Advertisement
E-Paper

শিল্পের ভাটায় আসন ফাঁকা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে

বিনিয়োগ টানার নামে দফায় দফায় সাত সমুদ্রপারে সফর চলছে। কিন্তু রাজ্যে বড় শিল্প নেই। ছোট ও মাঝারি মাপের যারা আছে, তাদের মধ্যেও ‘পালাই পালাই’ রব। এমনকী ভাটা পড়েছে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পেও। স্থায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা উল্লেখ করার মতো নয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৫ ০৪:১৭

বিনিয়োগ টানার নামে দফায় দফায় সাত সমুদ্রপারে সফর চলছে। কিন্তু রাজ্যে বড় শিল্প নেই। ছোট ও মাঝারি মাপের যারা আছে, তাদের মধ্যেও ‘পালাই পালাই’ রব। এমনকী ভাটা পড়েছে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পেও। স্থায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা উল্লেখ করার মতো নয়। এ বার এই নেই-ব্যাধির প্রভাব সরাসরি পড়ল রাজ্যের ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলিতে।

পরিস্থিতি যে অনুকূল নয়, তার আঁচ পেয়ে এ বছর রাজ্যে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছ’হাজার আসন কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তা সত্ত্বেও বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ছাত্র ভর্তির হার আশানুরূপ নয়। জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ড সূত্রের খবর, এক প্রস্ত কাউন্সেলিংয়ের পরেও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলিতে ১৯ হাজার আসন খালি পড়ে রয়েছে। যা কিনা মোট আসন-সংখ্যার প্রায় অর্ধেক!

আসন বেশি ফাঁকা বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলিতে। তবে আসন খালির তালিকায় নাম রয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রথম সারির প্রতিষ্ঠানেরও। ওই ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের এক শিক্ষকের কথায়, ‘‘আগে আমরা বুক ঠুকে বলতে পারতাম, পাশ করলে চাকরি মিলবেই। এখন সেই আত্মবিশ্বাসটা আর নেই। কর্মসংস্থানে অনিশ্চয়তাই এর মূল কারণ।’’ আর বেসরকারি কলেজগুলিতে পরিকাঠামোগত ত্রুটির জন্যই ছাত্রেরা আগ্রহ হারাচ্ছেন বলে মনে করছেন যাদবপুরের ওই শিক্ষক।

এ রাজ্য থেকে এক সময় দলে দলে পডুয়ারা দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে চলে যেতেন। তবে গত দশকের গোড়ার দিক থেকে পরপর বহু বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং‌ কলেজ চালু হওয়ায় উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে পডুয়ারা সেখানেই ভর্তি হচ্ছিলেন। খাস কলকাতার ছেলে প্রত্যন্ত এলাকার ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়তে যাচ্ছেন, এমন দৃশ্যও বিরল ছিল না। কিন্তু ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পঠনপাঠনও আর তেমন আস্থা বা আশ্বাস জোগাতে পারছে না ছাত্রছাত্রীদের। ‘‘ইঞ্জিনিয়ারিং ছেড়ে অনেকেই বিজ্ঞানের সাধারণ বিষয় নিয়ে পড়ার কথা ভাবছেন। বিজ্ঞানে উচ্চশিক্ষার পরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ খুঁজতে চাইছেন অনেক পড়ুয়া। চাকরিটাই তো মূল বিষয়,’’ বললেন প্রেসিডেন্সির এক শিক্ষক।

ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার ঝোঁক কমছে, এটা মানতে রাজি নন জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের চেয়ারম্যান ভাস্কর গুপ্ত। তা হলে ছাত্র-সংখ্যা কমছে কেন?

ভাস্করবাবুর ব্যাখ্যা, ‘‘এখন ‘কী পড়ব’র সঙ্গে সঙ্গে ‘কোথায় পড়ব’র ব্যাপারটাও গুরুত্ব দিয়ে ভাবছেন পড়ুয়ারা। সেই ভাবনা থেকেই অনেক ছাত্রছাত্রী নিজেদের কলেজ এবং বিষয় বেছে নিচ্ছেন। অনেক জায়গায় তাই আসন ফাঁকা পড়ে থাকছে।’’

ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে বদল যে একটা আসছে, তা মেনে নিয়েছেন যাদবপুরের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান চন্দন গুহ। তিনি বলেন, ‘‘দু’তিন বছর ধরেই এই পরিবর্তনটা লক্ষ করা যাচ্ছে।’’ তবে সেই পরিবর্তন যাদবপুরে ততটা প্রভাব ফেলবে না বলেই মনে করেন তিনি। যাদবপুরে ২১০টি ইঞ্জিনিয়ারিং আসন খালি রয়েছে। সেই সব ফাঁকা আসনে ভর্তির জন্য ফের কাউন্সেলিং হবে। তাতে সেখানকার সমস্যা মিটলেও মিটতে পারে। কিন্তু অন্যান্য কলেজের কী হবে? অনেকেই বলছেন, যাদবপুরের পরিকাঠামো ও ক্যাম্পাসিং রাজ্যের মধ্যে অন্যতম সেরা। সে-দিক থেকে দেখলে ওখানে ভর্তির ক্ষেত্রে ছাত্রদের অনীহা থাকার কথা নয়। কিন্তু যেখানে পরিকাঠামো-প্লেসমেন্টের সমস্যা রয়েছে, সেখানে তো নতুন করে কেউ ভর্তি হবেন না।

আসন খালি থাকার জন্য ভর্তি প্রক্রিয়াকেও দুষছেন অনেকে। যেমন শিবপুরের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং, সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (আইআইইএসটি)-র রেজিস্ট্রার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করেন, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তির প্রক্রিয়া জটিল বলেই অনেক আসন ফাঁকা থাকছে। আগে পড়ুয়ারা কাউন্সেলিংয়ে সশরীর হাজির থাকতেন। তার ফলে কোথায় কত আসন খালি, সেটা দেখে ভর্তি হওয়া যেত। এখন অনলাইনে কাউন্সেলিংয়ের ফলে পড়ুয়ারা কলেজ বাছাই করতে ভুল করছেন। অনেক সময় নিজের পরীক্ষার ফল যা, তার তুলনায় নাগালের বাইরের নামী কলেজে আবেদন করায় ভর্তির সুযোগ মিলছে না। ‘‘শহুরে পড়ুয়াদের তুলনায় গ্রামের পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা বেশি,’’ বলছেন বিমানবাবু।

জয়েন্ট বোর্ডের সভাপতি অবশ্য জানাচ্ছেন, কোনও সময়েই ১০০ শতাংশ আসন ভর্তি হয় না। কিন্তু সেই ফাঁকা আসনের সংখ্যাটা যদি একেবারে ৫০ শতাংশ ছুঁইছুঁই হয়?

সদুত্তর নেই ভাস্করবাবুর।

Vacant Central Admission Process jadavpur jadavpur university
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy