E-Paper

পাড়া-সমাধানে মূল ভরসা কেন্দ্রীয় অর্থেই

প্রশাসনিক সূত্র জানাচ্ছে, ২০২৫-২৬ (চলতি) অর্থবর্ষেই পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে। তার পরে শুরু হবে ষোড়শ অর্থ কমিশনের কাজ। ইতিমধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে অর্থ কমিশনেরবরাদ্দের প্রায় পুরোটাই পেয়ে গিয়েছে রাজ্য সরকার।

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০২৫ ০৮:৫৯

—প্রতীকী চিত্র।

বরাদ্দ বকেয়ার প্রশ্নে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক ভাবে কার্যত খড়গহস্ত হলেও, ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’ (আপস) কর্মসূচিতে বিপুল অর্থ জোগাড়ের অন্যতম মূল উৎস হিসেবে কেন্দ্রীয় অর্থেই ভরসা রাখার ইঙ্গিত দিল রাজ্য সরকার। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের বরাদ্দ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হলেও, ‘আপস’-এ গৃহীত বেশ কিছু কাজে অর্থের উৎস হিসেবে সেই বরাদ্দেরই সাহায্য নিতে বলা হয়েছে।

‘আপস’-এ আট হাজার কোটি টাকা খরচ করা হবে বলে আগেই দাবি করেছে নবান্ন। কিন্তু সেই বরাদ্দ কোন খাত থেকে হবে, তা নিয়ে স্পষ্ট বার্তা ছিল না জেলা-কর্তাদের কাছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, সম্প্রতি তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এই কর্মসূচিতে যে কাজ হবে, তার বেশ কিছু কাজের খরচ আনার চেষ্টা হবে পঞ্চদশ অর্থ কমিশন থেকেই। আপাতত পশ্চিমবঙ্গ-সহ গোটা দেশে ‘জল জীবন মিশনের’ বরাদ্দ বন্ধ থাকলেও, জল প্রকল্প সংক্রান্ত আপস-খরচের উৎস তালিকায় সেই প্রকল্পকেও ধরতে বলা হয়েছে। একই ভাবে টাকার আর একটি উৎস— ‘স্বচ্ছ ভারত মিশন’। অবশ্য কিছু কাজের খরচে সংশ্লিষ্ট দফতরের বরাদ্দ কাজে লাগানো হবে বলে জানানো হয়েছে জেলা কর্তাদের। আর্থিক বিশ্লেষকদের একাংশের বক্তব্য, রাজ্যের কোষাগারের যে পরিস্থিতি, তাতে এই খরচ পুরোপুরি নিজেদের ভাঁড়ার থেকে করা মুশকিল। তার উপর অতিরিক্ত অনেক খরচের ভার ইতিমধ্যেই নিয়েছে নবান্ন। ফলে এ ছাড়া আর কোনও রাস্তা খোলা নেই।

প্রশাসনিক সূত্র জানাচ্ছে, ২০২৫-২৬ (চলতি) অর্থবর্ষেই পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে। তার পরে শুরু হবে ষোড়শ অর্থ কমিশনের কাজ। ইতিমধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে অর্থ কমিশনেরবরাদ্দের প্রায় পুরোটাই পেয়ে গিয়েছে রাজ্য সরকার। তা দিয়ে চলছে আগে থেকে অনুমোদিত নানা ধরনের কাজ। জেলা-কর্তাদের একাংশের যুক্তি, প্রক্রিয়া মেনে চলতি বছরের অর্থ কমিশনের বরাদ্দ পেতে আগেই কাজের প্রস্তাব কেন্দ্রের অনুমোদন করানো রয়েছে। এখন আপস-এর নিরিখে অতিরিক্ত কাজের প্রস্তাব কমিশনে পাঠাতে হলে তা গ্রামসভা, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদে ডেকে পাশ করাতে হবে। কিন্তু অর্থ কমিশনের চলতি বছরের বরাদ্দ নিয়ে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, তাতে চিন্তা বাড়ছেআধিকারিকদের একাংশের।

সংশ্লিষ্টরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, আগামী বছর রাজ্যে বিধানসভা ভোটের আগে এ বছর পুজো অনুদান এক ধাক্কায় বাড়ানোর ফলে প্রায় ৪৯৯ কোটি টাকা খরচ হবে রাজ্যের। আবার সদ্য ঘোষিত ‘শ্রমশ্রী’ প্রকল্পে রাজ্যে ফিরে আসা পরিযায়ী শ্রমিকেরা অন্তত এক বছর (যত দিন না কাজের ব্যবস্থা হচ্ছে) ধরে মাসে পাঁচ হাজার টাকা করে সরকারি অনুদান পাবেন। সরকারি হিসেবে বিভিন্ন রাজ্যে থাকা এ রাজ্যের প্রায় ২২ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিকের মধ্যে ১০% ফিরলেও, এই খাতে প্রায় ১৩২০ কোটি টাকা খরচ করতে হবে। আবার আবাস প্রকল্পে নতুন ১৬ লক্ষ উপভোক্তার জন্য প্রায় ১৯,২০০ কোটি টাকা খরচেরঘোষণা রয়েছে। এই অর্থবর্ষে তার একটি কিস্তি দিলেও খরচের বহর প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। এর সঙ্গে রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক মহলে ভোটের আগে লক্ষ্মীর ভান্ডারে নতুন ভাবনাচিন্তার সম্ভাবনা নিয়ে জোরদার চর্চা রয়েছে। তাই একেবারে নিজস্ব তহবিল থেকে আপস-এর অতিরিক্ত আট হাজার কোটি টাকার জোগান কষ্টসাধ্য। তাই শেষ পর্যন্ত অর্থ কমিশনের বরাদ্দ না এলে রাজ্যের সমস্যা আরও বাড়তে পারে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Amader Para Amader Samadhan TMC West Bengal government Central Government

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy