Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

পিএইচডি এ বার কলেজেও করা যাবে

জেলার কলেজগুলিতে যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষক থাকলেও এত দিন একক ভাবে তাঁরা ডক্টরাল গবেষণার তত্বাবধান করতে পারতেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও অধ্যাপক বা অধ্যাপিকার সঙ্গে যুগ্ম-তত্বাবধায়ক হতে হতো।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:৩২
Share: Save:

জেলার কলেজগুলিতে যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষক থাকলেও এত দিন একক ভাবে তাঁরা ডক্টরাল গবেষণার তত্বাবধান করতে পারতেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও অধ্যাপক বা অধ্যাপিকার সঙ্গে যুগ্ম-তত্বাবধায়ক হতে হতো। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি আয়োগের একটি নির্দেশিকায় সেই দরজা খুলে গেল। এ বারে কলেজের শিক্ষকেরাও নির্দিষ্ট যোগ্যতা থাকলে একক ভাবে পিএইচডি গবেষণার তত্বাবধায়ক হতে পারবেন। সম্প্রতি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ও নির্দেশিকা অনুযায়ী পদক্ষেপ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্‌জিকিউটিভ কাউন্সিলের বৈঠকে ইউজিসি-র নির্দেশিকাটি কার্যকর করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

২০১৬-র জুলাইয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি আয়োগ (ইউজিসি)-র জারি করা একটি নির্দেশিকায় কলেজের শিক্ষক শিক্ষিকাদের পিএইচডি গবেষণা তত্বাবধানের অধিকার দেওয়া হয়েছে। ধাপে ধাপে রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় নির্দেশিকাটি মেনে নিচ্ছে। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্‌জিকিউটিভ কাউন্সিলের সদস্য এবং ন্যাশনাল অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল (নাক)-এর পরিদর্শক, বাঁকুড়া সারদামণি গার্লস কলেজের অধ্যক্ষ সিদ্ধার্থ গুপ্ত বলেন, “কলেজের শিক্ষক শিক্ষিকারা যোগ্যতা থাকা সত্বেও দীর্ঘদিন ধরেই পিএইচডি গবেষণা তত্বাবধান করার সুযোগ পেতেন না।’’ তিনি জানান, ডক্টরাল গবেষণার তত্বাবধায়ক হতে হলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক বা শিক্ষিকার নিজের ডক্টরাল ডিগ্রি থাকা দরকার। তার সঙ্গে অন্তত দু’টি নামী জার্নালে প্রকাশিত মৌলিক গবেষণা নিবন্ধ থাকতে হবে। যে সমস্ত কলেজে ইতিমধ্যেই কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় রেগুলার ভিত্তিতে স্নাতকোত্তর পড়ানো হচ্ছে সেখানে এই নির্দিষ্ট যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষক বা শিক্ষিকা থাকলে পিএইচডি গবেষণার সুযোগ মিলবে বলে জানান সিদ্ধার্থবাবু। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের একাংশ জানান, এত দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগ্য শিক্ষকেরা এক সঙ্গে নির্দিষ্ট সংখ্যক ডক্টরাল গবেষণার তত্বাবধান করতে পারতেন। এর ফলে তত্বাবধায়কের অভাবে অনেক ছাত্রছাত্রী গবেষণার সুযোগ পেতেন না। কলেজের শিক্ষকেরা একক ভাবে গবেষণা তত্বাবধানের সুযোগ পেলে আরও অনেক ছাত্রছাত্রীর জন্য গবেষণার সুযোগ তৈরি হবে বলে তাঁদের আশা।

গত বছর বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা, ইংরেজি, সংস্কৃত, সমাজকর্ম, ইতিহাস, দর্শন, এডুকেশন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, আইন ও গণিতে পিএইচডি কোর্স চালু হয়েছে। তবে, বাঁকুড়া খ্রিস্টান কলেজে বাংলা ও ইংরেজিতে, বিষ্ণুপুর রামানন্দ কলেজে বোটানিতে এবং সারেঙ্গার পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মু কলেজে ভূগোল ও সাঁওতালি সংস্কৃতি বিষয়ে রেগুলার ভিত্তিতে স্নাতকোত্তর পড়ানো হয়। খ্রিস্টান কলেজের অধ্যক্ষ ফটিকবরণ মণ্ডল বলেন, “কলেজের শিক্ষক শিক্ষিকারা তত্বাবধায়ক হওয়ার সুযোগ পেলে অনেক ছাত্রছাত্রী উপকৃত হবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপরে নির্ভর করে থাকতে হবে না।’’ পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মু কলেজের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক কুন্তল চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ইউজিসি-র এই সিদ্ধান্তে আরও অনেক ছাত্রছাত্রী গবেষণার সুযোগ পাবেন।’’

জেলার ২৪টি কলেজকেই বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, জেলা সফরে এসে মুকুটমণিপুরের বারোঘুটুর প্রশাসনিক বৈঠকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও জেলার কলেজগুলি জেলার বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় আনার বিষয়ে বলে গিয়েছেন। বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দেবনারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “জেলার কলেজগুলিকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় আনার বিষয়ে উচ্চশিক্ষা দফতর এখনও নির্দেশিকা পাঠায়নি। নির্দেশিকা আসলেই দ্রুত আমরা বাকি প্রক্রিয়া সেরে ফেলব।” জেলার কলেজ শিক্ষকদের একাংশের মতে বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় কলেজগুলি চলে এলে অনেক জায়গায় রেগুলার ভিত্তিতে স্নাতকোত্তর কোর্স চালু হবে। সেই সূত্রে গবেষণার দরজাও আরও প্রশস্ত হতে পারে জেলার ছাত্রছাত্রীদের জন্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

PHD UGC Colleges Burdwan University
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE