Advertisement
০৪ মে ২০২৪
Vande Bharat Express

মঙ্গলবার কোথায় হামলা, ধন্দ রইল ২৪ ঘণ্টা পরেও

রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে ঢিল ছোড়ার ঘটনার কথা তুলেছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।

ট্রেনটির নিরাপত্তায় ইতিমধ্যে নানা রকম ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে রেল পুলিশ।

ট্রেনটির নিরাপত্তায় ইতিমধ্যে নানা রকম ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে রেল পুলিশ। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০২৩ ০৭:২৬
Share: Save:

বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের উপরে মঙ্গলবার কোথায়, কখন হামলা হয়েছে তা নিয়ে ধন্দ কাটল না বুধবারেও। রেল পুলিশ সুপার (উত্তরবঙ্গ) এস সেলভামুরুগন এ দিন বলেন, ‘‘মঙ্গলবার এনজেপি ঢোকার মুখে বন্দে ভারতে পাথর ছোড়ার কথা বলা হলেও, ঠিক কোন জায়গায় ঘটনাটি ঘটে তা এখনও জানা যায়নি।’’ তবে রাজ্য রেল পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, মঙ্গলবার দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটে ট্রেনটিকে তাক করে পাথর ছোড়া হয় বিহারের কিসানগঞ্জ থানার অন্তর্গত মাগুরজান এলাকায়। যদিও কী ভাবে তা জানা গেল, স্পষ্ট নয়। উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর সংলগ্ন আলুয়াবাড়ি রোড এবং ধূলাবাড়ি স্টেশনের মাঝে, ট্রেনের ‘এক্সটার্নাল’ ক্যামেরা থেকে পাওয়া কিছু ছবিতে ‘সন্দেহজনক’ চার জনকে দেখা গিয়েছে বলেও দাবি তদন্তকারীদের একাংশের। তবে তারা কারা এবং তারাই পাথর ছুড়েছিল কি না, তা নিয়ে তদন্ত চলছে। পাল্লা দিয়ে চলেছে রাজনৈতিক চাপান-উতোর।

ট্রেনটির নিরাপত্তায় ইতিমধ্যে নানা রকম ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে রেল পুলিশ। রেল লাইন বরাবর ‘স্পর্শকাতর’ এলাকায় নজরদারি বাড়ানো, অফিসারদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ করে ট্রেনের গতিবিধি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকা, ট্রেনটির যাত্রাপথে কোন কোন এলাকায় আগে ইট ছোড়ার নজির রয়েছে তা জেনে, সেখানে প্রচার থেকে শুরু করে ব্যবস্থা গ্রহণের কাজ চালু হয়েছে।

ট্রেনের সুরক্ষায় রেল পুলিশ যে ‘হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপ’ তৈরি করেছে তাতে রয়েছেন ও প্রতিটি স্টেশনের রেল পুলিশ থানার আইসি, ওসি-রা। বন্দে ভারত প্রতিটি স্টেশন পার করলে সে গ্রুপে ট্রেনের সেই মুহূর্তের অবস্থান ও পরিস্থিতির কথা সঙ্গে সঙ্গে জানাতে হবে হোয়াট্সঅ্যাপে, পাঠাতে হবে ছবি, ভিডিয়ো। আরপিএফের পাশাপাশি, রেল পুলিশও থাকবে ট্রেনটিতে। সূত্রের দাবি, ট্রেনটির উপরে ঢিল-পাথর ছোড়া ঠেকাতে সিভিক ভলান্টিয়ারদের কাছ থেকে তথ্য জোগাড়ের পাশাপাশি তাঁদের প্রচারের কাজে ব্যবহারের ভাবনাও রয়েছে।

তবে যাত্রীদের তরফে অভিযোগ তোলা হয়েছে নিরাপত্তা নিয়ে। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সব্যসাচী দে বলেন, ‘‘ঘটনায় যাত্রীরা আতঙ্কে। তদন্ত চলছে।’’

যদিও সময় গেলেও তদন্ত তেমন এগোচ্ছে না বলেই অভিযোগ। এ দিকে, বিজেপি নেতারা এক বার এনআইএ, এক বার সিআইডি-কে দিয়ে তদন্ত চাইছেন। কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকার এ দিন বাঁকুড়ায় বলেন, ‘‘বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে দ্বিতীয় বার পরিকল্পিত ভাবে হামলা হল, অথচ রাজ্য সরকার বা মুখ্যমন্ত্রীর কোনও বক্তব্য নেই। কেন্দ্রের দ্বারা রাজ্যের কোনও উন্নয়ন কি রাজ্যের প্রশাসন বরদাস্ত করতে পারছে না? রাজ্যের প্রশাসনের কি খারাপ লাগছে? এটা পরিষ্কার ভাবে রাজ্যবাসীকে রাজ্য সরকার জানিয়ে দিক। অথবা মুখ্যমন্ত্রী ওই ঘটনায় সিআইডি তদন্তের ঘোষণা করুন।’’ তাঁর সংযোজন: ‘‘সিবিআই তদন্তের দরকার নেই। রাজ্য পুলিশ যথেষ্ট দক্ষ। স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মামলা করুক। ইতিমধ্যেই দেরি হয়ে গিয়েছে। দ্রুত এটা করা হোক।’’

রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের সঙ্গে এ দিনই দেখা করতে গিয়ে বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে ঢিল ছোড়ার ঘটনার কথাও তুলেছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। রাজভবন থেকে বেরিয়ে বন্দে ভারতের ঘটনায় কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্তের কথাই বলেছেন সুকান্ত। কারণ তাঁর মতে, রাজ্য পুলিশের তদন্তের ‘বিশ্বাসযোগ্যতা’ নেই। শুভেন্দু আগেই দাবি করেছেন, এনআইএ-তদন্ত। সুভাষ সরকার চেয়েছেন সিআইডি। এই দ্বিমতের প্রশ্নে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত পরে বলেছেন, ‘‘সিবিআই না সিআইডি, তা নিয়ে আমরা ভাবিত নই। বন্দে ভারতের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবিত। ঢিল মারা বন্ধ হোক।’’

রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা ফিরহাদ হাকিমও বলেছেন, ‘‘বন্দে ভারত ট্রেনের উপরে যা হয়েছে, তা অত্যন্ত অন্যায়, নিন্দনীয়। জাতীয় সম্পত্তি নষ্ট করা, ইট মারা আমরা সমর্থন করি না। যারা করেছে, তাঁদের খুঁজে বার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া উচিত। এরা দুষ্কৃতী। এদের শাস্তি দিলে আর কেউ সাহস পাবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Vande Bharat Express attack West Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE