সোমবার রাত তিনটের সময়ে প্রবল বেগে ঝোড়ো হাওয়া এসে ধাক্কা দেয় জানলার শার্সিতে। শব্দে ঘুম ভেঙে যায় কয়েক জনের। কেউ হোটেলের জানলা খুলে, কেউ দরজার বাইরে এসে দেখেন, প্রবল তুষারপাত শুরু হয়েছে। সেই তুষারপাত পরদিন সকালেও থামেনি। হাড় কাঁপিয়ে দেওয়া সেই ঠান্ডায় ভারী শীত পোশাকের অভাব বোধ করছিলেন সান্দাকফুতে আটকে পড়া পর্যটকেরা। শেষে বিপজ্জনক পথে, হাঁটু অবধি জমে থাকা বরফ পেরিয়ে নীচের গ্রামে নেমে এলেন তাঁদের অনেকে। ভরসা বলতে একটা লাঠি। শুধু দার্জিলিংয়ের সান্দাকফুই নয়, সিকিমের লাচুন, লাচেন, নাথুলা, এমনকি পড়শি দেশ ভুটানের থিম্পুতেও মঙ্গলবার তুষারপাত হয়। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, ঘূর্ণিঝড় ফেতাই আর পশ্চিমী ঝঞ্ঝার প্রভাবে উত্তরবঙ্গ ও সংলগ্ন এলাকায় ঠান্ডা বেড়েছে। পাহাড়ি এলাকায় তুষারপাতের সম্ভাবনাও তাই বেড়ে গিয়েছে। দার্জিলিংয়ের জোড়বাংলো আর টাইগার হিলে এ দিন কুচি শিলাবৃষ্টিও হয়েছে।
তবে বিপদে পড়েছেন সান্দাকফুতে ঘুরতে যাওয়া পর্যটকেরা। সেই দলে রয়েছেন বালির বাসিন্দা সাত যুবকও। সেই দলেরই দু’এক জন বলেন, ‘‘এই সময়ে এমন তুষারপাত হবে, ভাবতে পারিনি। তাই গরম পোশাক তুলনায় কম ছিল।’’ ওই দলেরই সদস্য গোবিন্দ হালদার জানান, তাঁরা জিটিএ-র হোটেলে উঠেছিলেন। সেখান থেকেই তাঁদের জানানো হয়, রাতে আরও তুষারপাত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই এ দিন বেলা থাকতেই স্থানীয় পোর্টারের সাহায্য নিয়ে হাতে লাঠি নিয়ে তাঁরা ১০ কিমি নীচে গুরদং গ্রামে নেমে আসেন।
কী ভাবে নামলেন তাঁরা? পর্যটকদের কয়েক জন জানান, শুধু একটা লাঠির ভরসায় বরফে ঢাকা ঢালু রাস্তা পেরিয়ে নীচে নামতে কষ্টই হয়েছে। বিপদও ছিল যথেষ্ট। কিন্তু উপায় ছিল না। গোবিন্দ বলেন, ‘‘রবিবার পৌঁছে দেখেছিলাম, সব জল জমে বরফ হয়ে গিয়েছে। সেই বরফ গলিয়ে জল জোগাড় করতে হচ্ছিল। কিন্তু আচমকা তুষারপাতের কবলে পরব, তা ভাবতে পারিনি।’’