পিতৃপক্ষের শেষে দেবীপক্ষের সূচনা। আজ, শুক্রবার মহালয়া। ভোর হতেই রে়ডিওয় মহিষাসুরমর্দিনী।
আবহবিজ্ঞানীরা বলছেন, হাওয়ার মতিগতি যা, তাতে শুক্রবার আক্ষরিক অর্থেই মিলবে শরতের আকাশ। কোনও নিম্নচাপ-ঘূর্ণাবর্ত বা নিম্নচাপ অক্ষরেখার দেখা নেই। ফলে দিনটা হবে নির্মেঘ। রোদঝলমলে।
কিন্তু ভূমিকার এই প্রসন্নতা গোটা পুজোয় বজায় থাকবে কি না, নিঃসন্দেহ হতে পারছেন না আবহবিদেরা। বেশ কয়েক দিন আবহাওয়াকে বেশ ফুরফুরে মেজাজে পাওয়া যাচ্ছে। এটা সত্যিই মহোৎসবে সামিল হওয়ার অনুকূল মনোভাব, নাকি ঝামেলা বাধানোর চুপচাপ প্রস্তুতি— সেই বিষয়ে সংশয় কাটছে না হাওয়া অফিসের। কেননা মরসুমের শুরু থেকে বর্ষার তুঘলকিপনার খেই পাওয়া যাচ্ছে না।
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘মহালয়া থেকে রবিবার পর্যন্ত তেমন বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই।’’ একই সঙ্গে হাওয়া অফিস স্বীকার করছে, পুজোয় আবহাওয়া কেমন থাকবে, সেই বিষয়ে তাদের দোলাচল কাটছে না। দেবীপক্ষের সূচনায় তারা আকাশের হাসিমুখের পূর্বাভাস দিচ্ছে ঠিকই। পুজোর আগে শেষ শনি-রবিবারের বাজারেও বর্ষাসুরের হামলার আশঙ্কা নেই বলে মনে করছেন আবহবিদেরা। কিন্তু পুরো পুজোটাই এমন নিশ্চিন্তে কাটবে, এটা বলে দেওয়া যাচ্ছে না। এ দিন পর্যন্ত অশনি-সঙ্কেত মেলেনি। কিন্তু আবহাওয়ার খামখেয়াল তাঁদের ভাবাচ্ছে। গত কয়েক দিনে মাঝেমধ্যে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষিপ্ত ভাবে বৃষ্টি হয়েছে। তাই পুজোর আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়ার আগে তার মতিগতি আরও খুঁটিয়ে পরীক্ষা করা দরকার।
আবহাওয়া দফতর দোলাচলে থাকায় চিন্তিত পুজোকর্তারাও। তাঁরা বলছেন, চলতি মাসের মাঝামাঝি থেকে তেমন বৃষ্টি না-হওয়ায় মণ্ডপ তৈরির কাজ নির্বিঘ্নেই সাঙ্গ হয়েছে। বিশেষ ঝামেলা পোহাতে হয়নি কুমোরটুলিকেও। ‘‘কিন্তু পুজোর সময় বৃষ্টি হামলা চালালে তো সব আয়োজনই মাটি হয়ে যাবে,’’ বলছেন কলকাতার এক নামী পুজোর সম্পাদক। কেউ কেউ আবার বলছেন, তৃতীয়া, চতুর্থী, পঞ্চমীতে বৃষ্টি হলে দুর্গা তো সপরিবার কুমোরটুলি থেকে মণ্ডপে পৌঁছতেই হিমশিম খাবেন। সে-ক্ষেত্রে শেষরক্ষা হবে কী ভাবে?
আবহবিদদের মাথাব্যথার কারণ, বর্ষা এখনও দক্ষিণবঙ্গ ছাড়েনি। হাওয়া অফিসের নির্ঘণ্ট অনুযায়ী ৮ অক্টোবর, সপ্তমীর দিন বর্ষার বিদায় নেওয়ার কথা। তবে সেটা নিছকই কাগজে-কলমে। বাস্তবে কী হবে, তার খুব স্পষ্ট আভাস দেওয়া যাচ্ছে না। কেননা গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা বলছে, বর্ষা নির্ঘণ্ট মেনে তো আসছেই না। আবার বিদায়ের সময়েও হাওয়া অফিসের পাঁজির তোয়াক্কা করছে না। শেষবেলায় হঠাৎ হঠাৎ জেগে ওঠা নিম্নচাপ বা ঘূর্ণাবর্তের কারিকুরিতে বর্ষার বিদায়লগ্ন বিলম্বিত লয়ে অক্টোবরের তৃতীয় বা চতুর্থ সপ্তাহে পৌঁছে যাচ্ছে।
এ বারেও বিদায় পর্বে নিম্নচাপ বা ঘূর্ণাবর্তের মতো কেউ বর্ষার পিছু টেনে ধরে কি না, উৎকণ্ঠা নিয়ে সে-দিকেই নজর রাখছে হাওয়া অফিস।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy