Advertisement
E-Paper

বেঙ্গালুরু থেকে পাঠিয়ে দেওয়া বাংলাদেশিদের নিয়ে মহা ফ্যাসাদে রাজ্য প্রশাসন, তথ্য চাইল উপদূতাবাস

কর্নাটক সরকারের পক্ষ থেকে রাজ্য সরকারকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল ওই ৫৯ জনকে রাজ্যের হাতে তুলে দেওয়ার বিষয়ে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৯ ১৯:০৮
শনিবার হাওড়া স্টেশনে বেঙ্গালুরু থেকে আটক করে আনা বাংলাদেশিরা।— ফাইল চিত্র

শনিবার হাওড়া স্টেশনে বেঙ্গালুরু থেকে আটক করে আনা বাংলাদেশিরা।— ফাইল চিত্র

গত শুক্রবার থেকে সোমবার সন্ধ্যা। তিন দিন পরেও ঠিক হল না বেঙ্গালুরু থেকে পাঠানো বাংলাদেশি সন্দেহে ধৃত ৫৯ জনের ভবিষ্যত্। উল্টে বেঙ্গালুরুতে ২৬ দিন আটক থাকার পর, এ বার হাওড়াতে কড়া পুলিশি নদরদারিতে আটক হয়েই রইলেন তাঁরা।

এ দিকে, ওই ৫৯ জনের খাওয়া-থাকার খরচ কোথা থেকে আসবে, তা নিয়ে বেজায় সমস্যায় হাওড়া জেলা প্রশাসন। সূত্রের খবর, সমস্যায় রাজ্য প্রশাসনও। এঁদের নিয়ে কী করা হবে, তা নিয়ে কোনও স্পষ্ট নীতি নির্ধারণ এখনও করতে পারেনি নবান্ন। এর মধ্যেই গোটা বিষয় জানতে চেয়ে নবান্নের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে কলকাতার বাংলাদেশ উপদূতাবাস। ফলে এঁদের ভবিষ্যত নির্ধারিত হতে লম্বা সময় লাগবে বলে ধারণা প্রশাসনের কর্তাদের।

নবান্ন সূত্রে খবর, কর্নাটক সরকারের পক্ষ থেকে রাজ্য সরকারকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল ওই ৫৯ জনকে রাজ্যের হাতে তুলে দেওয়ার বিষয়ে। রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘কর্নাটক সরকারের পক্ষে জানানো হয়েছিল, তারা সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করে রেখেছে। রাজ্য পুলিশ ওই ৫৯ জনকে তুলে দেবে সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর হাতে।”

আরও পড়ুন: দীর্ঘ টানাপড়েন, বিদায় নিলেন ফডণবীস, মহা-নাট্যমঞ্চে নতুন নায়ক উদ্ধব ঠাকরে

কিন্তু ওই ৫৯ জন পৌঁছনোর পর সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া পাননি রাজ্য পুলিশের কর্তারা। রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় রাখার দায়িত্ব রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের সীমান্ত শাখার।” সেই সমন্বয়ের অভাবে রেল পুলিশের উপর দায়িত্ব পড়ে ওই ৫৯ জনকে রাখার। পুলিশ সূত্রের খবর, এত জনকে রাখার মতো কোনও ব্যবস্থা রেল পুলিশের ছিল না। হাওড়া কমিশনারেটের হাত ঘুরে গোটা বিষয়টি পৌঁছয় হাওড়ার সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে।

হাওড়ার নিশ্চিন্দায় এই স্বনিযুক্তি কেন্দ্রের তিনতলাতেই থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে আটক বাংলাদেশিদের।—নিজস্ব চিত্র

জেলা প্রশাসনের এক কর্তা সোমবার দাবি করেন, সাংসদ জানিয়েছিলেন ইডেনে পিঙ্ক বল টেস্ট দেখতে বাংলাদেশের অতিথিদের থাকার ব্যবস্থা করতে। জেলা প্রশাসনের অন্য এক কর্তা বলেন, ‘‘ফোনটা এসেছিল সন্ধ্যায়। তড়িঘড়ি বালি জগাছার ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসার অসিত বরণ ঘোষ নিশ্চিন্দা থানার ইনস্পেক্টরকে সঙ্গে নিয়ে ওই স্বনিযুক্তি কেন্দ্রে অতিথিদের থাকার ব্যবস্থা করেন।” ওই স্বনিযুক্তি কেন্দ্রের তিন তলার ছ’টি ঘরে থাকার ব্যবস্থা করা হয়। বালিশ-বিছানা খাবার সবই বন্দোবস্ত করা হয় ব্লক প্রশাসনের তরফে। পরে রাতে ওই ৫৯ জন পুলিশ প্রহরায় আসার পর জানা যায় আসল ঘটনা। ৫৯ জনকে এক বাড়িতে ধরানো যায়নি। ফলে ওই এলাকার আরও একটি জায়গায় থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে প্রায় ২০ জনের।

জেলা প্রশাসন জানে না, কত দিন এঁদের রাখতে হবে বা ওই ৫৯ জনের খাওয়া দাওয়ার জন্য কোন খাত থেকে খরচ করা হবে। এ বিষয়ে অসিতবাবুকে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে ফোনে সাংসদ প্রসূনবাবুকে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘‘আমার কাছে বিষয়টা এসেছিল। আমি ব্যবস্থা করে দিয়েছি থাকার। আমার এলাকায় কেউ এলে যাতে ভাল ভাবে থাকেন সেটাই চেষ্টা করি।” তবে অনুপ্রবেশকারী হিসাবে আটক জেনেই তিনি ব্যবস্থা করেছিলেন কি না তা নিয়ে কোনও কথা বলেননি সাংসদ।

হাওড়ায় পুলিশি ঘেরাটোপে থাকা আটক বাংলাদেশিদের মধ্যে রয়েছে ৪ শিশুও। —নিজস্ব চিত্র।

অন্য দিকে নবান্ন সূত্রে খবর, বাংলাদেশ উপদূতাবাসও খোঁজ নেওয়া শুরু করেছে গোটা বিষয় নিয়ে। উপদূতাবাস সূত্রে খবর, তাঁদের কাছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের চিঠি আসে। সংবাদ মাধ্যমেও প্রকাশ্যে আসে ‘পুশ ব্যাক’ বিষয়টি। এ নিয়ে খোঁজ খবর শুরু করতেই কর্নাটক সরকার পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে যে চিঠি দিয়েছিল তা ফরওয়ার্ড করা হয়েছে উপদূতাবাসকে। ফলে যাঁদের বেআইনি অনুপ্রবেশকারী হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে, তাঁরা বাংলাদেশি কি না তা খতিয়ে দেখবেন বাংলাদেশের কূটনীতিকরাও। সেই সঙ্গে মানবাধিকার সংগঠন মাসুমের পক্ষে ‘পুশ ব্যাক’-এর বিরোধিতা করে চিঠি দেওয়া হয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকেও। এ দিন অসিত বরণ ঘোষের সঙ্গে দেখা করেন এপিডিআর-র অধিকার কর্মীরা। সংগঠনের সহ সম্পাদর আলতাফ আহমেদ বলেন, ‘‘কোনও আদালতে পেশ না করেই, তাঁদের অপরাধ বিচার না করেই, এক মাস ধরে বিভিন্ন ভাবে এঁদের পুলিশ হেফাজতেই রাখা হচ্ছে। এটা পুরোটাই মানবাধিকার লঙ্ঘন।” অধিকার কর্মীরা দাবি করেছেন, গত কয়েক মাস ধরে অত্যন্ত গোপনে কয়েকশো মানুষকে এ ভাবে জোর করে সীমান্ত পার করিয়ে দেওয়া হয়েছে। সীমান্তের ওপারে তাঁদের বেআইনি অনুপ্রবেশকারী হিসাবে গ্রেফতার করে জেলে ভরছে বাংলাদেশ সরকার। ফলে এই মানুষদের অস্তিত্ব সঙ্কটে। তবে সব কিছুর মধ্যে জেলা প্রশাসনের কর্তাদের চিন্তা একটাই, আরও ক’দিন ‘অতিথি’-দের দায় বহন করতে হবে।

আরও পড়ুন: মহা-নাটকের যবনিকা পতন, রাজ্যপালের কাছে ইস্তফা দিয়ে এলেন দেবেন্দ্র ফডণবীস

অক্টোবর মাসের বিভিন্ন সময়ে ওই ৫৯ জন বাংলাভাষীকেই বেআইনি অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশি হিসাবে চিহ্নিত করে বেঙ্গালুরু পুলিশ। তাঁদের সেখানকার একটি হোমে ২৬ দিন আটক করে রাখা হয়। তার পরই সরকারি স্তরে স্থির করা হয় ওই আটকদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে যাকে প্রশাসনিক পরিভাষায় বলে ‘পুশ ব্যাক’। ২২ নভেম্বর ওই ৫৯ জনকে অন্ধ্রপ্রদেশের প্রশান্ত নিলয়ম স্টেশন থেকে হাওড়াগামী ট্রেনের একটি আলাদা কোচে বেঙ্গালুরু পুলিশের ৪০ জনের নজরদারিতে রওনা করা হয়। পরের দিন হাওড়া স্টেশনে ট্রেন পৌঁছলে বেঙ্গালুরু পুলিশ রাজ্য সরকারের রেল পুলিশের হাতে তাঁদের তুলে দেয়।

Bangladeshi State Administration Karnataka Government
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy