E-Paper

১.৩৮ লক্ষ মনোনয়ন আজই! প্রশ্ন বিরোধীদের

রাজ্যে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতে মোট আসন ৭৩,৮৮৭টি। কংগ্রেস-সিপিএম জোট বেঁধে লড়ার কথা বলেছে। এর বাইরে ‘বড়’ (যাদের প্রার্থীসংখ্যা বেশি) রাজনৈতিক দল তৃণমূল এবং বিজেপি।

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০২৩ ০৮:১৭
election.

—প্রতীকী ছবি।

যেন গুলিয়ে যাচ্ছে পাটিগণিতের অঙ্ক!

পঞ্চায়েত ভোটে মনোনয়ন দাখিল শুরু হওয়ার পরে প্রথম পাঁচ দিনের ২০ ঘণ্টায় মনোনয়ন জমা পড়েছে প্রায় ১.৬২ লক্ষ। সেখানে আজ, বৃহস্পতিবার মনোনয়নের শেষ দিনের মাত্র চার ঘণ্টায় তা জমা পড়ার কথা প্রায় ১.৩৮ লক্ষ! কোন দক্ষতায় এবং বাড়তি কোন পরিকাঠামোয় ভর করে এই ‘অসাধ্য সাধন’ করা হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিরোধী নেতারা। অবশ্য কমিশন সূত্রে দাবি, মনোনয়ন কেন্দ্র এবং তাতে টেবিলের সংখ্যা বেশি থাকায় সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

রাজ্যে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতে মোট আসন ৭৩,৮৮৭টি। কংগ্রেস-সিপিএম জোট বেঁধে লড়ার কথা বলেছে। এর বাইরে ‘বড়’ (যাদের প্রার্থীসংখ্যা বেশি) রাজনৈতিক দল তৃণমূল এবং বিজেপি। শুধু এই তিন পক্ষ সব আসনে প্রার্থী দিলেই ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতে তাদের মনোনয়নের মোট সংখ্যা হওয়ার কথা ২,২১,৬৬১। অতীতে দেখা গিয়েছে, পঞ্চায়েতে নির্দল এবং অন্যান্য দল থেকেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় প্রার্থী হন। পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, তিন পক্ষের সঙ্গে তাঁদের ধরলে, মনোনয়ন দেবেন এমন মোট প্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়াবে অন্তত তিন লক্ষ।

এই পরিস্থিতিতে কমিশনের তথ্য বলছে, প্রথম পাঁচ দিনে (৯, ১০, ১২, ১৩ এবং ১৪ জুন) ২০ ঘণ্টায় (প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে বেলা ৩টে) মোট মনোনয়ন জমা পড়েছে ১,৬২,৬৫৫টি। অর্থাৎ, গড়ে ঘণ্টায় জমা হয়েছে প্রায় ৮১৩৩টি করে। এই হিসাবে, মোট প্রার্থীর সংখ্যা অন্তত তিন লক্ষ ধরলেও, বৃহস্পতিবার বাকি চার ঘণ্টায় ১.৩৭ লক্ষেরও বেশি মনোনয়ন জমা নিতে হবে। ঘণ্টায় ৩৪ হাজারেরও বেশি!

কমিশন জানিয়েছে, ৪০৭টি মনোনয়ন কেন্দ্রে আটটি থেকে ১৫টি করে টেবিলে মনোনয়ন নেওয়া হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে গড়ে ১০টি করে টেবিল ধরলেও মোট ৪০৭০টি টেবিলের প্রতিটিতে ঘণ্টায় কমবেশি ৮-৯টি মনোনয়ন জমা পড়ার কথা। অর্থাৎ, প্রতি মনোনয়নে গড় সময় মেরেকেটে ৮-৯ মিনিট। তা-ও শেষ দিনে একেবারে যন্ত্রের মতো মসৃণ ভাবে এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না হলে, তবে।

তবে বুধবারের শেষে যে তথ্য কমিশন দিয়েছে, তাতে এক দিনে (মঙ্গলবার থেকে বুধবার) মনোনয়ন সংখ্যা বেড়েছে ৬৯,২৩০টি। তার মধ্যে তৃণমূল একাই দিয়েছে ৪০ হাজারের মতো মনোনয়ন। মঙ্গলবার তাদের মনোনয়ন সংখ্যা ছিল ৯৩২৮। বুধবারের শেষে তা হয়েছে ৪৯,৪৯১টি।

জেলা প্রশাসনিক কর্তারা জানাচ্ছেন, সব নথি এবং প্রস্তুতি ঠিক থাকলে, এক-একটি মনোনয়নে গড়ে ১৫-২০ মিনিট সময় লাগছে। কারণ, মনোনয়নে চার-পাঁচটি মূল নথি লাগে। সেগুলি যাচাই করতে হয় এবং নির্দিষ্ট বয়ান নথিবদ্ধ করতে হয়। কিন্তু বেশিরভাগ জায়গাতেই প্রার্থীদের আবেদনপত্র (ফর্ম) পূরণে সহযোগিতা করতে হচ্ছে আধিকারিকদের। তাতে সময় লাগছে বেশি। সব নথি না থাকলে, সময় নষ্ট হচ্ছে তাতেও।

তর্কের খাতিরে প্রশ্ন উঠতে পারে, বেলা ৩টের মধ্যে লাইনে দাঁড়ালে, মনোনয়ন তো জমা নেওয়া হবে রাত পর্যন্ত। কিন্তু প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, তা হয়েছে প্রথম পাঁচ দিনেও। সেই বাড়তি সময় মিলিয়ে যদি ১.৬২ লক্ষের মতো মনোনয়ন জমা পড়ে থাকে, তা হলে শেষ দিনে বাড়তি সময়ের জাদুতে ১.৩৮ লক্ষ জমা পড়বে কী করে?

বুধবার বিকেল পর্যন্ত মনোনয়নের দিনবৃদ্ধির বার্তা জেলা প্রশাসনগুলির কাছে পৌঁছয়নি। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ, “এত কম সময়ে এত মনোনয়ন জমা অসম্ভব। আদালত কমিশনের উপরে বিষয়টি ছেড়েছে। কিন্তু কমিশনের সদিচ্ছাই নেই।” সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, “ভোট ঘোষণার দিনই বলেছিলাম, মোট ২৪ ঘণ্টায় এত আসনে মনোনয়ন কী ভাবে সম্ভব! কিন্তু কমিশন কথা শোনেনি। শেষে তৃণমূলের সুবিধার জন্য সময় বাড়ালে, আলাদা ব্যাপার।” প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী বলেন, “বিরোধীদের অপ্রস্তুত দেখিয়ে নির্বাচন বার করে নিতে এমন অদ্ভুত সময়সীমা।” তৃণমূল নেতা তাপস রায়ের বক্তব্য, ‘‘তাঁরাই দিন-ঘণ্টা মাপছেন, যাঁদের এই ৭৩ হাজার আসনের জন্য প্রার্থীই নেই।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

WB panchayat Election 2023 West Bengal

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy