Advertisement
E-Paper

মমতার সুরে স্বীকৃতি, স্বস্তি বিজেপিতে

রাজ্য এবং জাতীয় স্তরে বিজেপি-কে মোকাবিলা করার জন্য দলকে আরও তৎপর হতে নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তাতে খুশি হয়েছে বিজেপি-ই! বস্তুত, মুখ্যমন্ত্রীর আক্রমণের বার্তা প্রকাশ্যে আসায় গেরুয়া শিবিরে আনন্দ এবং উৎসাহ দ্বিগুণ বেড়ে গিয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:৩৬
—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

রাজ্য এবং জাতীয় স্তরে বিজেপি-কে মোকাবিলা করার জন্য দলকে আরও তৎপর হতে নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তাতে খুশি হয়েছে বিজেপি-ই! বস্তুত, মুখ্যমন্ত্রীর আক্রমণের বার্তা প্রকাশ্যে আসায় গেরুয়া শিবিরে আনন্দ এবং উৎসাহ দ্বিগুণ বেড়ে গিয়েছে। তাদের বক্তব্য, দল যে আন্দোলনের পথে নেমে সরকার ও শাসক দলের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠছে, মমতার বক্তব্যই তার প্রমাণ। এর অর্থ, এ রাজ্যে বিরোধী রাজনীতির পরিসরে গুরুত্ব বাড়ছে বিজেপি-র। সুতরাং, দলের খুশির কারণ দেখা যাচ্ছে বৈকী! আর বিজেপি যে কারণে খুশি হচ্ছে, সেই কারণকে সামনে রেখেই বাম ও কংগ্রেসের রাজ্য নেতৃত্ব মনে করছেন, জেনেবুঝেই বাকি বিরোধীদের আমল না দিয়ে গেরুয়া শিবিরের গুরুত্ব বাড়িয়ে দিচ্ছেন তৃণমূল নেত্রী। যাতে মেরুকরণে দু’তরফেরই ফায়দা হয়।

মমতা শনিবার তাঁর কালীঘাটের বাড়িতে তৃণমূলের বৈঠকে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইকেই বেশি গুরুত্ব দেন। তাঁর বার্তা ছিল— রাজ্য এবং দিল্লি, দুই ক্ষেত্রেই বিজেপি-র বিপদকে মোকাবিলা করতে হবে শক্ত হাতে। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি কোথাও দল হিসাবে, কোথাও সঙ্ঘ পরিবারের অন্যান্য সংগঠনের পতাকা নিয়ে বিভাজনের বিষ ছড়াচ্ছে। কারণ, রাজ্যে মেরুকরণ তীব্র করার মধ্য দিয়ে সংগঠন মজবুত করা ও ভোট বাড়ানো তাদের লক্ষ্য। এই বিভাজনের রাজনীতি সম্পর্কে মানুষকে সচতেন করতে ৩ থেকে ১১ নভেম্বর প্রতি ব্লকে দলের নেতা-কর্মীদের পথসভা করার নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। পাশাপাশিই, তিনি বলেছেন, বিজেপি-র বিভাজনের কৌশল সম্পর্কে একটি পুস্তিকাও কালীপুজোর আগেই প্রকাশ করতে হবে। সর্বভারতীয় স্তরে বিজেপি-কে মোকাবিলা করার জন্য সব আঞ্চলিক ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে নিয়ে একটা ফ্রন্ট গঠনের বার্তাও ওই বৈঠকে স্পষ্ট করে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। তাঁর আরও বক্তব্য, জাতীয় স্তরে ওই ফ্রন্টে সঙ্গে নিতে হবে কংগ্রেসকেও।

মমতার এই বক্তব্যকে নিজেদের পক্ষে ইতিবাচক হিসাবেই দেখছেন বিজেপি নেতৃত্ব। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর কথা থেকে পরিষ্কার, আমরা ঠিক পথেই এগোচ্ছি। কংগ্রেস-সিপিএমকে তো ওঁর দল খেয়েই ফেলেছে! আছি শুধু আমরা। আমাদের খেতে পারছে না বলে ওদের অসুবিধে হচ্ছে। তাই মুখ্যমন্ত্রী এ সব বলছেন।’’ দিলীপবাবুর দাবি, ‘‘আমাদের প্রচার ও আন্দোলনে যে ফল হচ্ছে, সেটা তো মুখ্যমন্ত্রীই বলে দিচ্ছেন। এটা হওয়ারই ছিল। একটু তাড়াতাড়ি হচ্ছে বলে ভাল লাগছে।’’ বিজেপি-র কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহেরও বক্তব্য, এ রাজ্যে তৃণমূলের মূল প্রতিপক্ষ ছিল সিপিএম। কিন্তু তারা এখন প্রায় শেষ। কংগ্রেসও এ রাজ্যে প্রায় অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। কিন্তু বিজেপি-র নিচু তলার কিছু কর্মী তৃণমূলে গেলেও বড় কোনও ভাঙন ওই দলে এখনও ধরেনি। সেই কারণে বিজেপি-কে তৃণমূল ভয় পাচ্ছে। রাহুলবাবুর আরও অভিমত, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বুঝেছেন, তাঁর তোষামোদের রাজনীতির প্রতিক্রিয়ায় সমাজের একটি অংশের ভোট বিজেপি-র দিকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে চলে আসতে পারে। তাই সতর্ক হচ্ছেন।’’

বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে রাজ্যের সহ-পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহ আবার মমতার বিরুদ্ধেই বিভাজনের রাজনীতির পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘যদি কোনও মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক কাজকর্মের অভিযোগ উঠে থাকে, তা হলে তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর সরকার। কলকাতা হাইকোর্ট এই অভিযোগে তাঁকে বিঁধেছে। ভারতে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়!’’

সিপিএম রাজ্য নেতৃত্বের অবশ্য অভিমত, মেরুকরণের রাজনীতিতে তৃণমূল ও বিজেপি পরিপূরক। সেই অবস্থান থেকেই মমতা বিজেপি-র বিভাজনের রাজনীতি মোকাবিলার প্রসঙ্গ এমন ভাবে দলীয় বৈঠকে তুলেছেন, যাতে সেটা চর্চার বিষয় হয়ে ওঠে। তা হলে বিজেপি-র শক্তিবৃদ্ধির বার্তা সমাজে পৌঁছবে, অন্য দিকে মেরুকরণও জোরদার হবে। কংগ্রেসের প্রদেশ নেতৃত্বও বলছেন, সংসদে সরকারের মোকাবিলায় বিরোধী দলগুলির মধ্যে সমন্বয় হয়েই থাকে। আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে কংগ্রেস-তৃণমূল কাছাকাছি আসবে কি না, হাইকম্যান্ডই ঠিক করবে। তবে এ রাজ্যে মেরুকরণের রাজনীতিতে তৃণমূল মদত দিচ্ছে এবং তাতে বিজেপি-র ফায়দা হচ্ছে বলে তাঁরাও মনে করেন।

bjp mamata bandopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy