Advertisement
০২ মে ২০২৪

মহিলা দেখলেই জাপটে ধরছে পিছলা ভূত, সন্ধে হতেই ঘরে গোটা গ্রাম

সন্ধ্যা নামতেই ভূতের আতঙ্কে ঘরে ঢুকে যাচ্ছে গোটা গ্রাম। শিশু, মহিলা-কিশোর-কিশোরীরা সিঁটিয়ে ঘরে বসে থাকছে। পুরুষেরা লাঠি, বল্লম, দা, কুড়াল হাতে গোটা গ্রাম পাহারা দিচ্ছেন। ডাঙ্গি, কোহিনূর, উত্তর মহাকালগুড়ি, শালধূরা ও ইন্দিরা কলোনি-সহ শামুকতলার প্রতিটি গ্রামের রাতের ছবি এখন এটাই।

রাজু সাহা, শামুকতলা (আলিপুরদুয়ার)
শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৬ ২৩:১৭
Share: Save:

সন্ধ্যা নামতেই ভূতের আতঙ্কে ঘরে ঢুকে যাচ্ছে গোটা গ্রাম। শিশু, মহিলা-কিশোর-কিশোরীরা সিঁটিয়ে ঘরে বসে থাকছে। পুরুষেরা লাঠি, বল্লম, দা, কুড়াল হাতে গোটা গ্রাম পাহারা দিচ্ছেন। ডাঙ্গি, কোহিনূর, উত্তর মহাকালগুড়ি, শালধূরা ও ইন্দিরা কলোনি-সহ শামুকতলার প্রতিটি গ্রামের রাতের ছবি এখন এটাই।

যে সে ভূত নয়, এ বার পিছলা ভূত দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এ গ্রাম থেকে সে গ্রাম। রাতের অন্ধকারে বাড়ির মহিলারা কোনও দরকারে ঘরের বাইরে বের হলেই তাঁদের জাপটে ধরছে পিছলা ভূত। চিৎকার শুনে বাড়ির লোক ও প্রতিবেশীরা ছুটে এসে ধরার চেষ্টা করেও বার বার ব্যর্থ হচ্ছেন। সারা গা এতটাই পিচ্ছিল যে ধরতে গেলেই পিছলে পালিয়ে যাচ্ছে পিছলা ভূত। ওই ভূতের থেকে বাঁচতে তান্ত্রিকের কাছেও ছুটছেন অনেকে। তান্ত্রিকের দেওয়া জল পড়া, তেল পড়া বাড়ির চারপাশে ছিটিয়ে দিচ্ছেন। কেউ কেউ পুজার্চনাও শুরু করে দিয়েছেন। আবার অনেকে গ্রামে পুলিশি টহলের দাবি জানাতে ছুটছেন থানায়। ভূতের আতঙ্কে গ্রামবাসীদের ঘুম ছুটেছে। সন্ধ্যা হতেই মহিলা ও বাচ্চারা ভয়ে সিঁটিয়ে ঘরে ঢুকে যাচ্ছেন। বাচ্চাদের পড়াশোনাও লাটে উঠেছে।

পিছলা ভূতের প্রথম 'দেখা মেলে' গত শনিবার কোহিনূর চা বাগান লাগোয়া ডাঙ্গি নতুন কলোনিতে। নিমাই বিশ্বাস নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে। নিমাইবাবু ভিন রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করেন। স্ত্রী অনিমাদেবী দুই সন্তান ও বৃদ্ধা শাশুড়িকে নিয়ে বাড়িতে একা থাকেন। অনিমাদেবীর বর্ণঁনায়, ‘‘রাত নটার মধ্যে খাওয়া-দাওয়া করে ঘুমিয়ে পড়ি। রাত ১১টা নাগাদ হাল্কা হতে বাইরে বেরিয়েছিলাম। অন্ধকারে যেতেই কালো কুচকুচে একটি ছায়া আমাকে জাপটে ধরে। আমি ঝটকা দিয়ে ছাড়িয়ে চিৎকার করে সেটিকে ধরে ফেলি। কিন্তু ওর শরীর এতটাই পিচ্ছিল যে কোনও ভাবে ধরে রাখতে পারিনি। প্রতিবেশীরা ছুটে আসার আগেই পালিয়ে যায় ও। এখনও সে মুহূর্তের কথা ভাবলে গায়ের রক্ত ঠান্ডা হিম হয়ে যায়।’’

আরও পড়ুন: দেশের গা ছমছমে ‘ভুতুড়ে’ জায়গা

শামুকতলা বস্তির এক বধূ রাতে কলের পাড়ে বসে বাসন মাজছিলেন। তাঁর মুখ চাপা দিয়ে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে পিছলা ভূত। ওই বধূর কথায়, ‘‘বিশাল দেহটি আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ায় প্রথমে ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। পরমুহূর্তে গায়ের জোরে নিজেকে ছাড়িয়ে ওই বিশাল দেহটা জাপটে ধরি। কিন্তু এতটাই পিচ্ছিল দেহ যে মুহূর্তে হাত পিছলে ছুটে অন্ধকারে মিশে গেল সেটা।’’ এ ছাড়াও আরও অন্তত পাঁচটি ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু লোকলজ্জায় সেগুলি প্রকাশ্যে আনছেন না তাঁরা।

এটা দুষ্টু লোকের কাজ। এই ঘটনাগুলির সঙ্গে যে ভূতপ্রেতের কোনও সম্পর্কই নেই সে ব্যাপারে গ্রামবাসীদের সচেতন করতে আসরে নেমেছে পুলিশ, গ্রাম পঞ্চায়েত ও রেওয়াজ নামে একটি সংস্থা। কোহিনূর গ্রাম পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে মাইকে প্রচার শুরু হয়েছে।

কোহিনূর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান রেশমা দাস বলেন, ‘‘মানুষের মধ্যে যে ভাবে ভূতের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সেটা বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। এটা কিছু দুষ্টু লোকের কাজ। এটা যে ভূত নয় সেটা বোঝাতে প্রচার শুরু করা হয়েছে। গায়ে তেল মেখে অপকর্ম করতে আসছে, যাতে কেউ ধরে ফেলতে না পারে। আমরা পুলিশকে বলেছি বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার জন্য।’’

শামুকতলা থানার ওসি এলপি ভুটিয়া বলেন, ‘‘আমরা কয়েকটি গ্রাম থেকে বেশ কিছু অভিযোগ পেয়েছি। তবে লিখিত আকারে কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি। তদন্ত শুরু হয়েছে। রাতের টহল বাড়ানো হয়েছে।

ওই গ্রামগুলিতে সচেতনতা বাড়ানোর কাজে নেমেছে রেওয়াজ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। ওই সংগঠনের সম্পাদক শুভাশিস তরফদার বলেন, ভূতের আতঙ্ক কমাতে গ্রামবাসীদের সচেতন করার কাজ শুরু করেছি। গ্রামবাসীরা রাতপাহারা দিচ্ছেন। পুলিশি টহল বাড়ালেই অভিযুক্তদের ধরা যাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ghost West Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE