মসৃণ হাইওয়েতে চড়চড়িয়ে উঠছে স্পিডোমিটার। কিন্তু ফলটা সব সময়ে সুখের নয়।
দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের কথাই ধরা যাক। সম্প্রতি দু’টি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা দেখেছে এই সড়ক। একটিতে প্রয়াত হয়েছেন সঙ্গীতশিল্পী কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য। অন্যটিতে পিচের ট্যাঙ্কার চাপা পড়ে শেষ হয়ে যায় একটি গোটা পরিবার।
দোষ কার ছিল, বলবে তদন্ত। এ কথা ঠিক, অনেক সময়েই বেয়াড়া চালকের জন্যই দুর্ঘটনায় পড়েন সহযাত্রীরা। যথাযথ পথ শাসন না করার অভিযোগ ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধেও। কিন্তু সচেতন চালকের সংখ্যাও তো কম নয়। নিয়ম
মেনে গাড়ি চালিয়েই যাঁরা গন্তব্যে পৌঁছতে চান। অথচ তাঁদেরই বুক কাঁপে স্টিয়ারিংয়ে বসলে। এই হয়তো পাশ কাটিয়ে উল্কাগতিতে বেরিয়ে গেল কোনও গাড়ি। একটু ছুঁয়ে দিলেই রক্ষা নেই।
দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে পরপর ওই দু’টি দুর্ঘটনা প্রশ্ন তুলে দিয়েছিল গাড়ির গতির সীমা নিয়ে। কী ভাবে গতিতে লাগাম পরানো যায়, তা নিয়ে চর্চা চলেছে প্রশাসন থেকে শুরু করে নানা মহলে। মদ্যপ চালক ধরা, মালবাহী গাড়ির ওভারলোডিং রোখা, আরও বেশি সিসি ক্যামেরা বসানোর পাশাপাশি উঠে এসেছে আরও একটি উপায়ের কথা। তা হল, গতির নিরিখে হাইওয়ের লেন বেঁধে দেওয়া।
বিদেশে চালু রয়েছে এই বন্দোবস্ত। অর্থাৎ হাইওয়েতে নির্দিষ্ট গতির গাড়ি চলবে নির্ধারিত লেনে। তাতে অনেকটাই কমবে দুর্ঘটনার আশঙ্কা।
কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে তা কি সম্ভব?
এ রাজ্যে পথের পরিসর বিশেষ চওড়া নয়। গাড়ির সংখ্যা বেশি হওয়ায় যানজট নিত্যসঙ্গী। তবে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে বা মুম্বই রোড-সহ সমস্ত জাতীয় সড়কই এখন চার লেনের। ফলে এই বন্দোবস্ত চালু করা কঠিন নয় বলেই অনেকের মত। রাজ্য পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘ধরা যাক, কলকাতা থেকে
পালসিট পর্যন্ত এ রকম একটা বন্দোবস্ত করা গেল যে, বাঁ দিকের লেনে শুধুমাত্র ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৬০ কিলোমিটার গতিবেগের গাড়িই চলবে। আর ডান দিকে ঘণ্টায় ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার গতিবেগের। তবে কঠোর আইন করে ওভারটেক নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। না হলে হিতে-বিপরীত হবে।’’
জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ অবশ্য এই গতির বাঁধন নিয়ে নিমরাজি। এক কর্তা বলেছেন, ‘‘মানুষ টোল খরচ করেন গতির জন্য। জাতীয় সড়কে স্পিডব্রেকার রাখা হয় না। এই রাস্তায় নির্ধারিত গতিই (ডিজাইন স্পিড) হল, ঘণ্টায় ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার। পরিসংখ্যান বলছে, এক্সপ্রেসওয়েতে প্রতিদিন একটাই দুর্ঘটনা ঘটে। অথচ রোজ গাড়ি চলে ১১ হাজার।’’
কিন্তু অনেকে তো জোরে নয়, সময় হাতে নিয়ে বিনা ঝুঁকিতে যেতে চান। তাঁরা কী করবেন?
এ বার সতর্ক ওই কর্তা বলেন, ‘‘মানুষের জন্যই রাস্তা। তাঁরা চাইলে নতুন ভাবে ভাবা যেতেই পারে। কিন্তু তা বাস্তবায়িত করতে হলে রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় স্তরে সমন্বয় জরুরি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy