Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Nurse

শুভেচ্ছা আর স্বীকৃতির ঢল, উপভোগের ফুরসত নেই আজকের নাইটিঙ্গেল পলি-সোমাদের

সেবা করাই ধর্ম। চির কাল সে কাজই করে এসেছেন ওঁরা। কিন্তু গত প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে নিজেদের জীবন বাজি রেখেই লড়াইটা চালাচ্ছেন।

মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়েও অতিমারিতেও অবিচল সেবার কাজ।

মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়েও অতিমারিতেও অবিচল সেবার কাজ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ মে ২০২১ ২১:১৬
Share: Save:

ওঁরা পেশাদার। সেবা করাই ধর্ম। চির কাল সে কাজই করে এসেছেন ওঁরা। কিন্তু গত প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে নিজেদের জীবন বাজি রেখেই লড়াইটা চালাচ্ছেন। মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়েও অতিমারিতেও অবিচল সেবার কাজ। ১২ মে অর্থাৎ বুধবার ‘আন্তর্জাতিক নার্স দিবস’-এ নেটাগরিকরা তাঁদের শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছেন। ব্যক্তিগত স্তরেও পরিচিত পেশাদারদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অনেকে। কিন্তু সেই শুভেচ্ছা উপভোগের ফুরসত নেই ওঁদের। স্বীকৃতিরও কোনও প্রত্যাশা নেই। এমনটাই জানাচ্ছেন ওই পেশাদাররা।

সেবিকার পেশাকে সম্মান এবং স্বীকৃতির সঙ্গে প্রথম আলোকবৃত্তে নিয়ে এসেছিলেন ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল। তাঁকে নার্সিংয়ের আধুনিক পদ্ধতির স্রষ্টা হিসেবে মানা হয়। প্রদীপ হাতে রাতে অসুস্থ ব্যক্তিদের দেখতে বেরোতেন বলে ‘লেডি উইথ দ্য ল্যাম্প’ নামেও পরিচিত তিনি। ১৮২০ সালে ইতালির ফ্লোরেন্স শহরে জন্মেছিলেন। তাঁরই সম্মানে ১২ মে আন্তর্জাতিক নার্স দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

লিলুয়ায় ইস্টার্ন রেলের হাসপাতালে নার্স হিসেবে কর্মরত পলি ভট্টাচার্য। তিনি জানালেন, আনন্দ উপভোগ করার অবসরটুকুও নেই। অতিমারি পরিস্থিতিতে যে স্বীকৃতি তাঁদের দেওয়া হচ্ছে, তা নিয়ে বিন্দুমাত্র ভাবিতও নন পলি। তাঁর কথায়, ‘‘এ সব ভাবার এখন সময় নয়। অনেক কাজ। চার দিকে ভয়াবহ অবস্থা। প্রতি দিন এত মানুষকে অসুস্থ হতে দেখছি। ওঁদের জীবনে ফেরানোটাই এখন একমাত্র কাজ। আর কিছুই মাথা বা মনে ঢুকছে না।’’ পাশাপাশি তিনি পেশাদার হিসাবে নিজের ক্ষোভের কথাও গোপন রাখছেন না। বললেন, ‘‘নার্সদের যোগ্যতা নিয়ে ওয়াকিবহাল নন সাধারণ মানুষ। আর সেই কারণেই রাস্তাঘাটে বা খবরের কাগজে এখনও লোকে ‘নার্স চাই’ বলে বিজ্ঞাপন দেন। আমাদের জ্ঞান বা দায়িত্ব সম্পর্কে এখনও অনেকেই অবগত নন। তবে আমরা আমাদের কাজটা করে যাই। প্রত্যাশা নেই।’’

নার্স দিবসে শুভেচ্ছা পেয়ে সামান্য ভাল লাগা থাকলেও তা সাময়িক বলেই জানালেন নর্থ বেঙ্গল মেডিক্যাল কলেজে নার্স হিসাবে কর্মরত সোমা ঘোষ। তাঁর কথায়, ‘‘পিপিই পরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাসপাতালে কোভিড রোগীদের শুশ্রূষা করে যাওয়ার কাজটা খুব কষ্টকর। কিন্তু ও সব দিকে মন দেওয়ার সময় নেই। এক জন পেশাদার হিসেবে এটাই তো আমার দায়িত্ব। শুভেচ্ছা পেলে ভালই লাগে। কিন্তু এখন সে সময় নয়।’’ নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে সোমা বললেন, ‘‘প্রথম যে দিন পিপিই পরেছিলাম, সে দিন মনে হয়েছিল, নিজে কত ক্ষণ বেঁচে থাকব? নিজে বাঁচলে তবেই না অন্যকে বাঁচানোর কাজ করব! কখনও কখনও মনে হয়েছিল, নিজেকে বাঁচিয়ে রাখাই যেন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।’’ পাশাপাশি সোমা বলছেন, ‘‘কোভিড পরবর্তী পরিস্থিতিতে যদি এই সম্মান বা স্বীকৃতি পাই তবেই আসল আনন্দ।’’

পলি বা সোমার কথাই শোনা গেল বারাসত জেলা হাসপাতালে নার্সিং ট্রেনিং স্কুলের শিক্ষক নাসরিন নাজমার মুখেও। তাঁর কথায়, ‘‘এ পেশায় জেনেশুনেই এসেছি। এই পরিস্থিতিতে কাজ করতে কোনও অসুবিধা নেই। শুভেচ্ছা পেয়ে ভালই লেগেছে। তবে, অন্য সময় এটা পেলে আরও ভাল লাগবে।’’ ওঁদের তিন জনই এক বাক্যে জানিয়েছেন, শুরুতে লড়াইটা ভীষণই কঠিন ছিল। সর্ব ক্ষণ আতঙ্ক গ্রাস করে থাকত মনে। বাড়িতে পরিবার-পরিজন রয়েছে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধটা এখন অনেকটাই সহজ হয়ে গিয়েছে। সারাদিন নিরলস পরিশ্রমের পর যখন কোনও কোভিড রোগীকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যেতে দেখেন, তখন কিছুটা মানসিক শান্তি পাওয়া যায়।

বহরমপুর কোভিড হাসপাতালের পাশে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অন্তর্গত নার্সিং ট্রেনিং স্কুলের শিক্ষিকা বলাকা ভট্টাচার্য। তিনিও পলি-সোমাদের সঙ্গে এক মত। তাঁর কথায়, ‘‘কোভিড-যুদ্ধে নার্সরা একেবারে সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে দিন-রাত এক করে লড়াই করছেন। তাঁদের আরও বেশি উৎসাহ প্রাপ্য।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nurse Coronavirus in West Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE