বাঁ দিক থেকে বুলু জানা, লালু জানা ও সুদীপ গুড়িয়া। নিজস্ব চিত্র
উত্তরাখণ্ডে হিমবাহ ফেটে ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জেরে নিখোঁজ অন্তত ১৫০ জন। সেই তালিকায় রয়েছেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মহিষাদলের ৩ যুবকও। মহিষাদল থেকে উত্তরাখণ্ডের তপোবন বিষ্ণুগড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে কাজ করতে গিয়েছিলেন তাঁরা। দুর্ঘটনার পর থেকে তাঁদের সঙ্গে কোনও ভাবেই যোগাযোগ করতে পারছেন না পরিবারের সদস্যরা। ঘটনায় চরম উদ্বেগে ৩ যুবকের পরিবার। নিখোঁজদের সন্ধান পেতে স্থানীয় প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন তাঁরা।
উত্তরাখণ্ডের নির্মীয়মাণ ওই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে ‘ওম মেটাল’ নামে একটি সংস্থার ঠিকাদার হিসাবে কাজ করেন মহিষাদলের লক্ষ্যা গ্রামের বাসিন্দা লালু জানা। ভাই বুলুকেও সেই কাজে নিয়েছিলেন তিনি। তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন মহিষাদলেরই চক দ্বারিবেড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা সুদীপ গুড়িয়া। নিখোঁজ সুদীপের দাদা বৈদ্যনাথ গুড়িয়া বললেন, ‘‘সুদীপ প্রায় ২ বছর ধরে ওই বিদ্যুৎপ্রকল্পে কাজ করছে। শেষ বার ও বাড়ি এসেছিল গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে। লকডাউন শুরু হওয়ার ২ দিন আগে তারা কাজে যোগ দিয়েছিল। এক বছর বাদে, আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি তার বাড়ি ফেরার কথা ছিল। শনিবার রাতেও ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। সেই শেষ বারের মতো কথা হয়েছিল দু’জনের। তার পর, রবিবার আচমকা এমন বিপত্তি।’’
বিপর্যয়ের খবর জানতে পারার পর থেকেই চরম উদ্বেগে নিখোঁজ ওই ৩ যুবকের পরিবারের সদস্যরা। আতঙ্কের প্রহর যেন কিছুতেই কাটছে না। মুখে একরাশ উদ্বেগের ছাপ নিয়েই বৈদ্যনাথ বললেন, ‘‘টিভিতে ভয়াবহ বিপর্যয়ের খবর পেয়েই ভাইয়ের মোবাইলে ফোন করেছিলাম। কিন্তু ফোন বন্ধ ছিল। তার পর আমিও পাগলের মতো একে একে ঠিকাদার এবং অন্যান্যদের মোবাইলে ফোন করতে থাকি। যদি কাউকে পাই। এক জন ফোন ধরেন। কিন্তু আমার আশঙ্কাই শেষ পর্যন্ত সত্যি হল। যিনি ফোন ধরেছিলেন তিনি বললেন, দুর্ঘটনার সময় ৩ জনই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যে কাজ করছিল।’’
খবরটা জানতে পারার পর থেকে শনিবার রাতভর দু’চোখের পাতা এক করতে পারেননি ৩ যুবকের পরিবারের কেউই। যত সময় গড়াচ্ছে ততই গভীর হচ্ছে কপালের ভাঁজ। বৈদ্যনাথ আরও বললেন, ‘‘রবিবার ছুটির দিন থাকায় সাধারণত কেউ কাজ করে না। কিন্তু বাড়তি মজুরির টোপ দেওয়ায় ওই সময় সুদীপ, লালু এবং তাঁর ভাই বুলু কাজে গিয়েছিল।’’ এলাকার নিখোঁজ যুবকদের সন্ধানে তদারকি চালাচ্ছেন চক দ্বারিবেড়িয়া গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য স্বপন দাস। তিনি বললেন, ‘‘ওঁরা নিখোঁজ থাকায় তিনটি পরিবারই চরম উদ্বেগে রয়েছে। প্রশাসনের মাধ্যমে ওঁদের দ্রুত খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy