জামা খুলে পুলিশের সামনে দাঁড়িয়ে অধীর চৌধুরী বলেছিলেন, ‘‘চালা গুলি!’’ তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গুলি নয়, তাঁকে মামলায় বিদ্ধ করল পুলিশ।
বন্ধ করার জেরে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা বহরমপুরের সাংসদ অধীর ও তাঁর সহকর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশ স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে খুনের চেষ্টা-সহ একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা করল। বহরমপুর থানার সাব-ইন্সপেক্টর সুব্রত ইন্দ্রর দায়ের করা মামলায় অভিযুক্তদের তালিকায় সাংসদ ও সভাধিপতি ছাড়াও রয়েছেন জেলা পরিষদের ভূমি কর্মাধ্যক্ষ গৌতম সান্যাল ও সদস্য আশিস দে। এফআইআরে লেখা হয়েছে, সাংসদ ও সভাধিপতির নেতৃত্বে প্রায় পাঁচশো কংগ্রেস সমর্থক মঙ্গলবার বন্ধের সময় খুনের চেষ্টায় কর্মরত পুলিশ কর্মীদের উপর হামলা চালায়, মারধর করে, সরকারি বাস ও সম্পত্তি ভাঙচুর করে। মোট ১১টি ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, ‘‘বহরমপুর, হরিহরপাড়া, জিয়াগঞ্জ, কান্দি ও বড়ঞা মিলে মোট ৫টি থানা এলাকায় ৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।’’
তাঁর বিরুদ্ধে সরকারের মামলা নিয়ে বিচলিত নন অধীর। জামা খুলে তিনি বিক্ষোভ দেখানোর পরে মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে কটাক্ষ করেছিলেন। মামলার পরে অধীরের প্রতিক্রিয়া, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী আগেই বলেছিলেন, আমাকে ছবি বানিয়ে দেওয়া হবে। মাওবাদী নেতা কিষেণজি তাঁর নির্দেশে খুন হয়ে আজ ছবি হয়েছেন। আমাকে খুন করে ছবি বানিয়ে দেওয়ার মুখ্যমন্ত্রীর ষড়যন্ত্র সফল করার আগে আমাকে অপরাধী সাজাতে হবে। সেই ষড়যন্ত্র থেকে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এই মিথ্যা মামলা সাজানো হয়েছে।’’ এ দিন নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে দলের সংখ্যালঘু শাখার সম্মেলনে যোগ দিতে এসেছিলেন অধীর। সেখান থেকে দিল্লি যাওয়ার আগে অধীর বলেন,‘‘এ সব অনেক দেখা আছে! পারলে ওরা আমাকে গ্রেফতার করুক।’’
মিথ্যা মামলা সাজানোর বিষয়ে অধীরের ব্যাখ্যা, ‘‘বন্ধের সকালে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের গেটের সামনে বিধায়ক ফিরোজা বেগমকে পুলিশ লাঠিপেটা করলে আমি সেখানে ছুটে গিয়ে পিকেটিং করি। সেখানে কোনও পুলিশ বা সরকারি কর্মীর গায়ে একটি ফুলের ছিটেও পড়েনি! ডজনখানেক সাংবাদিকের ক্যামেরাতেই তা ধরা আছে।’’ সেখান থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে পঞ্চাননতলায় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে পিকেটিং-এ ছিলেন শিলাদিত্য হালদার, গৌতম সান্যাল ও আশিস দে। অধীর বলেন, ‘‘ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের গেটের সামনের পিকেটিং-এ শিলাদিত্য, গৌতম ও আশিস ছিল না। পঞ্চাননতলায় আমি ছিলাম না। সেখান থেকে ২ কিলোমিটার দূরে ওল্ড কালেক্টরেট মোড়ে বাস ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। তখন তো আমি জেলা কংগ্রেস ভবনে। অথচ পুলিশ তিনটি
পৃথক স্থানের সাজানো ঘটনায় কংগ্রেসের নেতা-কর্মীদের একটি মামলায় যুক্ত করেছে।’’
একই ভাবে দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটে বন্ধের দিন সরকারি দফতরের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ এবং সরকারি কাজে বাধা দানের অভিযোগ থানায় লিখিত ভাবে জানিয়েছেন বিএলআরও সুদীপ চন্দ। জেলা কংগ্রেস সভাপতি নীলাঞ্জন রায়ের অভিযোগ, ‘‘জেলায় বন্ধ ব্যর্থ করতে না পেরে প্রশাসন কংগ্রেসের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।’’ আবার উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের কর্ণজোড়ায় বন্ধ সমর্থকদের উপর আইএনটিটিইউসি কর্মীরা হামলা করেছে বলে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু জেলা পুলিশ সুপার মৃণাল মজুমদার এ দিন জানান, ইসলামপুর ও ইটাহারে জাতীয় সড়ক অবরোধ করার অভিযোগে অজ্ঞাতপরিচয় বন্ধ সমর্থকদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা হয়েছে। তাঁদের উপর হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে এ দিন রায়গঞ্জ-বালুরঘাট রাজ্য সড়ক প্রায় এক ঘণ্টা অবরোধ করেন কংগ্রেস কর্মীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy