Advertisement
E-Paper

টাকা দিয়েও বাড়ি মেলেনি, ঠাঁই শিবিরে

ঝড়-বৃষ্টিতে যাঁরা গৃহহীন, কাজলা রবীন্দ্র শিক্ষা নিকেতন এখন তাঁদের আস্তানা। অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভার ১ নং ওয়ার্ডে এই স্কুলের ত্রাণশিবিরে আটক শতাধিক পরিবারের ৩৭২জন। তাঁদেরই একজন ললিতা মল্লিক, অশোকনগর পুরসভা ১ ওয়ার্ডের বনবনিয়ার বাসিন্দা।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৫ ০১:৫৫
ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত বহু ঘর। —নিজস্ব চিত্র।

ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত বহু ঘর। —নিজস্ব চিত্র।

ঝড়-বৃষ্টিতে যাঁরা গৃহহীন, কাজলা রবীন্দ্র শিক্ষা নিকেতন এখন তাঁদের আস্তানা। অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভার ১ নং ওয়ার্ডে এই স্কুলের ত্রাণশিবিরে আটক শতাধিক পরিবারের ৩৭২জন।

তাঁদেরই একজন ললিতা মল্লিক, অশোকনগর পুরসভা ১ ওয়ার্ডের বনবনিয়ার বাসিন্দা। বললেন, ‘‘সরকারি প্রকল্পে বাড়ি পাওয়ার আশায় ২০০৯ সালে পুরসভায় ১৬ হাজার টাকা জমা দিয়েছিলাম। বাড়ি পাইনি, টাকাও ফেরত পাইনি।’’

কুচিদিনপাড়ার বৃদ্ধা অঞ্জলি মজুমদারও টাকা জমা দিয়েছিলেন বাড়ি পাওয়ার আশায়। মেয়ে সাবিত্রী বললেন, ‘‘মায়ের সঞ্চয়ের ১৬ হাজার টাকা দেওয়ার পর আর নতুন করে বাড়ি করার টাকা জড়ো করার সামর্থ নেই।’’ সাবিত্রী সেলাইয়ের কাজ করেন, তাঁর স্বামী লিটন জোগাড়ে। বৃদ্ধা মাকে নিয়ে তিনজনেই শিবিরে। কাজলা গ্রামের সরস্বতী মজুমদারও ১৬ হাজার টাকা দিয়ে বাড়ি পাননি।

কী করে বাড়ির আশায় সর্বস্ব দিয়ে, এখন গৃহহীন এই দরিদ্র পরিবারগুলি? পুরপ্রশাসনের বক্তব্য, দরিদ্রের জন্য আবাসন এবং বস্তি উন্নয়নের প্রকল্পে (ইন্টিগ্রেটেড হাউজিং অ্যান্ড স্লাম ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট) শহরবাসী গরিবের বাড়ি তৈরির জন্য সরকার ৮৪ হাজার টাকা দিত। বাকি ১৬ হাজার টাকা দিত উপভোক্তা। প্রকল্পটি বন্ধ হয়েছে বছর পাঁচেক আগে। কিন্তু দরিদ্র পরিবারকে নিঃস্ব করে দিয়ে গিয়েছে। অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভার চেয়ারম্যান তৃণমূলের প্রবোধ সরকার বলেন, ‘‘বস্তি উন্নয়নের প্রকল্পে মোট ৮৪৮টা বাড়ির টাকা মিলেছিল। তৎকালীন বাম পুরবোর্ড ১২৫০জনের কাছ থেকে ১৬ হাজার টাকা করে নেয়। কিন্তু বাকি ৪০২জন টাকা ফেরত পায়নি, বাড়িও পায়নি।’’ তাঁর দাবি, বিগত তৃণমূল পুরবোর্ড ২০০জনকে ১৬ হাজার টাকা করে ফেরত দিয়েছে। বাকিদের টাকা ফেরত দিচ্ছে বর্তমান পুরবোর্ড। তৎকালীন বাম পুর চেয়ারম্যান শর্মিষ্ঠা দত্তের দাবি, ‘‘বাকি ৪০২জনের বাড়ির টাকাও আসার কথা ছিল। শেষ অবধি আসেনি।’’ তাঁর বক্তব্য, ওই বকেয়া টাকা পুরসভার তহবিলেই রয়েছে। ফেরত দিতে অসুবিধে নেই।

ত্রাণ শিবিরই এখন ভরসা সরস্বতী মজুমদারের।

তবে ত্রাণশিবিরে আশ্রিতরা জানালেন, বিপিএল হয়েও কেউ কোনও আবাসন প্রকল্পে বাড়ি পাননি। সকলেই ১ নং ওয়ার্ড কিংবা বাঁশপুল পঞ্চায়েতে বাস করেন কাঁচা বাড়িতে।

গরিবের জন্য আবাসন প্রকল্প থাকতেও কেন গ্রামবাসীর এই দশা? বাঁশপুল পঞ্চায়েতের পূর্ব পুঁটিয়া গ্রামের খেতমজুর হিমাংশু নমো, প্রৌঢ়া গৃহবধূ দীপু মজুমদার বললেন, ‘‘অনেক বার পঞ্চায়েত থেকে নাম নিয়ে গিয়েছে। কিছুই হয়নি।’’

জেলা সভাধিপতি রহিমা বিবি জানালেন, ২০১৪-১৫ সালে ২৮,৩৪৭টা বাড়ির টাকা মিলেছিল ইন্দিরা আবাস প্রকল্পে। তার মধ্যে ১৭ হাজার ১১৩টি বাড়ির শেষ হয়েছে। বাকিগুলোর কাজ চলছে। ২০১৫-১৬ আর্থিক বর্ষের জন্য ২৮,৯০৬টি বাড়ির টাকা এসেছে। নামের তালিকা তৈরি। ব্লকে শীঘ্রই টাকা পৌঁছবে।

রহিমা জানান, গীতাঞ্জলি প্রকল্পে গ্রাম-শহর মিলিয়ে গত বছর ৬,৫৬২ বাড়ির কাজ শেষ হয়েছে। এ বছর ৬৭০০টি বাড়ির টাকা মিলেছে। ব্লকস্তরে টাকা পাঠানো হচ্ছে। প্রবোধ সরকার জানান, গীতাঞ্জলি প্রকল্পে এ বছর ১৩৩টি বাড়ি করছে পুরসভা।

কিন্তু জেলার গোটা চিত্রের দিকে তাকালে বোঝা যায়, যদি বা দুর্নীতি, দীর্ঘসূত্রিতা বাদ দিয়ে প্রকল্পের কাজ এগোয়, তা হলেও প্রয়োজন মিটবে অতি সামান্যই। ২০১১ সালের জনগণনা বলছে, উত্তর ২৪ পরগনার পুরএলাকায় মোট ১২ লক্ষ ৯২ হাজার বসতবাড়ির অর্ধেকেরও কম পাকা বাড়ি। প্রায় ৯২ হাজার বাড়ির দেওয়াল তৈরি স্রেফ বাঁশের কঞ্চি, খড়, ঘাস জাতীয় উপাদানে। চাল টিন কিংবা টালির। আরও ২২ হাজার বাড়ি মাটির দেওয়াল, টালির চাল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অন্তত হাজার পাঁচেক ‘বাড়ি’ তৈরি স্রেফ পলিথিনে।

গ্রামীণ বাড়ির অবস্থাও তথৈবচ। ৯ লক্ষ ৭৯ হাজার বাড়ির মধ্যে সাড়ে চার লক্ষ পাকা বাড়ি। মাটির দেওয়াল রয়েছে ২ লক্ষ ১৭ হাজার বাড়ির। বাঁশ, ঘাস-খড়ের দেওয়াল আরও ২ লক্ষ বাড়ির। ছাদ বলতে হাত-তৈরি টালি, নইলে টিন।

অথচ ছবিটা সব রাজ্যে এমন নয়। পরিবেশবিদ মোহিত সরকার বলেন, ‘‘গ্রামে কাঁচা বাড়ি যখন সর্বভারতীয় গড়ে ৪৪.৫ শতাংশ, তখন পশ্চিমবঙ্গের গ্রামে কাঁচা বাড়ি ৬০ শতাংশ।’’ ঝড়ের মুখে মাটি-খড়-টিনের ঘর যে টিকবে না, সেটাই স্বাভাবিক। যে মানুষেরা ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন, তাঁরা শুধু দুর্যোগের শিকার নন। কাঁচা বাড়িরও শিকার।

Villagers rain water storm cloud
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy