Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Economics

শীর্ষে থেকেও ডাক্তারি বা ইঞ্জিনিয়ারিং নয়! ‘ফার্স্ট বয়’-এর অর্থনীতি পড়ার ইচ্ছায় খুশি শিক্ষাবিদেরা

প্রায় সাড়ে চার দশক আগে উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম স্থান পাওয়া দীপঙ্কর ভট্টাচার্য পড়াশোনার বিষয় হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন অর্থনীতিকে। তিনি এখন সিপিআই-এমএল লিবারেশনের সাধারণ সম্পাদক।

Image of HS Topper.

অর্থনীতি পড়তে চান উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় শীর্ষ স্থানাধিকারী শুভ্রাংশু সর্দার। ছবি: সংগৃহীত।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০২৩ ২০:২২
Share: Save:

ডাক্তারি বা ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়তে চান না। আকর্ষণ নেই আইএএস-আইপিএসের মতো সেরা সরকারি চাকরিতেও। এ বারের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় শীর্ষ স্থানাধিকারী শুভ্রাংশু সর্দার ভবিষ্যতে অর্থনীতির গবেষক হতে চান। সে কারণে স্নাতক স্তরে ওই বিষয় নিয়েই পড়তে চান বলে জানিয়েছেন নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের ওই পড়ুয়া।

হালফিলে উচ্চ মাধ্যমিকের কৃতিদের দিকে নজর রাখলে শুভ্রাংশুর এই প্রবণতা কিছুটা ব্যতিক্রমী বলেই মনে করছেন শিক্ষাবিদদের একাংশ। তাঁদের মতে, চাকরি তথা জীবিকামুখী শিক্ষার ‘গড্ডলিকা প্রবাহে’ পণ্ডিত হওয়ার এমন বাসনা কমই দেখা যায়। তা-ও আবার পদার্থবিদ্যা বা রাশিবিজ্ঞানের মত বিষয় ছেড়ে অর্থনীতিতে! কৃতি ছাত্রছাত্রীদের ডাক্তারি-ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো পেশাদারি পাঠ্যক্রমের বাইরে অর্থনীতির মতো একাধারে ফলিত ও গবেষণাধর্মী বিষয় নিয়ে পড়ার প্রবণতা বাড়লে রাজ্যের উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্র উপকৃত হবে বলেই মনে করছেন তাঁরা।

ঘটনাচক্রে, সাড়ে চার দশক আগে ১৯৭৯ সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম স্থান পাওয়া দীপঙ্কর ভট্টাচার্য পড়াশোনার বিষয় হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন অর্থনীতিকে। বর্তমানে সিপিআই-এমএল (লিবারেশন) সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর বুধবার নাগপুর থেকে আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘শুনে খুবই ভাল লাগছে। যে কোনও সমাজ সম্পর্কিত বিষয়ে পড়াশোনার আগ্রহ বাড়লে তা ইতিবাচক।

একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় শীর্ষ স্থানাধিকারী শুভ্রাংশু অর্থনীতির গবেষক হতে চান শুনে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ও প্রীত হয়েছেন। বস্তুত, গত কয়েক বছর ধরেই উচ্চমাধ্যমিকের কৃতি পরীক্ষার্থীদের একাংশের মধ্যে গবেষণাক্ষেত্রে যাওয়ার ঝোঁক দেখা গিয়েছে বলে রাজ্যের শিক্ষামহলের একাংশ জানিয়েছেন। শুভ্রাংশু সেই প্রবণতা আরও উস্কে দিতে পারেন বলে মনে করছেন তাঁরা। সে ক্ষেত্রে অর্থনীতির মতো বিষয় আরও জনপ্রিয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রধান মহালয়া চট্টোপাধ্যায় এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘উচ্চমাধ্যমিকে প্রথম স্থানাধিকারীর অর্থনীতির গবেষক হওয়ার ইচ্ছা শুনে ভাল লাগছে। তবে এটাও বলতে হবে, অর্থনীতি বিষয়টি সকলের জন্য নয়। একই সঙ্গে অঙ্ক এবং ভাষার উপর দখল থাকলে, তবেই অর্থনীতি শিক্ষায় সাফল্য আসে। আগে মেধাতালিকার অনেকেই এই বিষয়টি পছন্দ করতেন। মূলত দু’টি কারণে এখন অর্থনীতি পড়াশোনা করার আগ্রহ কিছুটা কমেছে। বাঙালিরা সহজে একটি চাকরি করতে চান। আর ডাক্তারি এবং ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে দ্রুত রোজগারের পথ খুলে যায়। নব্বইয়ের দশকে মেধাবী শিক্ষার্থীদের একাংশের মধ্যে অর্থনীতি বেছে নেওয়ার প্রবণতা বেশি ছিল। তবে সাধারণ ছাত্রদের এই বিষয়টি এড়িয়ে চলতেই দেখা যেত।’’

অর্থনীতির অধ্যাপক গাগরী চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এটা শুনে ভাল লাগছে। তবে খুব অবাক হচ্ছি না। অর্থনীতির মতো বিষয় থেকে অধ্যাপনা বা চাকরির সুযোগ সবটাই রয়েছে। এই বিষয় থেকে অনেক ধরনের রাস্তাও খুলে যায়। তাই ভাল ছাত্ররা এই বিষয়ে আগ্রহ দেখাবেন এটাই স্বাভাবিক। এর প্রবণতা আরও বাড়লে ভাল। তবে অর্থনীতির উপর ভালবাসা যেন থাকে।’’

শুভ্রাংশুর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন লিভার ফাউন্ডেশনের মুখ্য উপদেষ্টা, পেশায় চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরীও। তিনি বলেন, ‘‘এটা ভীষণ আশাব্যাঞ্জক বিষয়। গতানুগতিক ভাবে ‘ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই’য়ের বাইরে এক জন উজ্জ্বল ছাত্র ভাবতে শুরু করেছে, জীবনটাকে অন্য ভাবে পরিচালিত করা যায়। জ্ঞানের অন্য কোনও মার্গে সে নিজের স্বপ্ন বাঁধছে।’’ অভিজিতের মতে, ‘‘বাজার অর্থনীতির দাপাদাপির এই সময়ে সবাই ভাবতে শুরু করেছিল, ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার ছাড়া গত্যন্তর নেই। হারিয়ে যেতে বসেছিল গবেষণার প্রশ্ন, জ্ঞানের গভীরে অবগাহনের বিষয়গুলো। সেই সময়ে দাঁড়িয়ে এক জন বলছে, অর্থনীতি নিয়ে পড়ব! ভাল রেজাল্ট করে এমন ভাবনা যে ভাবা যায়, এর থেকে সৃষ্টিশীল আর কিছু হতে পারে না। আবারও এ বাংলায় পড়াশোনা নিয়ে স্বপ্ন দেখতে ইচ্ছে করে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Economics HS Topper
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE