নতু কমিটি নিয়ে জল্পনার শেষ নেই। গ্রাফিক: সৌভিক দেবনাথ
কলকাতা পুরভোটের ফলপ্রকাশ মঙ্গলবার। রাজ্য বিজেপি নেতাদের সঙ্গে কথা বললেই মালুম হচ্ছে যে, সেই ফল নিয়ে তাঁদের যত না কৌতূহল তার চেয়ে বেশি চিন্তা রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমজারের টেবিলের ড্রয়ারে ঢোকানো খামে কী আছে তা নিয়ে। আসলে গত কয়েক মাস ধরে বিজেপি-র নতুন রাজ্য কমিটি নিয়ে যে জল্পনা চলছে তা নাকি ইতিমধ্যেই তৈরি হয়ে গিয়েছে। এখন শুধুই ঘোষণার অপেক্ষা। কবে ঘোষণা হতে পারে তা নিয়েও নানা মত। কেউ কেউ বলছেন কলকাতা পুরভোটের ফল ঘোষণার পরেই জানা যাবে নতুন কমিটিতে কারা জায়গা পেলেন আর কারা বাদ পড়লেন। আবার অনেকের বক্তব্য, দলের পক্ষে ‘অপয়া’ ২০২১ সালে আর নতুন কমিটি নয়, নতুন বছরে নতুন কমিটি কাজ শুরু করবে।
বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা জানুয়ারির শুরুর দিকে রাজ্যে আসতে পারেন। সেই সময়ে কলকাতায় সাংগঠনিক বৈঠক ছাড়াও কিছু কর্মসূচি নেওয়া হতে পারে। এমনটাও ভাবা হচ্ছে যে, নতুন বছরে নড্ডার কর্মসূচির দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে নতুন কমিটির হাতে। আবার নতুন কমিটিকে কাজের নির্দেশিকাও দেবেন তিনি। রাজ্য বিজেপি-র কেউ কেউ বলছেন, আগামী ২৫ ডিসেম্বর প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর জন্মদিনে দেশব্যাপী ‘সুশাসন দিবস’ পালন করবে বিজেপি। বাংলাতেও বিভিন্ন জায়গায় নানা কর্মসূচি নিয়েছে রাজ্য বিজেপি। সেই কর্মসূচি শেষের আগে নতুন কমিটি ঘোষণা হবে না।
ওই কর্মসূচির আগে নতুন কমিটি ঘোষণা হওয়ায় কিছু সমস্যাও রয়েছে। সুকান্ত এখন রয়েছেন বালুরঘাটে। কলকাতা পুরভোটের ফল ঘোষণার দিন অর্থাৎ মঙ্গলবার তিনি কলকাতায় এলেও বুধ ও বৃহস্পতিবার দিল্লিতে থাকবেন বলে জানা গিয়েছে। শীতকালীন অধিবেশনের শেষ দু’দিনে সংসদে একাধিক বিল পাশের পরিকল্পনা রয়েছে কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপি-র। সে কারণে লোকসভায় হুইপ জারি হতে পারে। সেটা হলে সাংসদ সুকান্তকে লোকসভায় অংশ নিতে হবে। তিনি ফিরে নতুন কমিটি ঘোষণা করবেন।
বিজেপি-র সংবিধান অনুসারে সভাপতি বদল হলে তিনিই নতুন কমিটি তৈরি করেন। সুকান্ত রাজ্য বিজেপি সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন গত ২০ সেপ্টেম্বর। তার পর তিন মাস পার হয়ে গিয়েছে। দিলীপ ঘোষ রাজ্য সভাপতি হওয়ার পরে প্রথম পূর্ণ রাজ্য কমিটি ঘোষণা করেছিলেন ২০১৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর। সেই কমিটির ঠিক ছ’বছর পূর্ণ হচ্ছে আগামী সপ্তাহেই। তবে ওই কমিটিতে কিছু সংযোজন হয় ২০২০ সালের জুন মাসে। বিধানসভা ভোটের প্রস্তুতি পর্বে সেই কমিটিতে ছিলেন ১২ জন সহ-সভাপতি। পাঁচ জন সাধারণ সম্পাদক ও দশ জন সম্পাদক। দশ সম্পাদকের মধ্যে ছিলেন এখন তৃণমূলে ফিরে যাওয়া সব্যসাচী দত্ত। বাকি সকলে বিজেপি-তেই রয়েছেন। গেরুয়া শিবির সূত্রে খবর, এই কমিটির অনেকটাই রদবদল করতে চান সুকান্ত। ইতিমধ্যেই সেই কমিটি নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর আলোচনা হয়ে গিয়েছে।
বিজেপি-র সংবিধান অনুযায়ী, রাজ্য সভাপতির পাশাপাশি সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) পদে মনোনয়ন দেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তাই সুকান্তের টিমে থাকছেন অমিতাভ চক্রবর্তী। তবে এ বার অমিতাভের একাধিক সহকারীর নাম ঘোষণা হতে পারে। প্রসঙ্গত অতীতেও রাজ্য বিজেপি-তে দু’জন সহকারি সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) ছিলেন। বিজেপি-র রাজ্য কমিটিতে সভাপতির পরেই গুরুত্বপূর্ণ সাধারণ সম্পাদক পদ। এখন সেই পদে রয়েছেন সায়ন্তন বসু, সঞ্জয় সিংহ, রথীন্দ্র বসু, জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাতো এবং লকেট চট্টোপাধ্যায়। বিজেপি সূত্রে খবর, এ বার পুরুলিয়ার সাংসদ জ্যোতির্ময় ছাড়া বাকি চার জনের জায়গায় নতুন মুখ আসতে পারে। হুগলির সাংসদ লকেট পেতে পারেন কোনও সর্বভারতীয় দায়িত্ব।
রাজ্য কমিটিতে কারা নতুন আসবেন, তা নিয়ে নানা জল্পনা চললেও এটা জানা গিয়েছে যে, এ বার অনেক তরুণ মুখকে সামনে আনতে চাইছেন সুকান্ত। গত বিধানসভা নির্বাচনে স্বপ্নভঙ্গ হওয়ার পরে এবং অন্য দল থেকে আসা কয়েক জন ফিরে যাওয়ায় সুকান্ত চাইছেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠরাই রাজ্য কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে বেশি করে থাকুন। শুধু বিজেপি নয়, একই সঙ্গে শাখা সংগঠনগুলির মাথাতেও সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠদের বসানোর পরিকল্পনা রাজ্য বিজেপি-র।
বিজেপি শিবিরে শোনা যাচ্ছে, এ বার যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি পদ থেকে সরানো হতে পারে বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁকে। তার জায়গায় কে আসবেন তা নিয়ে নানা জল্পনা থাকলেও একাধিক রাজ্য নেতার বক্তব্য, দলের পুরনো কাউকেই আনা হবে, নতুন কাউকে নয়। আবার মহিলা মোর্চার রাজ্য সভানেত্রী অগ্নিমিত্রা পাল আসতে পারেন মূল সংগঠনে। আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক অগ্নিমিত্রাকে বিধানসভার ভিতরে তো বটেই, বাইরেও বিভিন্ন কর্মসূচিতে দলের মহিলা মুখ হিসেবে দেখা যাচ্ছে। তার জায়গায় কাকে আনা হবে তা নিয়েও চলছে জোর জল্পনা। অগ্নিমিত্রার আগে লকেট এবং তারও আগে রূপা গঙ্গোপাধ্যায় মহিলা মোর্চার রাজ্য সভানেত্রী হয়েছিলেন। দুই অভিনেত্রী ও এক জন বিশিষ্ট পোশাকশিল্পী, পর পর তিন সেলেব সভানেত্রীর পরে এ বার মহিলা মোর্চা পেতে পারে দলে পুরনো কোনও তরুণ মুখকে।
সুকান্ত যে দিনই কমিটি ঘোষণা করুণ আগামী ছ’মাসের মধ্যে রাজ্যের সর্বত্র বুথ স্তর থেকে সাংগঠনিক রদবদল হবে বিজেপি-র। কারণ, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে বিজেপি-র সাংগঠনিক নির্বাচন। সেই মাসে বুথ সভাপতি ও অক্টোবরে মণ্ডল সভাপতি নির্বাচন হওয়ার কথা। পুজোর পরে হবে রাজ্যের সব জেলার সভাপতি নির্বাচন। অবশেষে সাংগঠনিক ভাবে জিতে আসতে হবে সুকান্তকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy