Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

সুচ-কাণ্ডের শিক্ষায় কন্যাশ্রী রক্ষার উদ্যোগ

এক দিকে বারবার শরীরে সুচ ফুটিয়ে শিশুটির মৃত্যুর ঘটনায় যৌন অপরাধে শিশু সুরক্ষা বা পক্সো আইন অনুযায়ী পুলিশি তদন্ত চলছে। শিশুটিকে খুনের অভিযোগে তার ‘সৎ বাবা’ সনাতন গোস্বামী ও খুনে মদতের অভিযোগে তার মা মঙ্গলাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৭ ০৪:৫৬
Share: Save:

তিন বছরের শিশুর মর্মান্তিক পরিণতি সামনে রেখেই দানা বাঁধছে হুঁশ ফেরানোর উদ্যোগ। পুরুলিয়ার সুচ-কাণ্ডে জেলাশাসকের একটি রিপোর্টকে হাতিয়ার করে এ বার কন্যাশ্রী তথা শিশুকন্যাদের বাঁচাতে পথে নামতে চায় রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশন।

সেই রিপোর্টে ঘটনাটির নেপথ্যে মৃত শিশুটির মায়ের বাল্যবিবাহের ‘ভূমিকা’র কথাও বলা হয়েছে। এক দিকে বারবার শরীরে সুচ ফুটিয়ে শিশুটির মৃত্যুর ঘটনায় যৌন অপরাধে শিশু সুরক্ষা বা পক্সো আইন অনুযায়ী পুলিশি তদন্ত চলছে। শিশুটিকে খুনের অভিযোগে তার ‘সৎ বাবা’ সনাতন গোস্বামী ও খুনে মদতের অভিযোগে তার মা মঙ্গলাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কিন্তু এর পাশাপাশি, এত বড় অপরাধের পিছনে সামাজিক কারণটি খুঁজতেও তৎপর হয়েছে শিশু সুরক্ষা কমিশন। কমিশনের উদ্যোগেই পুরুলিয়ার জেলাশাসকের তত্ত্বাবধানে তদন্ত কমিটি গড়ে সামাজিক অনুসন্ধানের কাজটি সারা হয়। ৮ জনের তদন্ত কমিটিতে সিধো-কানু বিশ্ববিদ্যালয়ের মনস্তত্ত্ববিদ ও সমাজতত্ত্বের শিক্ষকেরাও রয়েছেন। শিশু অধিকার রক্ষায় খামতির কারণগুলি খুঁজেছেন তাঁরা।

আরও পড়ুন: সৎ মেয়েকে সুচ ফুটিয়েছি: সনাতন

কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘মৃত শিশু ও তার মা— দু’জনের কেউই অপরিণত বয়সে প্রাপ্য মৌলিক অধিকারগুলির সুরক্ষা পায়নি। শিশুর স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নিরাপত্তার দাবিগুলি কেউ আমলই দেয়নি।’’ অভাবের তাড়নায় অভিযুক্ত মায়ের ১৫ বছর বয়সে বিয়ে ও ১৭-য় পড়তে না-পড়তে মেয়ের মা হওয়ার ঘটনাটি না-ঘটলে তাঁর সন্তানের এই পরিণতি হয়তো ঘটত না বলে কমিশনের কাছে পেশ করা রিপোর্টটিতে বলা হয়েছে।

জেলাশাসকের রিপোর্ট বলছে

• মঙ্গলার কম বয়সে বিয়ে, মা হওয়া ও দারিদ্রই তাঁকে সনাতনের ফাঁদে পা দিতে বাধ্য করেছিল।

• তিনি নিজেও নানা ভাবে সনাতনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

• অল্প বয়সে বিয়ে ও মা হওয়ার ফলে অপরিণতমনস্ক ছিলেন মঙ্গলা। হয়তো তাই সহজেই সনাতনের অপরাধের শরিক হন তিনি।

শিশু অধিকার সুনিশ্চিত করতে ও বাল্যবিবাহ রুখতে এই রিপোর্টটি দেখিয়েই পঞ্চায়েত স্তরে তৎপরতা বাড়ানোর সুপারিশ করবে শিশু সুরক্ষা কমিশন। এমনিতে বাল্যবিবাহ রুখতে রাজ্যের কন্যাশ্রী প্রকল্প বিশ্ব-দরবারে স্বীকৃতি পেয়েছে। দলমত নির্বিশেষে অনেকেই মানেন, নাবালিকাদের বিয়ে রুখতে কন্যাশ্রীর মাধ্যমে একটা স্পষ্ট দিশা পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু তা-বলে স্রেফ কন্যাশ্রীর মাধ্যমেই রাজ্য জুড়ে বাল্যবিবাহের মুশকিল আসান তো সম্ভব নয়! সমাজকল্যাণ দফতরের সচিব রোশনী সেনও মনে করেন, ‘‘কন্যাশ্রী হলো বাল্যবিবাহ রুখতে একটা জরুরি লড়াই। কিন্তু পুরোপুরি সফল হতে গেলে মেয়েদের কর্মসংস্থানের দরজা আরও খুলতে হবে।’’ এমনিতে পুরুলিয়া, বীরভূম বা মুর্শিদাবাদে কখনও-সখনও বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে বালিকাদের রুখে দাঁড়ানোর কাহিনি কাগজে শিরোনাম হয়। কিন্তু তা অবশ্যই ব্যতিক্রম। সার্বিক অন্ধকারের ছবিটা যে কম গভীর নয়, তা একবাক্যে মেনে নিচ্ছেন সরকারি কর্তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE