Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Partha Chatterjee

Partha Chatterjee: ৭৫% হাজিরা বাধ্যতামূলক, দু’দিন এসে কী ভাবে পরীক্ষা? বিতর্কে পার্থের পিএইচডি ডিগ্রি

যেখানে ছ’মাসের কোর্সওয়ার্ক করতে ক্লাসে ৭৫ শতাংশ হাজিরা বাধ্যতামূলক, সেখানে দু’দিন এসে পার্থ কী ভাবে পরীক্ষা দিয়েছেন?

ফাইল চিত্র।

সৌমিত্র কুণ্ডু
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২২ ০৫:১৩
Share: Save:

আট বছর আগে পিএইচডি করেছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁকে এসএসসি কেলেঙ্কারিতে ইডি হেফাজতে নেওয়ার পর সেই পিএইচডি করা নিয়ে নতুন করে অভিযোগ সামনে আসতে শুরু করেছে। অভিযোগ উঠেছে, তৎকালীন শিল্পমন্ত্রীকে পিএইচডি ডিগ্রি ‘পাইয়ে দেওয়ার’ জন্য উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, বিভাগীয় প্রধান থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিয়ম ভেঙেছেন।

বস্তুত, নিয়ম ভাঙার অভিযোগ যে উঠেছিল, তাই নিয়ে তখন বিভাগীয় প্রধানকে সাতটি বিষয়ে প্রশ্ন করেছিলেন তৎকালীন রেজিস্ট্রার। জানতে চাওয়া হয়েছিল, যেখানে ছ’মাসের কোর্সওয়ার্ক করতে ক্লাসে ৭৫ শতাংশ হাজিরা বাধ্যতামূলক, সেখানে দু’দিন এসে পার্থ কী ভাবে পরীক্ষা দিয়েছেন? একই সঙ্গে তথ্য জানার অধিকার আইনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে বিভিন্ন জন জানতে চান, পার্থ কোর্সওয়ার্কের পরীক্ষা দিয়েছিলেন কি না, কোর্সওয়ার্কের জন্য কত ক্লাস হয়েছিল, পার্থ কতগুলি ক্লাস করেছিলেন, কত ক্লাস করা দরকার? ২০১২ সালে পার্থ কোর্সওয়ার্কের পরীক্ষা দেন। পিএইচডি ডিগ্রি পেতে আরও দু’বছর তাঁকে অপেক্ষা করতে হয়। ২০১২ সালের ২৩ এপ্রিলই উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের তৎকালীন প্রধান সঞ্চারী রায় মুখোপাধ্যায় লিখিতভাবে জানিয়েছিলেন: কোর্সওয়ার্কে প্রতিটি ২ ঘণ্টা করে মোট ৪৮টি ক্লাসরুম-লেকচার হয়েছে। পার্থ দু’দিন এসেছিলেন।

সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন রয়েই গিয়েছে, তা হলে তাঁর উপস্থিতি ৭৫ শতাংশ হল কী করে? প্রধান যুক্তি দিয়েছেন, অর্থনীতিতে কোর্সওয়ার্কের জন্য সপ্তাহে ১৬ ঘণ্টা সময় দিতে হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। তার মধ্যে ৪ ঘণ্টা ‘ক্লাস লেকচার’ এবং ১২ ঘণ্টা লাইব্রেরি-ওয়ার্ক। ছুটিছাটা মিলিয়ে ১৩ সপ্তাহ তা চলবে। সব মিলে ২০৮ ঘণ্টা। তার ৭৫ শতাংশ অর্থাৎ ১৫৬ ঘণ্টা হাজিরা দিতেই হবে। পার্থর গাইড তথা সুপারভাইজাররা শংসাপত্র দিয়েছেন, পার্থ প্রতিদিন চার ঘণ্টা করে প্রতি সপ্তাহে ৩ দিন তাঁদের সময় দিয়েছেন। সেই মতো ১৫৬ ঘণ্টা হয়।

প্রশ্ন ওঠে, ক্লাসে না এসেও পার্থ কী ভাবে ‘সময় দিয়েছেন’? পার্থর কো-গাইড তথা বর্তমানে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিপুল মালাকার লিখিত ভাবে বিভাগীয় প্রধানকে বলেছেন, ‘আমি এবং অনিল ভুঁইমালি পার্থর গবেষণার কাজ সুপারভাইজ় করছি। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আমার সঙ্গে তাঁর (পার্থ) অনবরত যোগাযোগে রয়েছে। তাঁর কাজ নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট। বিভাগের তরফে যেমন দরকার, সেই মতো গবেষণার বিষয়ে কোর্সওয়ার্ক প্রস্তুত করেছেন। তাঁর গবেষণার চেষ্টা, কাজ প্রশংসনীয়।’ অভিযোগ, এই সমস্ত যুক্তি কোনওটাই কোর্সওয়ার্কের নিয়মের মধ্যে পড়ে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সম্পাদক অর্ধেন্দু মণ্ডল বলেন, ‘‘কোর্সওয়ার্কের ৭৫ শতাংশ ক্লাসে উপস্থিত থাকতে হবে— এটাই নিয়ম। না হলে তো সবাই ঘরে বসেই কোর্সওয়ার্ক করবে।’’

তৎকালীন বিভাগীয় প্রধান সঞ্চারী বর্তমানে দক্ষিণ দিনাজপুর এবং রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘বিভাগীয় কমিটি সব অনুমোদন করেছে। কোনও ভুল নেই। কর্ম সমিতিতেও তা পাশ করানো হয়েছে।’’ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্ম সমিতিতে এ ভাবে কোর্সওয়ার্ক অনুমোদন করানোটাও নজিরবিহীন বলে শিক্ষকদের দাবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Partha Chatterjee University of North Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE