Advertisement
E-Paper

আনাজের দাম আগুন, মাথায় হাত মধ্যবিত্তের

দুর্গাপুজোর আগেই ঝড়বৃষ্টিতে আনাজ চাষের ক্ষতি হয়েছিল প্রায় প্রতিটি জেলায়।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৭ ০২:৪৪
ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

বৃষ্টির জলই ‘আগুন’ ধরিয়ে দিয়েছে আনাজের বাজারে! কবে তা নিভবে, হলফ করে বলতে পারছেন না কেউ।

দুর্গাপুজোর আগেই ঝড়বৃষ্টিতে আনাজ চাষের ক্ষতি হয়েছিল প্রায় প্রতিটি জেলায়। পুজোর পরে সেই ক্ষতির হাত থেকে খানিকটা রেহাই পাওয়া যাবে বলে ভেবেছিলেন আনাজ চাষি থেকে সাধারণ মানুষ। কিন্তু হাওড়া, হুগলি, বর্ধমান, দুই মেদিনীপুর এবং উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা— সর্বত্র একই ছবি। টানা বৃষ্টিতে বিপুল ক্ষতির মুখে পড়ে গিয়েছেন আনাজ চাষিরা। ১০ টাকা জোড়া কাঁচকলা কিংবা ২০-২৫ টাকা কেজির পেঁপেও অমিল। কারণ, কাঁচকলা ও পেঁপের গাছও বৃষ্টির জলের ঠেলায় শেকড়ের আগল ছেড়ে মুখ থুবড়ে পড়েছে। জলে পচে গিয়েছে কলমি, নটে, পালং ও লাল শাক। ফলে আনাজের দাম ক্রমেই ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। পটল, বেগুন, ভেন্ডি, টোম্যাটোর দাম গড়ে ৪০ টাকা কেজি থেকে ৮০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। নাগালের বাইরে চলে গিয়েছে ফুলকপি, বাঁধাকপি।

পূর্ব মেদিনীপুর জেলা কৃষি দফতরের উপ-অধিকর্তা সুশান্ত মহাপাত্র বলেন, ‘‘জুলাই থেকে বৃষ্টি চলছে। মাঝে অতিবৃষ্টির কারণে জেলার প্রতিটি ব্লকেই আনাজ চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বহু জমিতে আনাজ পচে গিয়েছে।’’ একই বক্তব্য হুগলি জেলার উদ্যান পালন দফতরের অধিকর্তা মানসরঞ্জন ভট্টাচার্যের। তাঁর কথায়, ‘‘বন্যার কারণে পুজোর আগে আনাজ চাষে ক্ষতি হয়েছিল। তার পরে ফের অতিবৃষ্টির জেরে জেলার ২৫-৩০ শতাংশ আনাজ নষ্ট হয়ে গিয়েছে।’’ আধিকারিকদের এ কথা মেনে নিয়ে কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, বৃষ্টির জলই ক্ষতি করে দিয়েছে আনাজ চাষের। ফলে জোগানে টান পড়ায় দাম বেড়েছে। তাঁর দাবি, জল নামতে শুরু করেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে কিছু দিন সময় লাগবে।

বৃষ্টির জল ‘ভিলেন’ হয়ে শুধু এ রাজ্যেই আনাজ চাষের ক্ষতি করেনি। কর্নাটক, ঝাড়খণ্ড, বিহার, ওড়িশা-সহ অন্যান্য রাজ্যেও অতিবৃষ্টির কারণে আনাজ পচে গিয়েছে। ফলে, এই সময়ে অন্য রাজ্য থেকে যে
সমস্ত আনাজ বাংলায় আসে, সেগুলিও কম আসছে।

রাজ্যের অন্যতম বড় আনাজের হাট হুগলির শেওড়াফুলিতেও রীতিমতো আনাজের আকাল। একই অবস্থা পাঁশকুড়ার পাইকারি আনাজ বাজারের। এমন অবস্থা প্রবীণ ব্যবসায়ীরাও বহু কাল দেখেননি। বৃষ্টির কারণে নাসিক থেকে
পেঁয়াজও কম আসছে। বেঙ্গালুরুর টোম্যাটোও বাড়ন্ত।

আনাজের আকাল নিয়ে সরকারের কাছে যে রিপোর্ট এসেছে, তাতে বলা হয়েছে, হুগলির চারটি মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকায় চাষের প্রভূত ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে হাওড়া ও বর্ধমানেও। কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে বেগুন, ফুলকপি, পটল, করলা, মুলো, পালং শাক ও নটে শাকের মতো আনাজের অন্যতম জোগানদার পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল। ওই এলাকাগুলিতেও একই অবস্থা। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়, ক্যানিং, জয়নগর, কুলতলি, মন্দিরবাজার, রায়দিঘি ও ডায়মন্ড হারবারেও প্রচুর আনাজ চাষ হয়। বৃষ্টিতে চাষের ক্ষতি হয়েছে ওই সব এলাকাতেও। এখনও জলের তলায় ডুবে রয়েছে হাজার হাজার একর জমি। একই অবস্থা উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গা, বনগাঁ, গাইঘাটা, বাগদা, হাবরারও। মাঠে আনাজ নেই। থাকলেও তা খাওয়ার অযোগ্য। মুর্শিদাবাদের বহরমপুর, বেলডাঙা, লালগোলাতেও একই অবস্থা। আফশোসের সুরে ভাঙড়ের চাষি মহম্মদ ইউসুফ বলেন, ‘‘বৃষ্টির জলে এ বছর কপাল পুড়েছে আমাদের মতো আনাজ চাষিদের।’’ নদিয়ার মদনপুরের কৃষক নারায়ণ ঘোষের কথায়, ‘‘আমি বিশেষ ধরনের
সাড়ে চার হাজার ফুলকপি লাগিয়েছিলাম। বৃষ্টিতে ইতিমধ্যেই এক হাজার গাছ পচে গিয়েছে। বাকিগুলির ভবিষ্যৎ জানি না।’’

Vegetable Vegetable Market
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy