Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
Visva Bharati

বিজেপি কেন হারল? বিশ্বভারতীর ডাকা আলোচনাসভা বিতর্কের ধাক্কায় বাতিল

ঠাকুর পরিবারের সদস্য সুপ্রিয় ঠাকুর বলেন, ‘‘বিশ্বভারতীতে রাজনীতিটা একেবারেই ছিল না। রবীন্দ্রনাথ রাজনীতি পছন্দ করতেন না। ’’

বিজেপি-র পরাজয়ের কারণ খতিয়ে দেখতে আলোচনাসভা ডেকে বিতর্কে বিশ্বভারতীর উপাচার্য।

বিজেপি-র পরাজয়ের কারণ খতিয়ে দেখতে আলোচনাসভা ডেকে বিতর্কে বিশ্বভারতীর উপাচার্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বোলপুর শেষ আপডেট: ১২ মে ২০২১ ১৫:৪০
Share: Save:

বাংলা জয়ে ‘নিশ্চিত’ বিজেপি শেষ পর্যন্ত ৮০ আসনে পৌঁছতে পারেনি। স্বাভাবিক ভাবেই দলের উপর থেকে নীচ সর্বস্তরে শুরু হয়েছে হারের পর্যালোচনা। এ বার বিজেপি-র হারের কারণ খতিয়ে দেখতে আলোচনাসভা ডেকে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিল বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। সমালোচনার আঙুল উঠেছিল উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর দিকে। বিতর্কের মুখে পড়ে শেষ পর্যন্ত ওই আলোচনাসভা বাতিল করলেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। যদিও, তাঁদের যুক্তি, অনিবার্য কারণে আলোচনাসভা বাতিল করতে হয়েছে।

খোদ উপাচার্যর পৌরহিত্যেই আগামী ১৮মে বিকেল ৪টেয় যে আলোচনাসভা হওয়ার কথা ছিল। তার বিষয় ছিল, ‘বিজেপি কেন পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভোটে জিততে পারল না’। বক্তা ছিলেন কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি আয়োগের যুগ্ম পরামর্শদাতা অধ্যাপক সঞ্জয় কুমার। কোভিড পরিস্থিতিতে ভার্চুয়াল মাধ্যমেই সকলকে আলোচনায় অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে।

বিশ্বভারতীতে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনাসভা হয় সারা বছর ধরেই। কিন্তু প্রাক্তন এবং বর্তমান আশ্রমিকদের বড় অংশের মতে, এই প্রথম কোনও রাজনৈতিক দলকে নিয়ে এ ভাবে আলোচনা ডাকা হয়। তা নিয়ে অধ্যাপক, পড়ুয়া, আশ্রমিকরা তো বটেই, নিন্দায় সরব হন বোলপুরের সাধারণ মানুষও। উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেন তাঁরা। এই ধরনের দলীয় আলোচনা রবীন্দ্র-ঐতিহ্য বহনকারী বিশ্বভারতীর মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করছে বলে মন্তব্য করেন তাঁরা।

আলোচনাসভা বাতিল জানিয়ে চিঠি।

আলোচনাসভা বাতিল জানিয়ে চিঠি। —নিজস্ব চিত্র।

ঠাকুর পরিবারের সদস্য তথা আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর এই আলোচনা সভার বিরোধিতা করে আনন্দবাজার ডিজিটালকে বলেন, ‘‘বিশ্বভারতীতে রাজনীতিটা একেবারেই ছিল না। রবীন্দ্রনাথ রাজনীতি পছন্দ করতেন না। কিন্তু সে সব নিয়ম আর কোথায় এখন। অনেক দিন ধরেই বিশ্বভারতীকে গ্রাস করছে রাজনীতি। এখন তো একেবারে রন্ধ্রে রন্ধ্রে। যিনি কর্মকর্তা তিনি চাইলে বন্ধ করা যাবে কী করে? এখানে রাজনীতি হওয়ার কথাই নয়। আগে কখনও হতো না। কিন্তু কর্মকর্তা নিজে বয়ে আনলে কে ঠেকাবে? খুব অন্যায় হচ্ছে, কিন্তু কী করা যাবে!’’

প্রধানমন্ত্রী মনোনীত বিশ্বভারতীর কর্মসমিতির সদস্য দুলালচন্দ্র ঘোষও এই সভা নিয়ে বিরক্ত হন। তিনি বলেন, ‘‘বিশ্বভারতী একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সাধারণত শিক্ষা, সমাজব্যবস্থা এবং আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় এখানে। একটা রাজনৈতিক দল কেন ভোটে হারল, তা বিচার বিবেচনা করে দেখার জন্য আলোচনা সভার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না আমি।” দুলালচন্দ্র আরও বলেন, “আমি নিজে বামপন্থী রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। চিরকাল জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতেই বিশ্বাস করে এসেছি। কিন্তু আমার মতে, এই ধরনের আলোচনাসভায় বিজেপি-রই ক্ষতি। কারণ বোলপুরে বিজেপি-র যে প্রার্থী হেরেছেন, তাঁকে নিয়ে এলাকাবাসীই অতিষ্ঠ। তাঁর জন্য দলের ভাবমূর্তি আরও খারাপ হয়েছে। আসলে নিজের পদ বাঁচাতেই এ সব করছেন উনি।’’

বিশ্বভারতীর প্রাক্তনী নুরুল হকের বক্তব্য ছিল, ‘‘উপাচার্য মাঝেমধ্যে ভুলে যান যে তিনি বিশ্বভারতীর মতো ঐতিহ্যশালী বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছেন। উনি তো নিজেকে একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের ক্যাডার ভাবেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলি রাজ্য অথবা কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকতেই পারে। তার মানে এই নয় যে, বিশ্বভারতী বিজেপি-র দলীয় কার্যালয়। এই ঘটনায় দুঃখ পেয়েছি ঠিকই, কিন্তু একটুও অবাক হইনি। কারণ শুরু থেকেই উপাচার্য এই ধরনের কাজ করে আসছেন।”

দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মরত অবস্থায় ২০০৭ সালে যৌন হেনস্থায় নাম জড়িয়েছিল বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর। তাঁকে বিশ্বভারতীর উপাচার্য নিয়োগ করা নিয়ে শুরু থেকেই বিতর্ক। সেই আগুনে ঘি ঢেলে গিয়েছে তাঁর একের পর এক সিদ্ধান্ত। পৌষমেলা প্রাঙ্গণ থেকে ক্যাম্পাসের ইতিউতি প্রাচীর তোলা হোক, অমর্ত্য সেনের বিরুদ্ধে বিশ্বভারতীর জমি দখল করার অভিযোগ তোলা বা পূর্ত দফতরের থেকে পাওয়া রাস্তা দিয়ে সাধারণের যাতায়াত বন্ধ করা, লাগাতার বিতর্কে জড়িয়েছেন তিনি। বোলপুরে নির্বাচনী সভা করতে আসা অমিত শাহ এবং দিলীপ ঘোষের সঙ্গে তাঁর দেখা করা নিয়েও বিতর্ক বাধে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE