নীলবাড়ি দখলের লক্ষ্যে রাজ্যে ‘হিন্দুত্বের হাওয়া’ তৈরি করতে আসরে নামছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। অযোধ্যায় ইতিমধ্যেই রামমন্দির নির্মাণ শুরু হয়েছে। আর তার জন্য দেশজুড়ে অর্থসংগ্রহ অভিযানে বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে বাংলা। আগামী জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে চলবে সেই অভিযান। পরিষদের লক্ষ্য, বাংলার সর্বত্র বাড়ি-বাড়ি যাবেন সংগঠনের কর্মীরা। কে কোন রাজনৈতিক দলের সমর্থক, তার উপর কোনও গুরুত্ব না দিয়ে সব বাড়িতেই যাওয়া হবে। প্রসঙ্গত, গোটা দেশেই পরিষদ এই অভিযান চালাবে। কিন্তু সংগঠন সূত্রের খবর, বিধানসভা ভোটের দিকে লক্ষ্য রেখে বাংলায় এই অভিযানকে অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। পরিষদের নেতারা যদিও দাবি করছেন, এই অভিযানের সঙ্গে সরাসরি নির্বাচনের কোনও যোগ নেই। তবে পাশাপাশিই তাঁদের অনেকে এটাও মেনে নিচ্ছেন যে, এর ফলে ‘নরেন্দ্র মোদী সরকার হিন্দু সমাজের কথা রেখেছেন’— এমন বার্তা দেওয়া যাবে। আর তাতে ভোটবাজারে ‘লাভবান’ হবে বিজেপি।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বিতর্কিত জমি হিন্দুদের হাতে যাওয়ার পরে থেকেই বিজেপি স্লোগান তুলেছিল— ‘মোদী হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়’। তার পরে অযোধ্যায় রাম মন্দিরের ভূমিপুজোয় আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতের উপস্থিতিতে পৌরোহিত্য করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। যার মাধ্যমে সঙ্ঘ পরিবার এই বার্তাই দিতে চেয়েছিল যে, মোদীর জন্যই সবকিছু সম্ভব হচ্ছে। ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর দেওয়া সুপ্রিম কোর্টের রায় বা গত ৫ অগস্ট অযোধ্যায় হওয়া ভূমিপুজোর স্মৃতি বিধানসভা নির্বাচনের আগে বঙ্গবাসীর মধ্যে উস্কে দেওয়ার কাজটাই করবে পরিষদ। লক্ষ্য একটাই— হিন্দু ভোট এককাট্টা করা। এমনিতেই বাংলার নীলবাড়ি দখলের লড়াইয়ে নামার আগে সলতে পাকানোর সময় রাজ্য বিজেপির নেতারা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ‘মুসলিম তোষণ’-এর অভিযোগ ধারাবাহিক ভাবে তুলে থাকেন। তারও লক্ষ্য একটাই— বিধানসভা ভোটের আগে ভোটের মেরুকরণ। সেই কাজটিই আরও সুচারু এবং খোলামেলা ভাবে করতে নামছে পরিষদ।
পরিষদ সূত্রের খবর, এই কর্মসূচির নাম দেওয়া হচ্ছে —‘নিধিসংগ্রহ মহাভিযান যোজনা’। আগামী ১৫ জানুয়ারি মকর সংক্রান্তির দিন শুরু হবে অভিযান। চলবে ২৭ ফেব্রুয়ারি মাঘ পূর্ণিমার দিন পর্যন্ত। ওই পুরো সময় ধরেই গোটা দেশে অভিযান হবে। তবে বাংলার এক পরিষদ নেতা জানিয়েছেন, এই রাজ্যে অত বেশি সময় নেওয়া হবে না। বাংলায় এক মাসের মধ্যেই অভিযান শেষ করা ফেলার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। এখনও পর্যন্ত যা ঠিক হয়েছে, তাতে ১৬ ফেব্রুয়ারি সরস্বতী পুজোর মধ্যেই রাজ্যের সর্বত্র অভিযান শেষ করে ফেলবেন পরিষদ সদস্যরা। রাজ্যে কী ভাবে কাজ হবে, তার বিস্তারিত পরিকল্পনা নভেম্বর মাসেই চূড়ান্ত করবে পরিষদ। ২৮ নভেম্বর কলকাতায় আসছেন পরিষদের সর্বভারতীয় সংগঠন সম্পাদক বিনায়করাও দেশপাণ্ডে। তাঁর উপস্থিতিতেই ঠিক হবে বঙ্গে অভিযানের রূপরেখা।