Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

আতঙ্ক ভুলিয়ে জঙ্গলমহলে ডাকছে রাজ্যই

এক সময়ের হাড় হিম করা পরিবেশ একেবারে উধাও! বাতাসে বারুদের গন্ধ পরের কথা, পাঁচ বছরের বেশি হয়ে গিয়েছে এ তল্লাটে কোনও মাইন বিস্ফোরণের শব্দও শোনা যায়নি!

স্বপন সরকার
শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:২৯
Share: Save:

এক সময়ের হাড় হিম করা পরিবেশ একেবারে উধাও! বাতাসে বারুদের গন্ধ পরের কথা, পাঁচ বছরের বেশি হয়ে গিয়েছে এ তল্লাটে কোনও মাইন বিস্ফোরণের শব্দও শোনা যায়নি! একদা গামছায় মুখ ঢেকে এলাকায় ত্রাসের পরিবেশ কায়েম করে রাখত যারা, তাদেরও কবে খেদিয়ে ছেড়েছে আধা সামরিক বাহিনী। অথচ জঙ্গলমহল নামটা শুনলেই নিরাপত্তার প্রশ্নে এখনও যেন আস্থায় ঘাটতি রয়েছে অনেকের। আগের তুলনায় পর্যটকের সংখ্যা বাড়লেও, সেই বৃদ্ধির হারও খুব বেশি নয়! জঙ্গলমহলের প্রতি জড়তা কাটাতে তাই জঙ্গলমহল ঘুরিয়ে দেখানোর উদ্যোগ নিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।

রাজ্য পর্যটন নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সি মুরুগান কর্মজীবনের শুরুতে ঝাড়গ্রামেরই মহকুমা শাসক ছিলেন। সে সময়ে জঙ্গলমহল কতটা বিপদসঙ্কুল ছিল, তা তাঁর ভালোমতোই জানা। রাজ্য সরকারের সেই আমলাই এখন বলছেন, ‘‘দীঘা, দার্জিলিং অনেক হল, এ বার চলুন জঙ্গলমহল!’’ কীভাবে? মুরুগান জানিয়েছেন, জঙ্গলমহল সফরকে দু’ভাগে ভাগ করে নিয়েছে সরকার। জঙ্গলমহলের মূল এলাকা ঝাড়গ্রামকে উত্তর এবং দক্ষিণের অংশে ভাগ করে পর্যটকদের সেখানে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে পর্যটন বিভাগ। পৃথক ভাবে উত্তর ও দক্ষিণে এক রাত, দু’দিনের প্যাকেজে জঙ্গলমহলের বিভিন্ন স্থান ঘুরিয়ে দেখানো হবে পর্যটকদের। মাথা পিছু খরচ পড়বে চার হাজার টাকা।

এই সফরে কী কী দেখানো হবে পর্যটকদের? ঝাড়গ্রামের কনকদুর্গা মন্দির থেকে জামবনির চিল্কিগড় রাজবাড়ি ঘুরে দেখার যেমন সুযোগ পাওয়া যাবে, তেমনি ঝাড়গ্রামের রাজবাড়ির সাবিত্রী মন্দির, ডিয়ার পার্কও দেখতে পারবেন। আবার নয়াগ্রামে নদীর ধারে রামেশ্বর মন্দির, চাপলাশোলের তপোবনে সীতাদেবীর মন্দির ও বাল্মীকি মুনির সমাধিস্থল, গাডরাসিনি পাহাড়, ঘাগরা জলপ্রপাত, তারাফেনি নদী, গোপীবল্লভপুরের হাতিবাড়িতে সুবর্ণরেখার নদী থেকে শুরু করে শালের জঙ্গল, ঝিল্লি পাখিরালয় সবই ঘুরিয়ে দেখানো হবে। সেই সঙ্গে দেখানো হবে তসর সিল্ক উৎপাদনের জন্য গুটি পোকার চাষ। থাকার ব্যবস্থা থাকবে ঝাড়গ্রামের পর্যটন বাংলোয়।

বস্তুত জঙ্গলমহলে শান্তি ফিরিয়ে উন্নয়নের কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে সফল, তা তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরাও স্বীকার করে নেন। এমনকী কেন্দ্রে ইউপিএ সরকার থেকে মমতা সমর্থন প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর যখন কংগ্রেস-তৃণমূল সংঘাত চলছে, তখনও বাংলায় এসে জঙ্গলমহলের উন্নতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন জয়রাম রমেশের মতো তৎকালীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা। নবান্ন সূত্রে বলা হচ্ছে, জঙ্গলমহলে শান্তি ফিরিয়েই শুধু থেমে থাকতে চান না মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানেন, ওই এলাকায় পর্যটনের বিকাশ ঘটাতে পারলে স্থানীয় মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নতি হবে।

তাই ঝাড়গ্রামকে কেন্দ্র করে পর্যটনের সুযোগ ও পরিকাঠামোর ওপর বরাবরই গুরুত্ব দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। নবান্নের এক কর্তার কথায়, এর পরেও মুখ্যমন্ত্রী হয়তো আন্দাজ করতে পারেন জঙ্গলমহলের নিরাপত্তা সম্পর্কে এখনও অনেকের মনে সংশয় রয়েছে। তাই তিনি নিজে যেমন ঘন ঘন ওই সব এলাকায় সফরে যান, তেমনই রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়কেও জঙ্গলমহল ঘুরে দেখতে অনুরোধ করেছেন তিনি। কারণ, তাতে ওই এলাকার নিরাপত্তা নিয়ে মানুষের আস্থা বাড়বে বলেই মনে করেন তৃণমূল নেত্রী। জঙ্গলমহল প্যাকেজ শুরু করার ভাবনা-র নেপথ্যেই সেই ভাবনাটাই রয়েছে। এবং তাতে এ বার আরও বেশি সাড়া মিলবে বলে আশা করছেন মুরুগান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jangalmahal West Bengal Tourism
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE