Advertisement
E-Paper

আন্দোলনকারীরা কি দুষ্কৃতী, বিতর্ক সম্পত্তি নষ্ট বিলে

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কয়েক দিন আগেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, আন্দোলনের নামে যাঁরা সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তি নষ্ট করবেন, তাঁদের জরিমানা করা হবে। প্রয়োজনে তাঁদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে নষ্ট সম্পত্তির ক্ষতিপূরণ সংগ্রহ করা হবে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৪:২৮

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কয়েক দিন আগেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, আন্দোলনের নামে যাঁরা সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তি নষ্ট করবেন, তাঁদের জরিমানা করা হবে। প্রয়োজনে তাঁদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে নষ্ট সম্পত্তির ক্ষতিপূরণ সংগ্রহ করা হবে। এই মর্মে বিলও আনা হবে বিধানসভায়। বিধানসভার চলতি অধিবেশনে আগামিকাল, বুধবার সেই বিল আসছে। যেখানে বলা হয়েছে, কিছু সমাজবিরোধী নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে। তাদের বিক্ষোভের পন্থা, সম্পত্তি পোড়ানো, লুঠ বা নষ্ট করার ঘটনাবলির জেরে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল মেনটেনেন্স অব পাবলিক অর্ডার অ্যাক্ট, ১৯৭২’- এ সংশোধনী আনার প্রয়োজন হয়েছে। যাতে ওই সব ঘটনায় অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া যায়। তাৎপর্যপূর্ণ হল, বিলের ওই বক্তব্য থেকে নতুন বিতর্কের জন্ম হয়েছে— তা হলে কি সরকার আন্দোলনকারীদের সমাজবিরোধী আখ্যা দিচ্ছে?

বিরোধীদের মতে, ভাঙড়, আউশগ্রাম, রসপুঞ্জ প্রভৃতি এলাকার সাম্প্রতিক আন্দোলনের প্রেক্ষিতে এই বিল আসছে। সুতরাং, ‘সমাজবিরোধী’ কথাটার মধ্য দিয়ে সেই সব জায়গার আন্দোলনকারীদের অপমান করা হচ্ছে। খসড়া বিলে আরও বলা হয়েছে, এলাকাবাসীরা এই ধরনের আন্দোলনের নামে হাঙ্গামা, সম্পত্তি নষ্ট করার মতো ঘটনায় যুক্ত থাকলে, মদত বা দুষ্কৃতীদের আশ্রয় দিলে তাঁদের সকলকেই ক্ষতিপূরণের দায় নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট এলাকায় ঢ্যাঁড়া পিটিয়ে বা অন্য কোনও উপায়ে সম্মিলিত ক্ষতিপূরণের কথা সরকার ঘোষণা করবে।

বিরোধী কংগ্রেস এবং বাম শিবিরের বক্তব্য, গণ আন্দোলন কোনও নির্দিষ্ট ছকে এগোয় না। মুখ্যমন্ত্রী বিরোধী নেত্রী থাকাকালীন সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময় নিজেই এই তত্ত্ব অনুশীলন করেছেন। এখন তাঁর জমানায় জমি ঘিরে কৃষকের ক্ষোভ বাড়ছে। আইন-শৃঙ্খলা এবং গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রশ্নেও সাধারণ মানুষ সরকারের উপর ক্ষুব্ধ হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বিরোধী দলগুলি যাতে জনস্বার্থে আন্দোলন করতে না পারে, তার জন্যই কালা আইন তৈরি করতে চাইছে মমতার সরকার। যা আদতে সংবিধান বিরোধী। এই বিল বিধানসভায় পাশ হলেও শেষ পর্যন্ত আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে বলে বিরোধীদের দাবি।

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর বক্তব্য, এ রাজ্যে পুলিশ দলদাসে পরিণত হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী সেই পুলিশকে নিরপেক্ষ ভাবে দায়িত্ব পালন করতে বলছেন না! অথচ, যাঁরা পুলিশের অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন, তাঁদের সবক শেখাতে বিল আনছেন! অধীরবাবুর কথায়, ‘‘ওই বিলের ছত্রে ছত্রে মুখ্যমন্ত্রীর স্বৈরাচারী মনোভাব ফুটে উঠেছে।’’

পাশাপাশি, বামেদের বক্তব্য, বিরোধী থাকাকালীন মমতা যে বিধানসভায় ভাঙচুরে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তার জন্য এই বিল আনার আগে তাঁরই জরিমানা দেওয়া উচিত। উপদ্রুত এলাকার জন্য প্রযোজ্য আইন বা মণিপুরের ‘আফস্পা’র সঙ্গে এই বিলের তুলনা করছে বামেদের একাংশ। তারা জানাচ্ছে, সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের জমানায় নকশাল দমনের জন্য যে আইন তৈরি হয়েছিল, সেটাকেই আরও কঠোর ভাবে আনছেন মমতা। তাদের আমলে সিদ্ধার্থ জমানার ওই আইন প্রয়োগ করা হয়নি বলে বামেদের দাবি। শিলিগুড়ির মেয়র তথা সিপিএম বিধায়ক অশোক ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘এটা একটা কালা বিল। বিধানসভায় তো এর বিরোধিতা আমরা করবই! বাইরেও তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলব। সব গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষকে এই বিলের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আবেদন জানাচ্ছি।

Protest Mamata Banerjee Property Destruction bill
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy