Advertisement
E-Paper

দুষ্কৃতী তাণ্ডবে লন্ডভন্ড, ভেস্তে গেল সেই বিয়ে

বড় হাঁড়িতে রান্না চেপেছিল। সকাল থেকেই উঠোনে শামিয়ানা বাঁধা। আত্মীয়, পাড়া-প্রতিবেশীদের ফোন করে আরও এক দফা নেমন্তন্ন সারা চলছিল। তারই মধ্যে দুষ্কৃতী হামলায় লন্ডভন্ড হয়ে যায় বিয়েবাড়ির পরিবেশ। বাড়ির লোকেদের বেধড়ক মার দেওয়া হয়, ঘরে লুঠপাট চলে।

মহেন্দ্র জেনা

শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:২১

বড় হাঁড়িতে রান্না চেপেছিল।

সকাল থেকেই উঠোনে শামিয়ানা বাঁধা। আত্মীয়, পাড়া-প্রতিবেশীদের ফোন করে আরও এক দফা নেমন্তন্ন সারা চলছিল। তারই মধ্যে দুষ্কৃতী হামলায় লন্ডভন্ড হয়ে যায় বিয়েবাড়ির পরিবেশ। বাড়ির লোকেদের বেধড়ক মার দেওয়া হয়, ঘরে লুঠপাট চলে।

সোমবার দুপুরে ওই হামলার পরেই গ্রাম থেকে পালিয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন বাড়ির ছোট ছেলে শেখ সুজল। মঙ্গলবারই যাঁর বরযাত্রী নিয়ে পৌঁছনোর কথা ছিল ইলামবাজারের মেটেকোনা গ্রামে। কিন্তু হামলার জেরে বিয়ে ভেস্তে গিয়েছে মাখড়ার দক্ষিণপাড়ার ওই যুবকের। এক দিকে পুলিশের তুলে নিয়ে যাওয়ার ভয়। অন্য দিকে ফের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা। আতঙ্কের এই পরিবেশে বিয়ে আপাতত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দু’পক্ষের পরিবার।

মঙ্গলবার ঘরের উঠোনে ভাঙা চেয়ারে বসে বিলাপ করছিলেন পাত্রের বাবা শেখ আজহার আলি। পিছনে চিলতে বারান্দায় বসে ছিলেন বাড়ির মেয়েরা। চোখমুখ অন্ধকার। ক্ষোভ চাপতে না পেরে আজহার আলি বলে উঠলেন, “গত কয়েক মাস ধরে খেটেখুটে কত কী জোগাড় করেছিলাম। টাকাপয়সা, সোনাদানা সব কিছু লুঠ করে নিল তৃণমূলের গুন্ডারা! বিয়ের জন্য বাজার করে আনা মশলাপাতি অবধি ছাড়েনি। দূর থেকে আসা আত্মীয়েরা ভয়ে ফিরে গিয়েছেন। গ্রামের আত্মীয়, প্রতিবেশী, বন্ধুরাও অনেকে গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছেন। কী করে বিয়ে হবে, বলুন তো!”

সোমবার বিকেল থেকেই সমানে কেঁদেছেন আজহারের পুত্রবধূ আঞ্জু মানোয়ারা বিবি। হামলার পরেই প্রাণ বাঁচাতে ঘর ছেড়ে পালিয়েছিলেন তাঁর স্বামী শেখ উজ্জ্বল। অজানা আশঙ্কায় গোটা রাত চোখের পাতা এক করতে পারেননি আঞ্জু। এ দিন দুপুরেই অবশ্য উজ্জ্বল বাড়ি ফিরেছেন। কিন্তু সুজল ফিরতে পারেননি। বছর তিনেকের মেয়ে শালমাকে কোলে নিয়ে আঞ্জু বলেন, “সব তৈরি হয়ে যাওয়ার পরেও ছেলেটার বিয়ে এ ভাবে বাতিল হয়ে যাবে, ভাবতে পারিনি।” পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে আপাতত ক’টা দিন চুনপলাশিতে বাপের বাড়িতে কাটিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। তাতে শ্বশুরমশাইও ঠিক করে ফেলেছেন, বৌমাকে দিয়ে আসবেন।

হামলার সময়ে প্রাণ বাঁচাতে দেড় ঘণ্টা দূরের একটি পুকুরপাড়ের ঝোপে লুকিয়ে ছিলেন আজহারের পিসতুতো বোন জরিনা বিবি। তিনি বলেন, “বিয়ের জন্য আসা আমাদের মতো ৩০-৩৫ জন মহিলার প্রত্যেকটা মিনিট আতঙ্কের মধ্যে কেটেছে।” রাতেই ফোন করে কনের বাবাকে সমস্ত ঘটনা জানিয়েছিলেন আজহার। তাঁর কথায়, “ওঁদের কাছে ক’টা দিন সময় চেয়েছি। আপাতত পরিবারটাকে কোনও রকমে দাঁড় করাই। তার পরে না হয় ছোট ছেলের বিয়ে হবে।” বরের বাড়ির প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে মেটেকোনার ওই পরিবারটিও। মেয়ের বিয়ের আচমকা ভেস্তে যাওয়ায় তাঁদের পরিবারেও বিষাদের ছায়া।

এই ছায়া কবে সরবে, তার উত্তর এখনও অজানা।

mahendra jena makhra tousif sekh sujol latest news online news
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy