শনিবার দিনহাটা পুরসভার হলে উদয়ন গুহ। বাইরে চলছে বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র।
ফরওয়ার্ড ব্লক ছাড়ার পরে তিনি কোন পথে যাবেন, ঠিক করবেন কোচবিহারবাসীর মনের কথা জেনে— এমনটাই ঘোষণা ছিল বিধায়ক উদয়ন গুহর। কিন্তু কোচবিহারবাসীর সেই ‘মনের কথা’ জানতে পারলেন কই! শনিবার কোচবিহারের দিনহাটায় পুরসভার এক হলে এ বিষয়ে ডাকা এক সভায় উদয়নবাবু বক্তব্য শেষ হতে না হতেই বেধে গেল ধুন্ধুমার! উপলক্ষ, সেখানে হাজির এক দল ফব-র কর্মীর ‘দিনহাটায় ফরওয়ার্ড ব্লক আছে, থাকবে’ বলে স্লোগান! যাঁরা স্লোগান দিচ্ছিলেন, তাঁদের উপরে উদয়ন-অনুগামীরা চড়াও হন বলে অভিযোগ। চড়-ঘুষি, জামাপ্যান্ট ছিঁড়ে তাড়া করা— বাদ রইল না কিছুই!
উদয়নবাবু অবশ্য দাবি করেছেন, গণ্ডগোল কিছু হয়নি। অরাজনৈতিক ভাবে ডাকা ওই সভায় এক দল স্লোগান দেওয়ায় অন্য দল বাধা দিয়েছে মাত্র। ঘটনাচক্রে এ দিন কোচবিহারেরই বক্সিরহাটে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র উদয়নবাবুকে দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আর্জি জানান।
দলের রাজ্য সম্পাদক অশোক ঘোষের নানা কাজকর্ম নিয়ে কিছু দিন ধরে নিয়মিত প্রশ্ন তোলায় দিনহাটার বিধায়ক উদয়ন ইদানীং ফব-র অন্দরে ‘বিক্ষুব্ধ’ নেতা হিসেবেই পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন। বুধবার ফব-র কোচবিহার জেলা সম্পাদক এবং দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যপদ থেকে তিনি ইস্তফা দেন। জল্পনা জোরালো হয়— উদয়ন এ বার তৃণমূলে যোগ দেবেন। যদিও উদয়ন জানান, সভা করে কোচবিহারের মানুষের রায় জেনে পরবর্তী
পদক্ষেপ করবেন।
দিনহাটার হলে উদয়নের সভায় এ দিন শ’পাঁচেকের কিছু বেশি লোক ভিড় করেন। বেলা আড়াইটেয় সভার শুরুতেই জানিয়ে দেওয়া হয়, উদয়নই এ দিন একমাত্র বক্তা। ফব সূত্রের খবর, সভায় উদয়ন প্রাক্তন দল ও বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন। তাঁর অভিযোগ, দিনহাটায় একের পর এক নির্বাচনে ফরওয়ার্ড ব্লক ভাল ফল করার পরেও দলে ও ফ্রন্টে তাঁকে ‘যোগ্য’ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছিল না। তিনি জানান, এই মুহূর্তে তাঁর সামনে দু’টি রাস্তা— এক, রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়া। দুই, বিকল্প রাস্তা নেওয়া। যাঁরা তাঁকে ভরসা করেন, তাঁরা সঙ্গে আসতে পারেন। আপাতত দু’দিন ( সোমবার পর্যন্ত) তিনি দিনহাটায় থাকবেন। তার মধ্যে অনুগামীদের সিদ্ধান্ত নিতে বলেন।
ফব সূত্রের খবর, গোলমাল শুরু হয় তখনই। এক দল ফব কর্মী দাবি করতে থাকেন, উদয়নবাবু সরাসরি তৃণমূলে যোগ দেওয়ার কথা বলেছেন ওই সভায়। আর এক পক্ষের দাবি, উদয়নবাবু নিজে না বললেও তাঁর ঘনিষ্ঠ কয়েক জন নেতা প্রকাশ্যেই তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করতেই গোলমাল বাধে।
এ সময় উঠে দাঁড়ান দিনহাটার পরিচিত ফব কর্মী মহাবুবুল হক। তিনি বলেন, ‘‘উনি তো বলেছিলেন, কোচবিহারবাসীর মত শুনবেন। কই, আমাদের তো কিছু বলতেই দেওয়া হল না।’’ তাঁর সঙ্গে গলা মেলান আরও কয়েক জন। মহাবুবুলের অভিযোগ, ‘ফরওয়ার্ড ব্লক জিন্দাবাদ, দিনহাটায় ফরওয়ার্ড ব্লক থাকছে, থাকবে’ বলে স্লোগান দিতে দিতে তাঁরা যখন হল ছেড়ে বেরোচ্ছেন তখন হামলা করেন কয়েক জন উদয়ন-অনুগামী। এলোপাথাড়ি মারতে মারতে তাড়া করা হয় তাঁকে। প্রায় এক কিলোমিটার দৌড়ে থানায় আশ্রয় নেওয়ায় তখনকার মতো হামলাকারীরা নিরস্ত হলেও উদয়ন-ঘনিষ্ঠ কয়েক জন পরে তাঁকে মোবাইলে খুনের হুমকি দিয়েছে। মহাবুবুলের কথায়, ‘‘এখন লুকিয়ে আছি। প্রকাশ্যে এলেই আমাকে খুন করা হবে বলে হুমকি দিয়েছে ওরা। তবে ফরওয়ার্ড ব্লক আমরা ছাড়ছি না।”
উদয়নবাবু অবশ্য তৃণমূলে যোগ দেওয়ার কথা সরাসরি উড়িয়ে দাবি করেন, ‘‘ওই সভায় আমার মুখ থেকে একবারও তৃণমূল শব্দটি বের হয়নি।’’ একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “আমি কাউকে ফরওয়ার্ড ব্লক ছাড়তে বলিনি। আমি আমার কথা বলেছি।’’ যদিও জেলার বিধায়ক তথা ফব-র রাজ্য কমিটির সদস্য অক্ষয় ঠাকুর বলেন, “উদয়নবাবু নিজেই লোকের মত জানতে ওই সভা ডাকেন। সেখানে ফরওয়ার্ড ব্লকের নামে ধ্বনি তোলায় হামলা করাটা একেবারে অনুচিত কাজ। মানুষকে ডেকে নিয়ে গিয়ে এমনটা না করলেই পারতেন।”
এ দিন বক্সিরহাটে ডিওয়াইএফের সভায় যোগ দিতে গিয়ে উদয়ন-প্রসঙ্গ তুলে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “মানুষ চান, আপনি লড়াইয়ের ময়দানে থাকুন। আত্মসমর্পণ করবেন না।” সূর্যবাবুর সংযোজন, “উনি (উদয়ন) আমার দীর্ঘদিনের সহকর্মী। পার্টি (ফব) আমাদের সঙ্গেই আছে। আপনাদের মাধ্যমে আবেদন জানাই, যাবেন না। ওই পথ বিশ্বাসঘাতকতার।” উদয়নবাবুর পাল্টা জবাব, “যখন বামফ্রন্ট সরকারে ছিল, সে সময় তো সূর্যবাবু শরিকদের লড়াইয়ে থাকার কথা বলেননি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy