গান শোনাতে হবে— সারা বেলা এমনই দাবি জানাচ্ছেন আনন্দ নামে এক রোগী। সেই মতো অন্য রোগীদেরও নিজের দিকে টানার জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি। ঘটনাস্থল স্যার রিচার্ড মানসিক হাসপাতাল। রিল লাইফে হাসপাতালে গানের জন্য এমন আকুতি দেখা গিয়েছিল ‘কিঁউ কি’ সিনেমাতে সলমন খানের (আনন্দ) গলায়।
তবে রিয়েল লাইফে কালনা মহকুমা হাসপাতালে কোনও আনন্দকে এমন দাবি জানাতে হয়নি। বরং কর্তৃপক্ষই ঠিক করেছেন, এ বার থেকে ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে বেজে উঠবে রবীন্দ্র সঙ্গীত, ভক্তিমূলক বা দেশাত্মবোধক গানের কলি। সম্প্রতি রোগী সল্যাণ সমিতির বৈঠকে এমনই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর।
বৈঠকে হাসপাতাল সুপারকে মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ প্রস্তাব দেন, দিনভর যদি পালা করে হাসপাতালে গান বাজানো যায়, তবে কেমন হয়? মন্ত্রী মুখে এমন কথা শুনে পুরপ্রধান দেবপ্রসাদ বাগ, বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডুরাও হইহই করে জানান, রাজ্যের বাইরে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে এমন গান শোনানোর ব্যবস্থা রয়েছে। প্রস্তাবে এক কথায় সায় জানান সুপার কৃষ্ণচন্দ্র বড়াই। ঠিক হয়, হাসপাতালের ভিতরে ছোট ছোট সাউন্ড বক্স বসানো হবে। প্রথমে অপারেশন থিয়েটার, বহির্বিভাগের মতো ৩টি জায়গায় শোনা যাবে গানের সুর। পরে ধীর ধীরে গোটা হাসপাতাল জুড়েই এই উদ্যোগ করা হবে। তবে এমন উদ্যোগে রোগীদের কতখানি লাভ হবে? কৃষ্ণচন্দ্রবাবুর আশা, ‘‘সকালে গান শুনে ফুরফুরে হয়ে যাবে রোগীদের মেজাজ। যা আখেরে তাঁদের চিকিৎসাতেও সাহায্য করবে।’’ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এই পদক্ষেপে খুশি রোগীরাও। নাদনঘাট থেকে আসা এক রোগীর আত্মীয় ফজল শেখ বলেন, ‘‘গান কে না পছন্দ করেন! গানের সুরে রোগীরাও বাড়তি মনোবল পাবেন।’’ হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানান, মিউজিক থেরাপির বিষয়টি বেশ পুরনো। এ ক্ষেত্রে তেমনটা না হলেও সঙ্গীতের পরিবেশ আদতে হাসপাতালের পরিবেশের পক্ষে সহায়ক হবে বলে তাঁর আশা।
যদিও হাসপাতালের পরিবেশ নিয়ে এই হাসপাতালের বিরুদ্ধে এর আগে বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে। বর্ধমান, হুগলি ও নদিয়া— তিন জেলার বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষজন এই হাসপাতালের উপর নির্ভর করেন। কিন্তু হাসপতালে আগাছা ও আবর্জনা পরিষ্কার করা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। বছর তিনেক আগেও হাসপাতালের বিরুদ্ধে অকারণে রোগী স্থানান্তর করা, রাতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব, কর্তব্যে গাফিলতি-সহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে। এর জেরে হাসপাতালে দ্রুত কমতে থাকে রোগীর সংখ্যা। রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যদিও গত দু’বছরে কত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে, তাঁরা কী কী পরিষেবা পেয়েছেন ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে খতিয়ান পেশ করেন বলে খবর। সুপারের দাবি, ইতিমধ্যে প্রসূতি বিভাগে বসানো হয়েছে টেলিভিশন। সেখানে দেখানো হচ্ছে মা ও শিশুর কী ভাবে যত্ন নেওয়া দরকার ইত্যাদি।
ওই বৈঠকে হাসপাতাল চত্বরের সৌন্দর্যায়নেও জোর দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে ঠিক হয়েছে, প্রতি ১৫ দিন অন্তর জঞ্জাল সাফাই করবে পুরসভা। হাসপাতাল চত্বরে থাকা একটি পুকুরের পাড়ে গাছও লাগানো হবে। তৈরি হবে একটি নতুন নালা। বৈঠক শেষে স্বপনবাবু বলেন, ‘‘হাসপাতালের ভিতর-বাইরে এমন পরিবেশ তৈরির চেষ্টা চলছে, যাতে যে কারও চোখ আটকে যায়। আশা করি খুব দ্রুত নতুন চেহারায় দেখা যাবে মহকুমা হাসপাতালকে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy