Advertisement
E-Paper

জোড়া ঘূর্ণাবর্তে কাবু শীত

এ বার দিনের তাপমাত্রা কম। শীত-শীত ভাব। উপরে উপরে হাল্কা একটা কুয়াশার রহস্যঘন চাদর। মঙ্গলবার সারা দিনের ছবিটা ছিল এই রকম। পৌষের গোড়াতেই এমন বিচিত্র শীত খুব একটা অনুভব করে না দক্ষিণবঙ্গ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৪:৩৭
ওম: ঠান্ডা পড়তে না পড়তেই শীত-পোশাকের বাহার। মঙ্গলবার কলকাতার নিউ মার্কেটে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

ওম: ঠান্ডা পড়তে না পড়তেই শীত-পোশাকের বাহার। মঙ্গলবার কলকাতার নিউ মার্কেটে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

জ্বরটা ডেঙ্গি না অন্য কিছু, সেই বিতর্কের ফেরে পড়ে তার নামটাই হয়ে গিয়েছে ‘অজানা জ্বর’।

এ বারের পৌষালি শীতেরও মতিগতি বেশ রহস্যময় ঠেকছে। এতটাই যে, ‘অজানা’ শীতের তকমা অনায়াসে দেওয়া যাচ্ছে তাকে।

রাতে কাঁপুনি আর দিনে রোদের দৌলতে কিছুটা ওম— শীতের আবহমান কালের এই চরিত্র বদলে গিয়েছে বেমালুম। আর বদলটা বেশি দেখা যাচ্ছে দিনমানে। এ বার দিনের তাপমাত্রা কম। শীত-শীত ভাব। উপরে উপরে হাল্কা একটা কুয়াশার রহস্যঘন চাদর। মঙ্গলবার সারা দিনের ছবিটা ছিল এই রকম। পৌষের গোড়াতেই এমন বিচিত্র শীত খুব একটা অনুভব করে না দক্ষিণবঙ্গ।

এটা কিন্তু শীতের আদর্শ পরিবেশ নয়। আবহবিদদের কাছে ‘আদর্শ শীত’ মানে দিনে ঝকঝকে রোদ, রাতে কনকনে ঠান্ডা। কিন্তু এ দিনের পরিস্থিতি পুরো উল্টো। মেঘলা আবহাওয়ার জন্য দিনের পারদ তেমন চড়তে পারেনি। হাওয়া অফিস বলছে, এ দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের থেকে চার ডিগ্রি কম। এদিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৫.৯ ডিগ্রি, যা স্বাভাবিকের থেকে এক ডিগ্রি বেশি। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে নামলেই তবেই সেটা শীত।

সেই আদর্শ শীত মিলবে কবে?

সদুত্তর নেই হাওয়ামোরগের কাছে। কেননা আগামী কয়েক দিনে আবহাওয়ার খুব একটা পরিবর্তেনর আশাই দেখছে না হাওয়া অফিস।

ক্যালেন্ডারে পৌষ, অথচ দক্ষিণবঙ্গে এমন আবহাওয়া কেন?

যত নষ্টের গোড়া দেশ আর পড়শি বাংলাদেশের দু’টি ঘূর্ণাবর্ত। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাসের ব্যাখ্যা, একটি ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়েছে বাংলাদেশে। সেই সঙ্গে উত্তরপ্রদেশেও রয়েছে একটি ঘূর্ণাবর্ত। খুব জোরালো না-হলেও এই জোড়া ঘূর্ণাবর্তের কারসাজিতেই সমানে জোলো হাওয়া ঢুকেছে গাঙ্গেয় বঙ্গের পরিমণ্ডলে। বায়ুমণ্ডলের নীচের স্তরে থাকা সেই জোলো হাওয়া ঠান্ডায় ঘনীভূত হয়ে হাল্কা কুয়াশা আর মেঘলা আবহাওয়া তৈরি করেছে। গণেশবাবু জানাচ্ছেন, ঘূর্ণাবর্ত বিদায় নেওয়ার আগে পর্যন্ত এমন আবহাওয়া চলবে। কয়েকটা দিন কলকাতায় রাতের তাপমাত্রা ১৬-১৭ ডিগ্রির কাছেপিঠে থাকবে।

জোড়া ঘূর্ণাবর্ত সরে গেলেই যে জব্বর শীত পড়বে, তেমনটাও আশা করা যাচ্ছে না। কারণ, তাদের থেকেও শীতের বড় শত্রু ঘুঁটি সাজাচ্ছে উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে। নাম তার পশ্চিমি ঝঞ্ঝা। আবহবিদদের একাংশ বলছেন, ফের একটি পশ্চিমি ঝঞ্ঝা আসতে চলেছে কাশ্মীরে। তার জেরে উত্তর-পশ্চিম ভারতেও মাথা তুলছে রাতের পারদ। তাই জোড়া ঘূর্ণাবর্ত কাটলেও সঙ্গে সঙ্গে উত্তুরে হাওয়ার জোর বিশেষ বাড়বে না। ঝঞ্ঝাটি কাশ্মীর-হিমাচলে তুমুল তুষারপাত ঘটিয়ে সরে যাওয়ার পরে আবার কাঁপিয়ে ঠান্ডা পড়বে উত্তর-পশ্চিম ভারতে। জোর বাড়বে উত্তুরে হাওয়ার। সেই হিমবাহী হাওয়ার কতটা এ-দিকে ধেয়ে আসে, তার উপরেই নির্ভর করছে বাংলার শীত-ভাগ্য।

আবহবিদেরা বলেন, শীত আসলে পারদের ওঠানামার খেলা। এক বার ধাক্কা খেয়ে পারদ চড়লে তার পরের ধাপে পারদের নামার কথা। যার অর্থ, ঘূর্ণাবর্তের পরের ধাপে কলকাতার পারদ নামবে। সে-দিক থেকে উত্তর-পশ্চিম ভারতে ঝঞ্ঝা কেটে গেলে পারদ নামা উচিত। এই সব মিলিয়েই শীতপ্রত্যাশী বাঙালির হিসেব, ক’টা বাদেই তো বড়দিন। ঝঞ্ঝা, ঘূর্ণাবর্ত এই ক’দিনে নিশ্চয়ই কেটে যাবে। তা হলে কি বড়দিনে সান্তাক্লজের ঝুলিতে তুমুল শীত অপেক্ষা করছে?!

আশায় আশায় আছে বাংলা।

Weather Update Depression Winter Temperature
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy