Advertisement
E-Paper

লাগবে ঋণ, বাড়িয়ে দাও জিডিপি

কেন্দ্র না মানলেও নবান্ন প্রতি বছরই নিজের করা হিসেবই পেশ করে চলেছে। তাতে গত বছর রাজ্যের বৃদ্ধির হার দেখানো হয়েছে ১৫%। যা দেশের আর্থিক বৃদ্ধির প্রায় আড়াই গুণ।

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় ও প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:২২

জেদাজেদি এ বার জিডিপি নিয়ে! এবং তা পাঁচ বছরেও মিটল না।

এর জেরে ২০১১-১২ সাল থেকে থেকে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের আর্থিক বৃদ্ধি এবং মোট অভ্যম্তরীণ উৎপাদন (এসজিপিডি)-এর কোনও তথ্য প্রকাশ করছে না। কেন্দ্র জানিয়ে দিয়েছে, আর্থিক বৃদ্ধি ও জিডিপি নিয়ে রাজ্যের একপেশে দাবির কোনও পোক্ত ভিত্তি নেই। ফলে তা মানবে না কেন্দ্র। সে জন্য ২০১৭-১৮-এর আর্থিক সমীক্ষায় সব রাজ্যের জিডিপি প্রকাশ করা হলেও, ব্যতিক্রম কেবলমাত্র পশ্চিমবঙ্গ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশাসনও অবশ্য এ নিয়ে অনড়। কেন্দ্র না মানলেও নবান্ন প্রতি বছরই নিজের করা হিসেবই পেশ করে চলেছে। তাতে গত বছর রাজ্যের বৃদ্ধির হার দেখানো হয়েছে ১৫%। যা দেশের আর্থিক বৃদ্ধির প্রায় আড়াই গুণ।

কিন্তু এই জেদাজেদির কারণ কী?

নবান্নের খবর, আগে রাজ্যের জিডিপি মাপা হত রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তৈরি করা নমুনা সমীক্ষার উপর ভিত্তি করে। ২০১১-১২ সালে সেই পদ্ধতিতে বদল আনে কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান মন্ত্রক। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নমুনার চেয়ে অনেক বেশি সংখ্যক নমুনা নিয়ে কেন্দ্রীয় কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রক নতুন সমীক্ষা চালায়। তাতে শিল্প, কৃষি,পরিষেবা ইত্যাদি নিয়ে বিস্তারিত তথ্য নেওয়া হয়। যা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রে বিস্তারিত ছিল না। সেই সমীক্ষাকে ভিত্তি করেই কেন্দ্র-রাজ্য আলোচনা সাপেক্ষে রাজ্যের নতুন জিডিপি তৈরি হওয়ার কথা। যা মানতে রাজি নয় নবান্ন।

অর্থ কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, এখন রাজ্যের কোষাগার সচল রয়েছে বাজারি ঋণের উপর। ফলে যত বেশি জিডিপি দেখানো যাবে, সেই অনুপাতে বাজার থেকে আরও বেশি ধার নেওয়া যাবে। নিয়ম মতো, জিডিপি-র ৩% সহজেই বাজার থেকে ধার নেওয়া যায়। ২০১৮-১৯ সালের ৪৪ হাজার কোটি ধার নিতে হলে সেই হারেই জিডিপি-র পরিমাপ করেছে রাজ্য। কিন্তু কেন্দ্রের নতুন হিসাবে সেই ‘পরিকল্পনা’ বানচাল হওয়ার জোগাড় হয়েছে। তাতেই মূল আপত্তি নবান্নের।

নবান্নের ব্যাখ্যা, জিডিপি তৈরির ক্ষেত্রে যে তথ্য নেওয়া হয় তার ৪০% ‘ইনপুট’ রাজ্য দিয়ে থাকে, বাকি ৬০% তথ্য দেয় কেন্দ্র। এক কর্তার কথায়,‘‘উৎপাদন শিল্প, কৃষি উৎপাদন, ক্ষুদ্র শিল্প ইত্যাদির তথ্য রাজ্য দেয়। আবার বন সৃজন, পরিষেবা শিল্প, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, রেল, বন্দরের মতো শিল্পক্ষেত্রের বৃদ্ধির হিসাব দেয় কেন্দ্র। দুই হিসাব মিলিয়ে তৈরি হয় রাজ্যের জিডিপি। কিন্তু কেন্দ্রীয় কর্পোরেট মন্ত্রকের সমীক্ষা যে তথ্য উঠে এসেছিল, তা আমাদের মনোমত হয়নি। ফলে আমরা তা মেনে নিইনি।’’ যে লড়াই চলছে পাঁচ বছর ধরে। কেন মেনে নেওয়া হয়নি তার ব্যাখ্যাও করেছেন ওই অর্থ কর্তা। তিনি জানান, নতুন হিসাবমতো রাজ্যের জিডিপি মেনে নিলে তার বহর যা হত, তাতে সমস্যা হত। কেন্দ্রের পরিসংখ্যান মানলে আর্থিক বৃদ্ধিও অন্তত ৩% কম হত। কমে হত রাজ্যের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের পরিমাণও।

যদিও বিবাদ এড়িয়ে কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান মন্ত্রকের সচিব টি সি এ অনন্ত বলেন, ‘‘রাজ্যগুলির পরিসংখ্যান মেনে নেওয়ার পিছনে একটি প্রক্রিয়া থাকে। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে সেই প্রক্রিয়াটি এখনও শেষ হয়নি। রাজ্যের পরিসংখ্যান নিয়ে সিএসও (কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান দফতর)-র আলাপ-আলোচনা চলছে।’’ নবান্নের খবর, রাজ্যের অর্থ কর্তাদের সঙ্গে দিল্লির শেষ বৈঠক হয়েছে গত নভেম্বরে। তার পরেও অবশ্য রাজ্যের যুক্তি মেনে নেওয়ার কোনও ইঙ্গিত এখনও আসেনি। অপেক্ষা করা হচ্ছে ফেব্রুয়ারি মাসে নতুন রিপোর্টে রাজ্যের উল্লেখ থাকে কি না তা দেখার। এ নিয়ে সংশয় যদিও এখনও রয়েছে। এ প্রসঙ্গে অনন্তের জবাব, ‘‘দু’পক্ষ মিলে পরিসংখ্যান চূড়ান্ত করার চেষ্টা হচ্ছে। সংশয় থাকবে কেন?’’

Economy GDP Growth Rate জিডিপি আর্থিক বৃদ্ধি
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy