলেন তিনি। কেউ কর্ণপাত করেননি। তাই তিনি ইস্তফা দিয়েছেন। তিনি শাসক দলে গেলে আমরাও যাব।” দলের জেলা সভাপতি পরেশ অধিকারী এবং জেলা থেকে আর এক বিধায়ক অক্ষয় ঠাকুর অবশ্য বিশদে মন্তব্য করতে চাননি। তৃণমূলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “ওই বিষয়ে আমি কিছু জানি না।” যদিও শাসক দলের এক জেলা নেতা বলে রেখেছেন, “উদয়নবাবুদের বিরুদ্ধেই বরাবর প্রচার করে এসেছি। এ বার তিনি দলে ঢুকলে কার বিরুদ্ধে কথা বলব!”

Udayan Guha cooach behar Dinhata
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy