প্রতীকী ছবি।
গুমোট দিন। আকাশে মেঘ করে আছে, বৃষ্টি হচ্ছে না। তার মধ্যে ঘেমেনেয়ে বেশ কয়েক কিলোমিটার উজিয়ে এলেন। লাইন দিলেন দীর্ঘ সময় ধরে। মাথায় চিন্তা, টিকার ডোজ় মিলবে তো? এই লম্বা অপেক্ষার মধ্যে আপনার কানে ভেসে এল— ‘বসে আছি হে, কবে শুনিব তোমার বাণী’।
কিন্তু বসে থেকে কী হবে, ভাঁড়ার যে আজ শূন্য! এই তথ্যটি অবশ্য জানানো হল বেশ কিছু ক্ষণ বসে থাকার পরে। রুমালে ঘাম মুছতে মুছতে উঠে পড়বেন, এমন সময়ে শুনলেন— ‘বেলা গেল তোমার পথ চেয়ে’। সোমবার এমনটাই ঘটেছে জলপাইগুড়ি ফার্মাসি কলেজের টিকাকেন্দ্রে।
সেখানে টিকা নিতে গেলে প্রথমে লাইন দিতে হয়। তার পরে নাম লেখানো হয়ে গেলে একটি হলঘরে বসে অপেক্ষা করতে হয়। এ দিন সেই হলঘরে বসানো হয়েছে একটি বক্স। তাতেই পরের পর বাজছে রবীন্দ্রসঙ্গীত। উদ্দেশ্য, অপেক্ষারতদের মনোরঞ্জন। ঘরের দরজা-জানলা খোলা। তাই দিয়ে সুর চুইয়ে আসছে বাইরেও। তাতে বাইরে লাইন দিয়ে থাকা অনেকেই বলাবলি করলেন, “এ তো আমাদেরই মনের কথা বলছে। কিন্তু টিকা শেষ অবধি পাব তো?”
টিকার খোঁজ নিতে জলপাইগুড়ির পান্ডাপাড়া থেকে এসেছিলেন প্রবীর মজুমদার। তিনি একটি ব্যাঙ্কে কাজ করতেন। স্বেচ্ছাবসর নিয়েছেন। প্রথম ডোজ়ের টিকা এ দিনও পাওয়া যাবে না শুনে ফিরে যাওয়ার আগে কেন্দ্রের এক কর্মীকে বললেন, “আমার বেলা যে যায়’ গানটি বাজাও এ বারে। টিকা পেতে আমাদের কত বেলা যে চলে যাচ্ছে!”
সোমবার দিনভর নানা বয়সি লোকজন ফার্মাসি কলেজের টিকাকেন্দ্রে এসে খোঁজ নিয়ে খালি হাতে ফিরলেন। কবে থেকে প্রথম ডোজ় দেওয়া হতে পারে, সে খোঁজ না মিললেও তাঁদের কারও কারও কানে গেঁথে গেল রবীন্দ্রগানের সুর এবং কথা— ‘কবে বাহির হইব জগতে মম জীবন ধন্য মানি’।
টিকাকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা এক আধিকারিক গান বাজানোর বক্সটি নিয়ে এসেছেন। তিনিই পেনড্রাইভে ভরে গান এনেছেন। অপেক্ষারতদের ‘বসে আছি হে,’ অথবা ‘বেলা গেল’-র মতো অপেক্ষার গান শোনানো কি জেনে বুঝে? কর্মীর কথায়, “না, না। পেনড্রাইভে রবীন্দ্রসঙ্গীত যত ছিল, সবই বেজেছে। ঘটনাচক্রে গানগুলির কথা, শ্রোতাদের অপেক্ষার সঙ্গে এক হয়ে গিয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল, অপেক্ষার সময়ে গান শুনিয়ে একটু আনন্দ দেওয়া।”
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রমেন্দ্রনাথ প্রামাণিকবলেন, ‘‘স্বাস্থ্যকর্মীরা ব্যক্তিগত ভাবে এই ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছেন। সকলের মন ভাল থাকুক। নিঃসন্দেহে ভাল উদ্যোগ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy