মোদী সরকারের ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে এ বার খোদ পশ্চিমবঙ্গ সরকার সুপ্রিম কোর্টে মামলা করল। এর আগে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের হয়ে ওয়াকফ সংশোধনী আইনের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়েছে। বিভিন্ন বিজেপি-বিরোধী দলের সাংসদ, নেতানেত্রীরাও মামলা করেছেন। তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র মামলা করেছেন। তৃণমূল সংসদীয় দলের তরফে ডেরেক ও’ব্রায়েন ও কাকলি ঘোষ দস্তিদারও মামলা দায়ের করেছেন। কোনও রাজ্য সরকার এই প্রথম সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করল।
সোমবার সুপ্রিম কোর্টে দেশের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে যে সব মামলা হয়েছে, তার শুনানি ছিল। বর্তমান প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না ১৩ মে অবসর নিচ্ছেন। বিচারপতি বি আর গাভাই পরবর্তী প্রধান বিচারপতি হবেন। ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে যাবতীয় মামলার দীর্ঘ শুনানি প্রয়োজন বলে আজ প্রধান বিচারপতি খন্না জানিয়েছেন, আগামী ১৫ মে নতুন প্রধান বিচারপতি গাভাইয়ের বেঞ্চে ওয়াকফ মামলার শুনানি হবে। তিনিই অন্তর্বর্তী ও চূড়ান্ত রায় দেবেন।
এর আগে শীর্ষ আদালত ওয়াকফ সংশোধনী আইনের তিনটি বিষয়ে প্রশ্ন তুলে তাতে স্থগিতাদেশ জারি করার ইঙ্গিত দিয়েছিল। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট কিছু করার আগে মোদী সরকার নিজেই আইনের দু’টি বিতর্কিত ক্ষেত্রে আপাতত কোনও পদক্ষেপ করা হবে না বলে আদালতে আশ্বাস দেয়। কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা জানিয়েছিলেন, বহু দিন ধরে ব্যবহারের ফলে ওয়াকফ বলে চিহ্নিত সম্পত্তি সংক্রান্ত ধারা ও ওয়াকফ বোর্ড, পরিষদে অ-মুসলিমদের নিয়োগের ধারা আপাতত কার্যকর করা হবে না। কেন্দ্রীয় সরকার নিজেই এই দু’টি ধারা স্থগিত রাখছে।
সুপ্রিম কোর্টের আগামী শুনানি পর্যন্ত এই ব্যবস্থা বজায় থাকবে। কেন্দ্রীয় সরকার অবশ্য ইতিমধ্যেই ওয়াকফ সংশোধনী আইনের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়েছে। ইতিমধ্যে সুপ্রিম কোর্টে আরও কিছু মামলা দায়ের হয়েছে। তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মামলাও রয়েছে। আজ তৃণমূলের সাংসদ তথা আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমার জানা মতে, আর কোনও রাজ্য সরকার ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেনি। পশ্চিমবঙ্গ সরকার চলতি মাসের গোড়াতেই এই মামলা দায়ের করেছে। কারণ ওয়াকফ সংশোধনী আইন রাজ্যের ক্ষমতায় হস্তক্ষেপ করছে। ওয়াকফ মূলত জমি বা স্থাবর সম্পত্তি। সংবিধান অনুযায়ী, জমি, সম্পত্তির বিষয়ে আইন তৈরির ক্ষমতা রাজ্য সরকারের হাতে। সেখানে কেন্দ্র হস্তক্ষেপ করেছে। ওয়াকফ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হলে তার সাংবিধানিক ক্ষমতাও লঙ্ঘন করছে কেন্দ্রের ওয়াকফ সংশোধনী আইন। রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টের মামলায় নিজের বক্তব্য জানাতে পারবে।’’
তাৎপর্যপূর্ণ হল, সুপ্রিম কোর্টে কেরলের এক হিন্দু সংগঠনও ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। কেরলের শ্রী নারায়ণ মানব ধর্মম ট্রাস্টের যুক্তি, ওয়াকফ সংশোধনী আইনের ফলে দেশের মুসলিম সম্প্রদায়ের অস্তিত্বই বিপন্ন।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)