ফিরে-দেখা: সাল ১৯৭৪। রাজাবাজার ট্রাম ডিপোয় তৎকালীন পরিবহণমন্ত্রী জ্ঞানসিংহ সোহনপাল (বাঁ দিকে)। ফাইল চিত্র
টানা দশ বারের কংগ্রেস বিধায়ক, রেলশহরের ‘চাচা’ জ্ঞানসিংহ সোহনপাল (৯৩) প্রয়াত হলেন। মঙ্গলবার বিকেল চারটে নাগাদ এসএসকেএমে মৃত্যু হয় তাঁর। আইটিইউয়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রজত চৌধুরী জানান, সেপসিস, রেনাল ফেলিওর এবং মাল্টি অরগ্যান ফেলিওরেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর। এ দিন সকালে মেডিক্যাল বোর্ড গড়ে ডায়ালিসিসের পরিকল্পনাও হয়েছিল। তবে সে সুযোগ আর পাওয়া যায়নি।
১৯৬২-তে প্রথম বিধানসভায় গিয়েছিলেন জ্ঞানসিংহ। অজয় মুখোপাধ্যায় ও সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের মন্ত্রিসভায় কারা, পরিবহণের মতো দফতর সামলেছেন তিনি। ১৯৮২ থেকে ২০১১ পর্যন্ত টানা খড়্গপুর সদরের বিধায়ক ছিলেন। বহু বার প্রোটেম স্পিকারের দায়িত্বও সামলেছেন। ২০১৬ সালে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের কাছে হার মেনে থামে তাঁর বিজয়রথ। তারপর সক্রিয় রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন।
জ্ঞানসিংহের মৃত্যুতে সমবেদনা প্রকাশ করা হয়েছে রাজ্য সরকারের তরফে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইট করে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ওঁর শেষকৃত্য হবে। চাচার মৃত্যুতে সংসদীয় রাজনীতির ক্ষতি হল বলে মন্তব্য করেছেন পশ্চিম মেদিনীপুরেরই দুই নেতা মানস ভুঁইয়া এবং সূর্যকান্ত মিশ্র। সূর্যকান্তবাবুর কথায়, ‘‘রাজনীতিতে এমন নিরহঙ্কার মানুষ খুব কম দেখা যায়।’’
আরও পড়ুন: সাংবিধানিক জালে বাধ্য হয়ে জিএসটি
এ দিন বিকেলে স্বজন হারানোর খবর পৌঁছয় খড়্গপুরে। সাউথসাইড রেল বাংলোয় চাচার বাসভবনে ভিড় জমে। তৃণমূলের পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার, কংগ্রেসের শহর সভাপতি অমল দাস, মহিলা কংগ্রেসের জেলা নেত্রী হেমা চৌবে, সিপিআই নেতা অসিত পাল, বিজেপি নেত্রী অনুশ্রী বেহেরা থেকে অগুনতি সাধারণ মানুষ— সকলের মুখেই এক কথা, ‘‘অভিভাবককে হারালাম। বড্ড ক্ষতি হয়ে গেল শহরটার।’’
১৯২৫ সালের ১১জানুয়ারি খড়্গপুরেই জন্ম জ্ঞানসিংহের। আদতে লুধিয়ানার বাসিন্দা জ্ঞানসিংহের বাবা বিষেণসিংহ সোহনপাল কর্মসূত্রে এই শহরে এসেছিলেন। কলেজ জীবন পেরিয়ে কিছু দিন সাংবাদিকতা করেছিলেন চাচা। তারপর রাজনীতিতে হাতেখড়ি। অকৃতদার মানুষটি ভাই সন্তোষসিংহ সোহনপালের বৌমা ধরমজিৎ কৌর সোহনপালের পরিবারের সঙ্গে থাকতেন। নাতি হরমিৎ, হরমিন্দর, নাতনি সরবজিৎ ও হরমিন্দরের স্ত্রী সুনীতা সকলে শোকস্তব্ধ।
আজ, বুধবার চাচার মরদেহ বিধানসভায় আনা হবে। তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে বিধানসভার অধিবেশন এক ঘণ্টার পরেই শেষ করে দেওয়া হবে। পারিবারিক সূত্রে খবর, বিকেলে খড়্গপুরে পৌঁছবে চাচার দেহ। প্রথমে বাসভবনে কিছুক্ষণ দেহ শায়িত থাকবে, তারপর নিয়ে যাওয়া হবে গোলবাজারে কংগ্রেস কার্যালয়ে। সেখানেই রাতে থাকবে দেহ। বৃহস্পতিবার গুরুদ্বার ঘুরে মন্দিরতলা শ্মশানে হবে অন্ত্যেষ্টি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy