Advertisement
E-Paper

কার্বলিক অ্যাসিড দিয়েছি, তাই গর্ত থেকে সাপখোপ বেরিয়ে পড়েছে! এক বছর আগের ‘ঋণ’ কড়ায়-গন্ডায় শোধ দিলীপের

২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তিনি হারেন। কিন্তু সেই ম‍্যাচ দিলীপ ‘ঘরের মাঠে’ খেলতে পারেননি। তাঁকে মেদিনীপুর থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। দিলীপ এবং তাঁর ঘনিষ্ঠেরা তার জন্য শুভেন্দুকেই ‘দায়ী’ করেন।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ মে ২০২৫ ১৪:৫৭
Was denied a ticket at his own Lok Sabha seat, Does Dilip Ghosh repay his ‘debt’ as one year old wound starts bleeding again

দিলীপ ঘোষ। —ফাইল চিত্র।

এক বছর আগের ‘ঋণ’ কড়ায়-গন্ডায় চুকোতে নেমেছেন দিলীপ ঘোষ। এক বছর আগে লোকসভা নির্বাচনে তাঁকে নিজের লোকসভা কেন্দ্র থেকে পাঠানো হয়েছিল অন্য আসনে। বিজেপির অন্দরে সর্বজনবিদিত যে, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল শুভেন্দু অধিকারীর প্রস্তাবে। যদিও আনুষ্ঠানিক ভাবে সে কথা কেউই স্বীকার করেননি। তেমন কোনও ঘোষণাও হয়নি। কিন্তু তার পর থেকেই দিলীপের নিশানায় ছিলেন শুভেন্দু। যে ‘বৃত্ত’ সম্পূর্ণ হল বুধবার সস্ত্রীক দিলীপের দিঘা সফরে এবং বৃহস্পতিবার সকালে সমুদ্রসৈকতে তাঁর তোপধ্বনিতে। যেখানে নাম না করে তিনি শুভেন্দুকে আক্রমণ করলেন। বললেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আঁচলের ছায়ায় যাঁরা বড় হয়েছেন, তাঁদের কাছ থেকে দিলীপ ঘোষ বিজেপি শিখবে না!”

২০১৬ সালে প্রথম বার বিধানসভা নির্বাচন লড়ে দিলীপ বিধায়ক হন। ২০১৯ সালে প্রথম বার লোকসভা নির্বাচন লড়ে সাংসদ। বলতেন, “হারের রেকর্ড নেই। এখনও পর্যন্ত আমার রেজাল্ট ২-০।” কিন্তু ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তিনি হারেন। কিন্তু সেই ম‍্যাচ দিলীপ ‘ঘরের মাঠে’ খেলতে পারেননি। তাঁকে মেদিনীপুর থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। দিলীপ এবং তাঁর ঘনিষ্ঠেরা তার জন্য শুভেন্দুকেই ‘দায়ী’ করেন।

তার পর থেকে শুভেন্দুর সঙ্গে দিলীপের সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে, এমনকিছু শোনা যায়নি। যদিও সম্প্রতি বিধানসভায় শুভেন্দুর ঘরে এসেছিলেন দিলীপ। সেখানে হাসিমুখে ছবি-টবিও তোলা হয়েছিল। কিন্তু তাল কেটে যায় দিলীপের বিবাহে। ‘ব্যক্তিগত’ সিদ্ধান্ত কাউকেই জানাননি দিলীপ। কিন্তু বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার দলের প্রথম সারির নেতা-নেত্রীদের নিয়ে খানিকটা ‘রবাহূত’ হয়েই দিলীপের বাড়িতে পৌঁছোন। কিন্তু শুভেন্দু ব্যক্তিগত ভাবে দিলীপকে শুভেচ্ছা জানাননি। প্রশ্নের জবাবে দায়সারা ভাবে বলেছিলেন, ‘‘দল তো শুভেচ্ছা জানিয়েছে।’’

বুধবার দিলীপ জগন্নাথধামে যাওয়ার পরেও শুভেন্দু বলেন, ‘‘কারও ব্যক্তিগত বিষয়, তাঁর মন্তব্য, তাঁর চলার ধরন, তাঁর কাজের ধরন, প্রেম-প্রীতি-ভালবাসা, রাগ-বিরহ-দহন, এ সবের উত্তর আমি দিই না। ভবিষ্যতেও দেব না।’’

দিলীপের ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর, মঙ্গলবার অন্তত রাত দেড়টা পর্যন্ত তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা হয়েছিল, যাতে তিনি দিঘায় না যান। এমনকি, মুর্শিদাবাদে দলীয় কর্মসূচিও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দিলীপ বদ্ধপরিকর ছিলেন দিঘা যেতে। সে কথা তিনি জানিয়েও দেন। তখনই ঠিক হয়ে যায় যে, ওই সফরকে দিলীপের ‘ব্যক্তিগত’ বলে বর্ণনা করা হবে।

তবে দিলীপের দিঘায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত ‘ব্যক্তিগত’ হলেও ‘তাৎপর্যপূর্ণ’। কারণ, দিঘায় যাওয়ার পথ কাঁথি হয়ে। যা শুভেন্দুর বাসস্থান তো বটেই, ঘটনাচক্রে, সেই একই দিনে শুভেন্দুর উদ্যোগে সেখানে ‘সনাতনী সম্মেলন’ হয়েছে। প্রত্যাশিত ভাবেই শুভেন্দু সেখানে দিলীপকে আমন্ত্রণ জানাননি। প্রত্যাশিত ভাবেই, দিলীপও তার ধারপাশ মাড়াননি। উল্টে দিঘায় পৌঁছে রাজকীয় অভ্যর্থনা পেয়েছেন। তিনি এবং তাঁর স্ত্রী রিঙ্কু মজুমদার গলায় ফুলের মালা পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বসে কুশলাদি বিনিময় করেছেন। মমতাকে বলেছেন, ‘‘ভগবান আপনাকে দিয়ে একটা বড় কাজ করিয়ে নিলেন।’’ অর্থাৎ, শুভেন্দু দিঘার অনুষ্ঠানের ‘পাল্টা’ যে কর্মসূচি করেছেন, সেখানে যাওয়া তো দূরস্থান, দিলীপ বরং মমতার আয়োজনে দিঘার অনুষ্ঠানকে ‘বৈধতা’ দিয়ে দিয়েছেন। যা থেকে এই জল্পনাও জন্ম হয়েছে যে, দিলীপের তৃণমূলে যোগদান এখন সময়ের অপেক্ষা। এমনকি, তাঁ সঙ্গে আরও কে কে তৃণমূলে যাবেন, সেই তালিকাও তৈরি হতে শুরু করেছে। দিলীপ অবশ্য সে সম্ভাবনা নস্যাৎ করে জানিয়েছেন, তিনি রাজনীতি ছাড়তে পারেন। কিন্তু বিজেপি ছাড়বেন না।

তবে দিঘা সফর এবং তৎপরবর্তী কান্ডকারখানা দিলীপ ‘স্বতঃস্ফূর্ত’ ভাবে ঘটিয়েছেন, তা রাজ্য বিজেপির অন্দরে কেউই মানতে চাইছেন না। বস্তুত, তাঁরা মনে করছেন, দিলীপ যা করেছেন, ভেবেচিন্তেই করেছেন। রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি তথাগত রায় তো বলেই দিয়েছেন, ‘‘এর মধ্যে রাজনীতি ছাড়া আর কিছু নেই!’’ তথাগতর সে বক্তব্য শুনে দিলীপ তাঁকেও নজিরবিহীন ভাষায় আক্রমণ করেছেন। বলেছেন, ‘‘উনি বিজেপি সভাপতি হয়ে কী করেছেন? ৪ শতাংশ ভোট পেয়েছেন! আর সন্ধ্যায় বন্ধুবান্ধব ডেকে মাল খেয়ে ফুর্তি করেছেন। উনি যদি বিজেপিকে ৪০ শতাংশ ভোট এনে দিতে পারতেন, ওঁকে প্রমাণ করতাম।’’

তবে দিলীপ যে নিছক সৌজন্যের কারণে দিঘা যাননি, সে ভাবনায় সিলমোহর পড়েছে দিলীপের বক্তব্যেই। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুর নাম না-করে রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ দিঘায় দাঁড়িয়ে সটান বলেছেন, ‘‘বড় বড় কথা কারা বলছেন? যাঁরা মমতার আঁচলের তলায় থেকে নেতা হয়েছেন! চরিত্রের কথা বলছেন কারা? যাঁরা কালীঘাটের উচ্ছিষ্ট খেয়েছেন, আজ বিজেপির উচ্ছিষ্ট খেয়ে বেঁচে আছেন, তাঁরা দিলীপকে ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট দিচ্ছেন।’’ বলেছেন, ‘‘কার্বলিক অ্যাসিড দিয়েছি। তাই গর্ত থেকে সাপখোপ বেরিয়ে পড়েছে।’’

দিলীপের ‘আক্রমণাত্মক’ বক্তব্য নিয়ে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব নতুন করে কিছু বলেননি। শুভেন্দু তাঁর নাম না করে বলেছেন, ‘‘মন্তব্য করব না। আমাদের সেনা কবে পাকিস্তানকে জবাব দেবে, তা নিয়ে ভাবছি। বাংলার সব বিজেপি কর্মী মমতাকে উপড়ে ফেলার লক্ষ্যে কাজ করছেন। আমরা সে সব নিয়ে ভাবছি। অন্য কিছু নিয়ে আমরা ভাবছি না।’’ রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র তথা সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য আরও সাবধানি, ‘‘দিলীপ ঘোষ বর্ষীয়ান নেতা। তিনি বিধায়ক ছিলেন, সাংসদ ছিলেন, দলের রাজ্য সভাপতি ছিলেন। তিনি যা বলেছেন, জনসমক্ষেই বলছেন। দলের অবস্থান কী, তা রাজ্য সভাপতি জানিয়ে দিয়েছেন। আমি আর কোনও মন্তব্য করব না।’’

কিন্তু বিজেপির অনেকে মনে করছেন, শুভেন্দুকে আক্রমণ করতে গিয়ে দিলীপ দলকেও ‘খাটো’ করে ফেলেছেন। কারণ, তিনি বলেছেন, ‘‘বিজেপিতে অন্য দল থেকে অনেকে কামাতে এসেছেন। বিজেপি এখন দোকান হয়ে গিয়েছে! পুরনো বিজেপির স্বাদ-গন্ধ কিছু নেই।’’ তাঁর বক্তব্য, সে সব ঘটেছে ‘বহিরাগত’দের কারণেই। সেখানেই দিলীপের হিতৈষীদের অনেকে ‘অশনি সঙ্কেত’ দেখছেন। বলছেন, ‘‘দিলীপ’দা ঠিকই বলেছেন। কার্বলিক অ্যাসিড দিলে সাপখোপ বেরোয় বটে। কিন্তু অসতর্ক হলে সেই অ্যাসিডে নিজের হাতও পুড়তে পারে!’’

Dilip Ghosh Suvendu Adhikari West Bengal Politics West Bengal BJP Digha Jagannath Temple CM Mamata Banerjee
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy