Advertisement
০১ মে ২০২৪
Duare Ration

‘দুয়ারে রেশন’ আপাতত বন্ধে স্বস্তি ভাঁড়ারে

২০২১-২২ আর্থিক বছরে নিখরচায় রেশন পরিষেবার জন্য ১৪০০ কোটি টাকা তুলে রাখার পাশাপাশি দুয়ারে রেশন কর্মসূচির জন্য ১২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল রাজ্য।

প্রতীকী ছবি।

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২২ ০৮:৫০
Share: Save:

‘দুয়ারে রেশন’ প্রকল্পের বিরুদ্ধে গিয়েছে কলকাতা হাই কোর্টের রায়। বলা হয়েছে, তা জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইনের পরিপন্থী। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার এ নিয়ে ‘উচ্চতর জায়গায়’ আবেদনের ইঙ্গিত দিলেও, রেশন ডিলারদের একাংশের দাবি, আদতে এতে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে প্রশাসন। এই মুহূর্তে কোষাগারের যা হাল, তাতে এই প্রকল্প আপাতত মুলতুবি থাকা প্রশাসনকে খানিকটা স্বস্তি দেবে বলে মানছেন প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের একাংশও। রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষকে এ বিষয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা হলে, তাঁকে অবশ্য ফোনে পাওয়া যায়নি। আসেনি পাঠানো মোবাইলবার্তার জবাবও।

২০২১-২২ আর্থিক বছরে নিখরচায় রেশন পরিষেবার জন্য ১৪০০ কোটি টাকা তুলে রাখার পাশাপাশি দুয়ারে রেশন কর্মসূচির জন্য ১২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল রাজ্য। কিন্তু রেশন ডিলারদের একটি বড় অংশ এই প্রকল্প পরিচালনায় সায় দেয়নি। বরং বাড়তি খরচের সূত্রে সরকারের কাছে অনেকগুলি দাবিদাওয়া জানিয়েছিল তারা। কার্যত মধ্যপন্থা নিয়ে ডিলারদের সুবিধা কিছুটা বাড়াতে হয়েছিল রাজ্যকে। যেমন, প্রতি কুইন্টালে ৭৫ টাকা অতিরিক্ত দেওয়া। প্রতি মাসে প্রায় ২১ হাজার রেশন ডিলারকে পাঁচ হাজার টাকা করে কমিশন দেওয়ার ঘোষণা। শুধু এতেই সরকারের মাসে খরচ হত প্রায় সাড়ে ১০ কোটি টাকা। অর্থাৎ, বছরে ১২৬ কোটি টাকা। তা ছাড়া, দুয়ারে রেশনের সামগ্রী বাড়ি-বাড়ি পৌঁছনোর জন্য গাড়ি কিনতে ডিলারদের ভর্তুকি বাবদ গাড়ির দামের ২০% (এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত) দেওয়ার কথা হয়েছিল। খরচ হত বিপুল।

এ কথা মনে করিয়েই অল ইন্ডিয়া ফেয়ার প্রাইস শপ ডিলার্স ফেডারেশনের জাতীয় সাধারণ সম্পাদক বিশ্বম্ভর বসুর বক্তব্য, “খরচটা নির্দিষ্ট নয় ঠিকই, তবে তা যথেষ্ট। দুয়ারে রেশন না করতে চেয়ে প্রকারান্তরে আমরা সরকারের উপকারই করছি।” যদিও সরকারের তরফে এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া মেলেনি।

প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদেরও একাংশ মেনে নিচ্ছেন, রাজ্যের কোষাগারের বর্তমান দুর্বল পরিস্থিতিতে এই খরচ বাঁচলে, তা আর পাঁচটি জরুরি কাজে লাগানোর সুযোগ পাবে সরকার। তাঁদের যুক্তি, সাধারণ মানুষের চাহিদার তালিকায় ঘরের দরজায় রেশন পৌঁছনো বিষয়টি সে ভাবে ছিল না। বরং তাঁরা সময়-সুবিধা মতো রেশন দোকানে গিয়ে দেখেশুনে খাদ্যদ্রব্য সংগ্রহ করতেই বেশি আগ্রহী।

এখন একটি পরিবার গড়ে প্রায় ৩৫ কিলোগ্রাম করে খাদ্যশস্য পেয়ে থাকে। অর্থাৎ, কোনও এলাকায় ১০০টি পরিবার থাকলে, সাড়ে তিন হাজার কেজি সামগ্রী বয়ে নিয়ে যেতে হত দুয়ারে রেশন কর্মসূচিতে। এতে আবার রেশনের পরিমাণ নিয়ে মানুষের অবিশ্বাস তৈরিরও জায়গা ছিল। এক কর্তার কথায়, “সরকার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতেই পারে। তবে বিকল্প পরিস্থিতিতে রেশন দোকানের সংখ্যা বাড়ালে, তা আরও সুবিধাজনক হবে। দুয়ারে রেশনে যে দিন রেশন দোকান বাড়িতে খাদ্যদ্রব্যের প্যাকেট পাঠাবে, সে দিন কোনও পরিবার জরুরি কাজে বাইরে থাকতেই পারেন। পরে তা সংগ্রহ করা বেশ ঝক্কির।” ডিলার সংগঠনের অনেকে জানাচ্ছেন, রেশন তোলার ই-পস যন্ত্রে দু’ভাবে রেশন তোলা যায়। প্রথমটি রেশন দোকান থেকে। দ্বিতীয়টি দুয়ারে রেশনের ‘অপশন’ দিয়ে। কোনও ডিলার দোকানে বসে দ্বিতীয় পদ্ধতি অবলম্বন করলে, খাতায় কলমে দুয়ারে রেশনের তথ্য প্রতিষ্ঠিত হবে। অথচ হয়তো বাস্তবে উপভোক্তা রেশন দোকান থেকেই তা সংগ্রহ করেছেন। বিশ্বম্ভরের কথায়, এখানেই অসাধু প্রবণতা তৈরির সুযোগ থেকে যায়।”

আর্থিক পর্যবেক্ষকদের দাবি, গত আর্থিক বছরের (২০২১-২২) তুলনায় চলতি অর্থবর্ষে (২০২২-২৩) খাদ্য দফতরের বাজেট বরাদ্দ কমেছে প্রায় ৩২৩৬ কোটি টাকা। এর নেপথ্যে আর্থিক কারণই অন্যতম। প্রায় দেড় কোটি ‘ভুয়ো’ রেশন কার্ড ‘নিষ্ক্রিয়’ করে দুই-আড়াই হাজার কোটি টাকা বাঁচানোর সুযোগ রয়েছে। এখন ডিজিটাল রেশন কার্ডের সঙ্গে আধার সংযোগ হয়ে গিয়েছে। বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে রেশন তোলার সুযোগ আছে। দুয়ারে রেশন চালু না হলে তাই অসন্তুষ্টির জায়গা কম বলেই ধারণা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Duare Ration West Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE