অধীরের সেই প্রেস বিজ্ঞপ্তি
শুধু কি ইশারাই চলবে! নাকি স্পষ্ট করে মনের কথাটা বলবে দিল্লি?
জেলায় জেলায় একসঙ্গে পথে নামা শুরু হয়ে গিয়েছে ঠিকই। কিন্তু সেই সঙ্গেই এই প্রশ্ন তুলে কংগ্রেসের উপরে চাপ বাড়াতে শুরু করল সিপিএম। শুরু হয়ে গেল সিপিএম-কংগ্রেসের স্নায়ুর লড়াই!
পশ্চিমবঙ্গ-সহ পাঁচ রাজ্যে িধানসভা ভোটের দিনক্ষণ এই সপ্তাহেই ঘোষণা করতে পারে নির্বাচন কমিশন। অথচ কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এখনও কেন বাংলায় বামেদের সঙ্গে আসন সমঝোতার ব্যাপারে কোনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করছেন না, সেই প্রশ্ন তুলছে সিপিএম। জোটের আবহে রবিবার সকালে লোকচক্ষুর আড়ালে মধ্য কলকাতার এক ঠিকানায় আলোচনায় বসেছিলেন রাজ্য সিপিএমের এক শীর্ষ নেতা ও প্রদেশ কংগ্রেসের দুই জোটপন্থী নেতা। আলিমুদ্দিনের যুক্তি, কংগ্রেসের তরফে প্রকাশ্যে কোনও বিবৃতি না থাকলে মনে হবে সিপিএম একাই শুধু লম্ফঝম্প করছে! তা ছাড়া, কংগ্রেসের বক্তব্য প্রকাশ্যে এলে তখনই শর্তের কথা বামফ্রন্টের শরিকদের সামনে টেবিলে ফেলা যাবে।
ওই বৈঠকের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে রাতে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সুরেই বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে রক্ষা করতে এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির তরফে রাজ্যে সমস্ত গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে একজোট হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি’। যার প্রেক্ষিতে সিপিএমের এক পলিটব্যুরো সদস্যের বক্তব্য, ‘‘আমরা আগেই এই আহ্বান জানিয়ে কংগ্রেসকে অবস্থান স্পষ্ট করতে বলেছিলাম। তারা সেটা করতে পারলে ভাল!’’
অধীর বিবৃতি দিয়ে অবস্থান স্পষ্ট করে দিলেও সিপিএমের বড় অংশ এআইসিসি-র আনুষ্ঠানিক বক্তব্যের অপেক্ষা করছে। তবে তার জন্য আসন-রফা নিয়ে দু’পক্ষের আলোচনা থেমে রয়েছে, তা নয়। কিন্তু সেখানেও শুরু হয়েছে দড়ি টানাটানির খেলা! সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী প্রাথমিক ভাবে কংগ্রেসকে ৭০টির মধ্যে আসন ছাড়ার কথা ভেবেছে। প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব আবার অন্তত ১০০টি আসন চান বামেদের কাছে। এমতাবস্থায় এ দিন দু’দলের রাজ্য নেতৃত্বের প্রথম রাউন্ডের আলোচনায় অন্তত স্পষ্ট দিশা উঠে আসেনি। দিল্লিতে ইতিমধ্যে সীতারাম ইয়েচুরির সঙ্গে ঘরোয়া আলোচনা হয়েছে রাহুল গাঁধী থেকে শুরু করে আনন্দ শর্মা, সি পি জোশীদের। আসনের জট কাটাতে আবার তাঁদেরই মধ্যস্থতা চাইছেন দু’দলের রাজ্য নেতৃত্ব।
সমঝোতার ঘোষণার জন্য সিপিএমের চাপের মুখে কংগ্রেস নেতাদের যুক্তি, এআইসিসি-র সবুজ সঙ্কেত না থাকলে প্রদেশ সভাপতি কখনওই জোটের পক্ষে দলকে পথে নামিয়ে দিতে পারতেন না! বামেদের সঙ্গে আসন-রফার জন্য এআইসিসি-ই প্রদেশ নেতৃত্বকে দায়িত্ব দিয়েছে। এআইসিসি-র তরফে এ রাজ্যের ভারপ্রাপ্ত নেতা জোশী এ দিন আন্দবাজারকেও বলেছেন, ‘‘রাজ্যে নির্বাচনী বিষয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতিকেই। আর এআইসিসি-র আপত্তি থাকলে কি প্রদেশ স্তরে এত কিছু হতে পারতো?’’ প্রদেশ সভাপতি অধীরেরও একই সুর, ‘‘আমি কি এআইসিসি-র বাইরে গিয়ে কোনও কাজ করতে পারি?’’
সিপিএমের আবার আশঙ্কা, কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের কোনও ঘোষণা না থাকলে বিভ্রান্তি তৈরি হবে। তার ফায়দা নেবে তৃণমূল এবং বাম-কংগ্রেসের মধ্যে জোট-বিরোধী অংশও। ঠিক যে ভাবে তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিনই এন্টালির কর্মী সম্মেলনে দাবি করেছেন, লোকসভায় আলাপচারিতার ফাঁকে সনিয়া গাঁধী নাকি তাঁকে বলেছেন বাংলায় জোটের ব্যাপারে তাঁর কোনও ধারণা নেই! আলিমুদ্দিনের প্রশ্ন, এত অনিশ্চয়তা রেখে লাভ কী?
এই স্নায়ুযুদ্ধের মধ্যেই কংগ্রেস পাঁচ বছর আগের তিক্ত অভিজ্ঞতার পুনরাবৃত্তি চাইছে না। সে বার তৃণমূল দক্ষিণবঙ্গে কংগ্রেসকে বিশেষ কোনও আসনই ছাড়েনি! আর আলিমুদ্দিনের যুক্তি, বামফ্রন্টের কোটা থেকে কংগ্রেসকে আসন ছেড়ে শরিকদের জন্য সেই ঘাটতি সিপিএমকেই পূরণ করতে হবে। বিশিষ্টদের জন্যও আসন রাখতে হবে। তাই খুব বেশি আসন ত্যাগ কঠিন! কংগ্রেসের যুক্তি, তৃণমূলের তিক্ততা অতিক্রম করতে না পারলে বাম-পন্থী হয়ে কী হবে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy