নির্ধারিত সময়ের আগেই আবাস প্রকল্পে দ্বিতীয় কিস্তির বরাদ্দ ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজ্য সরকার। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, সেই কারণেই বাড়ি তৈরির কাজ কোথায় কত বকেয়া রয়েছে, তা সরাসরি গিয়ে খতিয়ে দেখার কাজ চলছে মন্ত্রী এবং সচিব স্তরে। রাজ্যের চলতি পরিস্থিতিতে দ্বিতীয় কিস্তির বরাদ্দের সময় এগিয়ে আনাকে ইঙ্গিতপূর্ণ বলে মনে
করা হচ্ছে।
আগেই দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের পর্যালোচনা বৈঠক হয়েছে। তার সূত্র ধরে ইতিমধ্যেই উত্তরবঙ্গের প্রায় সবক’টি জেলায় দফতরের সচিবকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে আবাস তৈরির কাজ খতিয়ে দেখছেন পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার। প্রশাসনিক সূত্রের বক্তব্য, জুন মাসে প্রকল্পের দ্বিতীয় কিস্তির টাকা ছাড়ার কথা ছিল নবান্নের। কিন্তু এখন মে মাসের শেষের মধ্যে সেই কাজ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত দিয়ে করানোর চেষ্টা চালাচ্ছে প্রশাসন। তার আগে যেটুকু কাজ বাকি রয়েছে, তার যতটা সম্ভব সেরে ফেলার বার্তা দেওয়া হয়েছে জেলাগুলিকে। বিশ্লেষকদের একাংশের অনুমান, ওয়াকফ-আন্দোলন ঘিরে রাজ্যের যে পরিস্থিতি, তাতে আইনশৃঙ্খলা ঠেকাতেই বেশি ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে জেলা প্রশাসনিক কর্তাদের বেশিরভাগকে। এই অবস্থায় যাতে প্রকল্পের গতি থমকে না যায়, তা নিশ্চিত করাই এর অন্যতম লক্ষ্য হয়ে থাকতে পারে।
তবে আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, উত্তরবঙ্গে এই সময়টায় কিছু চাষের কাজে উপভোক্তারা ব্যস্ত থাকেন। ফলে সেখানে বাড়ি তৈরির গতি কিছুটা কমেছে। আবার ইদের কারণেও কিছুদিন সেই কাজ করা যায়নি। সব মিলিয়ে সংশ্লিষ্টদের দাবি, এখনও ৩-৪ শতাংশ কাজ বাকি রয়েছে। সেগুলিই যত দ্রুত সম্ভব এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে নবান্ন। সংশ্লিষ্ট মহল মনে করিয়ে দিচ্ছে, দু’টি দফায় মোট ১ লক্ষ ২০ হাজার করে টাকা দেওয়ার কথা ১২ লক্ষ আবাস-উপভোক্তাকে (১১ লক্ষ আবাসের মূল তালিকায় থাকা এবং ১ লক্ষ বিভিন্ন বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত উপভোক্তা)। প্রথম কিস্তির ৬০ হাজার করে মোট প্রায় ৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা গত আর্থিক বছরেই (২০২৪-২৫) দিয়ে দিয়েছে রাজ্য। বাকি আরও ৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা দেওয়ার কাজ হবে। তবে তার আগে বাড়ির নির্দিষ্ট পরিমাপের কাজ শেষ করে
ফেলার কথা উপভোক্তাদের। পঞ্চায়েতমন্ত্রীর কথায়, “খুব অল্প সংখ্যায় হলেও যাঁদের বাড়ি তৈরির গতি শ্লথ, দ্বিতীয় কিস্তির টাকা দেওয়ার কাজ শুরু হলে তাঁরা সেই কাজেই গতি বাড়াবেন। ফলে প্রায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দ্বিতীয় কিস্তির বরাদ্দ দেওয়ার কাজ শেষ করে ফেলা যাবে। মে মাসের শেষ থেকে সেই কাজ শুরু করার চেষ্টা চলছে।”
বিশ্লেষকদের একাংশের বক্তব্য, স্কুল সার্ভিস কমিশনের প্যানেল বাতিলের ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্য সরকার বেশ অস্বস্তিতে রয়েছে। তার উপরে ওয়াকফ বিল নিয়ে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন বেশ উত্তপ্ত। এ নিয়ে প্রশাসনিক ভূমিকাও বার বার প্রশ্নের মুখে আসছে। ২০২৬ সালে বিধানসভা ভোটের আগে আবাসের সব উপভোক্তাকে (চলতি ১২ লক্ষ ছাড়াও আরও ১৬ লক্ষ) টাকা দেওয়ার ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এই অবস্থায় আগামী মাস থেকেই প্রকল্পের দ্বিতীয় কিস্তির টাকা দেওয়ার পরিকল্পনা কার্যকর হলে পরবর্তী উপভোক্তাদের জন্য বরাদ্দের সময়ও এগিয়ে আসতে পারে বলে অনুমান সংশ্লিষ্ট মহলের। সব মিলিয়ে তা যথেষ্ট অর্থবহ হবে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)