অবাস্তব পরিকল্পনা বলে দাবি করে অবিলম্বে ভোটার তালিকার বিশেষ ও নিবিড় সংশোধন বা এসআইআর স্থগিত করার দাবি জানালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রতিক্রিয়ায় মুখ্যমন্ত্রীর এই দাবিকে তৃণমূলের বিপন্নতার প্রমাণ হিসেবেই উল্লেখ করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য।
সোমবার শিলিগুড়ির সরকারি মঞ্চ থেকে এই দাবি করলেও এসআইআর প্রক্রিয়ায় নথি সংগ্রহের কাজে সবরকম সাহায্য করতে তিনি প্রশাসনিক কর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন। সেই সূত্রেই কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে ফের এক বন্ধনীতে রেখে সোমবার তিনি বলেন, ‘‘নোটবন্দির পরে মানুষকে এসআইআর বন্দি করা হয়েছে।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘সরকার যাতে কোনও কাজ করতে না পারে তা-ই এসআইআর-এর নামে ‘সুপার এমার্জেন্সি’ জারি করা হয়েছে।’’
কেন্দ্রে শাসক বিজেপি ও নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে মমতা এ দিন বলেন, ‘‘বিহারে (এসআইআর) করতে পেরেছেন কারণ ওরা ধরতে পারেনি। বাংলা খুব শক্তিশালী। আমরা কিন্তু এখানে প্রতিটি জিনিস ধরব।’’ প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার টি এন শেষনের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘তিনি ( শেষন) বলতেন, নির্বাচন কমিশন মানুষের। ভারত সরকারের নয়।’’ কমিশনের উদ্দেশে মমতার প্রশ্ন, ‘‘এত বছর পর বাসিন্দা কি না জিজ্ঞাসা করার আপনি কে?’’ এ দিন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকেই নিশানা করেছেন তৃণমূল নেত্রী।
এই দাবির প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রীকে পাল্টা আক্রমণ করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। তিনি বলেন, ‘‘সমস্ত বিপন্নতা এবং বিপর্যয়কে আড়াল করতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এসআইআরকে ঢাল করতে। কিন্তু বাংলার মানুষ এতটা মূর্খ কিংবা রাজনৈতিক ভাবে অসচেতন ভাবার কারণ নেই।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘উনি (মমতা) লোকসভার স্পিকারের টেবিলে যে কাগজগুলো ছুড়ে মেরেছিলেন, সেগুলো এখন কোথায় আছে?"
এসআইআর-এর পরিকল্পনার বাস্তবতা নিয়ে লাগাতার তাঁরা যে প্রশ্ন তুলছেন, এ দিন তারই পুনরাবৃত্তি করে মমতা এ দিন বলেন, ‘‘ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন ঘোষণা হবে। বাড়িবাড়ি যেতে হবে। আগে দু’মাসে এই কাজ সম্পূর্ণ করা অসম্ভব।’’ তারপরই মমতা বলেন, ‘‘কোটি কোটি লোক এখনও ফর্মই (গণনাপত্র) পায়নি। অনেক ফর্ম পৌঁছয়নি। কারণ ওগুলো বিজেপি অফিসে রাখা আছে।’’ এ দিনের ওই সরকারি বৈঠক থেকেই জেলা শাসক সহ প্রশাসনিক কর্তাদের মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, ‘‘নিরপেক্ষ ভাবে সবাইকে এসআইআর করতে সাহায্য করবেন। যাদের কিছু নথি নেই অর্থাৎ বন্যার জলে হারিয়েছে বা কিছু হয়েছে তাদের নথি হারিয়ে থাকলে খোঁজ খবর নিয়ে নথি তৈরি করে দেবেন। যাতে লোককে আত্মহননের পথ বেছে নিতে না হয়।’’ ছিটমহলের বাসিন্দাদের এসআইআর সংক্রান্ত বিষয় বিশেষ ভাবে দেখতে বলেছেন তিনি।
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী এ দিন বলেছেন, ‘‘গরিব মানুষ বলেই কি মতুয়ারা ব্রাত্য? বিজেপি ও কমিশন বাংলাদেশি, রোহিঙ্গা খুঁজতে গিয়ে গরিবকে আক্রমণ করেছে।’’ এ দিকে ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম খোঁজায় সমস্যা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। তিনি লিখেছেন, একটি নাম দেখতে ১ হাজার লোকের নামের তালিকা ‘ডাউনলোড’ করতে হচ্ছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)