সঙ্কটের দুই কাঁটা। একটাকে সামলে ফিরেই অন্যটায় নজর মুখ্যমন্ত্রীর। পাহাড় থেকে ফিরেই মুখ্যমন্ত্রীর সভা ভাঙড়ে। আর সেই সভা থেকে রাজ্যের শীর্ষ প্রশাসকের বার্তা, উন্নয়ন চলবে, কিন্তু কোনও অশান্তি বরদাস্ত করা হবে না। পাওয়ার গ্রিড বিরোধী আন্দোলনে কয়েক মাস আগেই উত্তাল হয়ে উঠেছিল ভাঙড়। আর রাজনৈতিক হিংসায় সদ্য দাউদাউ জ্বলেছে পাহাড়। দার্জিলিঙের সে আগুনের আঁচ আবার এখনও পুরোপুরি নেভেনি। তার মধ্যেই ভাঙড়ে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর স্পষ্ট বার্তা, সঙ্কট থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার রাজনীতি তাঁর ঘরানায় নেই। ভাঙড়ে হোক বা পাহাড়ে, নিজেই সঙ্কটের মুখোমুখি দাঁড়াবেন তিনি। বুঝিয়ে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
দক্ষিণ ২৪ পরগনাকে এ দিন নির্মল জেলা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ভাঙড়-সহ গোটা দক্ষিণ ২৪ পরগনার উন্নয়নে তৃণমূলের সরকার কী ভূমিকা নিয়েছে এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী, তার খতিয়ানও এ দিন ফের তুলে ধরেছেন তিনি। ভাঙড়ে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল তৈরির কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে এবং ওই কাজ শেষ হলে জেলার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ছবি বদলে যাবে বলে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন আশ্বাস দেন। কিন্তু এর পরেই মুখ্যমন্ত্রী সুর চড়ান। পাওয়ার গ্রিড রুখতে ভাঙড়ে যে রকম আন্দোলন-বিক্ষোভ হয়েছে, তার বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী কড়া বার্তা দেন। প্রবল উষ্মা প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য— মিথ্যা বলে, অপপ্রচার করে ভাঙড়ের মানুষকে উস্কে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘জমির উপর দিয়ে বিদ্যুতের তার গেলে নাকি জমি নষ্ট হয়। জমির উপর দিয়ে বিদ্যুতের তার গেলে নাকি ফসল নষ্ট হয়। এই সব পাগলাগারদের কথা কারা বলে আমি জানি না।’’ ভাঙড়ের মানুষকে মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস— ভয় পাওয়ার দরকার নেই, রাজ্য সরকার সব সময় মানুষের পাশে রয়েছে, মানুষের ক্ষতি হওয়ার মতো কোনও কাজ এই সরকার করবে না।
পাওয়ার গ্রিডের বিরুদ্ধে আন্দোলনের জেরে এ ভাবে আগুন জ্বলেছিল ভাঙড়ের যত্রতত্র। মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেছেন, গোটা বিক্ষোভটাই ছিল অপপ্রচারের ফসল। —ফাইল চিত্র।
ভাঙড়ে যে অশান্তি হয়েছে, তা কোনও স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ নয় বলে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি। পাওয়ার গ্রিডের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে এবং মিথ্যা প্ররোচনা দিয়ে হিংসাত্মক পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছিল বলে তিনি এ দিন মন্তব্য করেছেন। সেই প্রসঙ্গেই ভাঙড়বাসীর প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বান— সমস্যা থাকলে সরকারকে জানান, চিঠি লিখে জানান, কিন্তু বহিরাগতদের কথায় অশান্তি করবেন না, প্ররোচনার ফাঁদে পা দেবেন না। ভাঙড়ে বিভিন্ন প্রোমোটিং সংস্থা কৃষকের জমির দখল নিতে চায় বলে এ দিন মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন। অশান্তির পিছনে তাদের হাত রয়েছে বলেও মুখ্যমন্ত্রীর দাবি। কোনও অশান্তি আর বরদাস্ত করা হবে না বলে স্পষ্ট বার্তা তাঁর।
আরও পড়ুন: টক্করে দু’পক্ষই, পাহাড়ে বন্ধের শুরু আজ
ভাঙড়ের সভা থেকে কিন্তু এ দিন পাহাড়কেও বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে পাহাড়ে ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে হুমকি দেওয়া হয়েছিল, মন্তব্য মুখ্যমন্ত্রীর। কিন্তু এ ধরনের হুমকি যে তিনি বরদাস্ত করবেন না, তা এ দিন ফের স্পষ্ট করে জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর মন্তব্য— গুন্ডারা দেশের সম্পদ নয়। কয়েকটা নেতার কথায় অশান্তি করতে দেবেন না। নাম না করে এ দিন মোর্চাকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘আমাকে চমকালে আমি চমকাই না। পাহাড়ে চমকেছিল, আমি কিন্তু পাহাড়ে গিয়েছি। মিটিং করেছি, শান্তিরক্ষা করেছি, তার পর চলে এসেছি।’’ পাহাড়বাসীদের বিরুদ্ধে তাঁর কোনও অভিযোগ নেই বলে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন মন্তব্য করেন। কিন্তু পাহাড়ে যারা গুন্ডামি করছে, সরকার তাদের ছেড়ে দেবে না— স্পষ্ট বার্তা রাজ্যের শীর্ষ প্রশাসকের।
চলতি বছরের জানুয়ারিতেই পাওয়ার গ্রিড বিরোধী আন্দোলনে আগুন জ্বলেছিল ভাঙড়ে। গুলিতে ২ জনের মৃত্যুও হয়। তার পর থেকেই পাওয়ার গ্রিডের কাজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য সরকার। কিন্তু এ দিন মুখ্যমন্ত্রী ফের পাওয়ার গ্রিডের পক্ষেই সওয়াল করেছেন।